1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাত পুড়ে গেলে যা করবেন না

১৯ নভেম্বর ২০১৯

রান্নাঘরে বা বাসার অন্য কোথাও হাত পোড়ানো, ছেঁকা খাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে৷ ক্ষত সারাতে ঘরোয়া পথ্য ব্যবহার করে বা প্রচলিত বিশ্বাসের বশে ভুল করে বসলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/3THWm
প্রতীকী ছবিছবি: Imago

ফুটন্ত পানিভরা পাত্রটি পিছলে যাওয়ায় হাতের কনুইতে ফোসকা পড়ে গেছে? অথবা চট করে ওভেনে কেকের অবস্থা দেখতে গিয়ে হাতে ছেঁকা লেগে গেছে৷ এবার তাহলে কী হবে? এমারজেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রোফেসর স্টেফান অপারমান মনে করেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে কলের পানি সবচেয়ে সহজে কাজে লাগানো যায়৷ তার তাপমাত্রা হয় ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো৷ ক্ষত এর থেকে বেশি শীতল করলে শরীরের টিস্যুর ক্ষতের আরো অবনতি হতে পারে৷’’

ক্ষত শীতল করার পর কী করা উচিত? কোনো ক্রিম বা জেল লাগানো কি উচিত? নাকি হাতের কাছে আলোভেরা গাছের রস লাগানো ভালো? ফোসকা এড়াতে দইও নাকি কার্যকর হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞের মত অবশ্য কিছুটা আলাদা৷ প্রোফেসর অপারমান বলেন, ‘‘যে ক্ষত সবে সৃষ্টি হয়েছে, দয়া করে তার উপর কোনো ক্রিম লাগাবেন না৷ খুব খারাপ হলে ক্ষতে ইনফেকশনও হতে পারে৷ আগে থেকে বোঝা কঠিন৷’’

টুথপেস্ট, মাখন, তেল, ময়দা অথবা মধুর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটে৷ এসবের কোনোটা কাজে তো লাগেই না, উলটে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে৷

আলোভেরা গাছের রস ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে এবং নিরাময় প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে পারে৷ ক্ষত বন্ধ থাকলে সেই গাছ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা যায়৷ তবে খাঁটি আলোভেরার রসই কার্যকর হতে পারে৷ তাই ফার্মাসিস্ট হিসেবে বির্গিট স্টাইনকে টিউবে ভরা আলোভেরা প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন৷ কিন্তু বিস্ময়ের প্রত্যাশা না করাই ভালো৷

তার পরেও ফোসকা পড়লে ধারালো কিছু দিয়ে কি সেটি ফাটিয়ে দেওয়া উচিত? প্রোফেসর স্টেফান অপারমান বলেন, ‘‘আগুনের ফলে ছোট ফোসকা হলে নিজেই সেটি খোলার চেষ্টা করা যেতে পারে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, পুরোপুরি উন্মুক্ত না হলে ক্ষতের নীচে, ত্বকের নীচে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে৷ তখন ইনফেকশন দেখা দিতে পারে৷’’

সে কারণেই ফোসকা না ফাটিয়ে একমাত্র জীবাণুহীন পরিবেশে সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা উচিত৷ নিজে না পারলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে সেই কাজ করানোই ভালো৷ হামবুর্গের বার্ন সেন্টারের ড. ফ্রাংক বিসগোয়া বলেন, ‘‘ফোসকার মধ্যে যে ক্ষরণ হয় এবং প্রথম দুই-এক দিনে বার বার বেরিয়ে আসে, সেই কারণে ফোসকা ফাটিয়ে দিয়ে কোনো লাভ হয় না৷ বরং ক্ষত সাইটোটক্সিক হয়ে উঠে, ক্ষতের নীচে কোষ মেরে ফেলে এবং দ্রুত আরোগ্য প্রতিরোধ করে৷ তাছাড়া আংশিকভাবে ফাটানো বা সরানো ফোসকায় ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷’’

ক্ষতের মুখ খুলে গেলে অবশ্যই তার উপর প্লাস্টার লাগানো উচিত৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, কী ধরনের প্লাস্টার এমন ক্ষতের জন্য উপযুক্ত? সিলভারস্টিমড, নাকি স্বচ্ছ এবং পুড়ে যাওয়া ক্ষতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্লাস্টারই ভালো? প্লাস্টার ক্ষতের উপর আটকে গেলে চলবে না এবং সেটিকে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে হবে৷ তবে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রোফেসর অপারমান দুটিকেই উপযুক্ত মনে করেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আলাদা করে পোড়া ক্ষতের জন্য উপযুক্ত প্লাস্টারের প্রয়োজন নেই৷ এর সুবিধা হলো, কয়েক দিন ধরে ক্ষতের উপর নজর রাখা যায়৷ কিন্তু সমস্যা হলো, স্বচ্ছ আবরণের নীচে আর্দ্র একটা স্তর সৃষ্টি হয়৷ সেখানে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে৷ সে কারণে আমি সাধারণ, জীবাণুহীন প্লাস্টার ব্যবহার ও নিয়মিত সেটি বদলানোর পরামর্শ দেই৷’’

তবে কিছু ধরনের পোড়া বা ছেঁকার ক্ষেত্রে প্লাস্টারে কোনো কাজ হয় না৷ তখন দ্রুত ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে৷ ড. বিসগোয়া মনে করেন, ‘‘যত খারাপভাবে পুড়ে যায়, ব্যথা তত কম হয়৷ কারণ ক্ষতের আশেপাশের স্নায়ুও ধ্বংস হয়ে যায়৷ তখন সেই অবস্থাকে অবহেলা না করে অবশ্যই ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে৷’’

মোটকথা ক্ষত লাল হয়ে গেলে ও ব্যথা হলে কলের শীতল পানির ধারার নীচে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা উচিত৷ পুড়ে গেলে বা ছেঁকা লাগলে ফোসকা না ফাটানোই ভালো৷ ক্ষতের উপর ঘরোয়া পথ্য দিলে চলবে না৷ প্রকৃতি ক্ষত ঠান্ডা করতে পারে বটে, তবে জাদুবলে সেটি সারিয়ে তুলতে পারে না৷

মাডলেন সেলার/এসবি