1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিৎসা ডেলিভারি করতেন আবদো

৮ জানুয়ারি ২০১৭

কোনোদিন হলিউডে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখেননি৷ নিজ দেশে অভিনয় করেই ছিলেন খুশি৷ কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে পিৎসা পৌঁছে দেয়ার কাজ করতে হয়েছিল সিরিয়ার জনপ্রিয় অভিনেতা জিহাদ আবদোকে৷ তিনি এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে জয় আবদো নামে পরিচিত৷

https://p.dw.com/p/2VLeq
সিরীয় অভিনেতা জিহাদ আবদো
ছবি: Getty Images/AFP/V. Macon

জিহাদ আবদো আরব বিশ্বের চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয় অভিনেতা তিনি৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে আর পরে তাঁর জীবনে ঘটে যায় ব্যাপক পরিবর্তন৷ এই গৃহযুদ্ধ তাঁকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা থেকে একেবারে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল৷ আর এখন অন্য আর দশটা শরণার্থীর মতোই জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাঁকে৷ একটা সময় তো লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় রাস্তায় কাজের খোঁজে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে আবদোকে৷

মাত্র কয়েক বছর আগে ৫৪ বছর বয়সি এই অভিনেতা যখন মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশের রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন ভক্তদের ভিড় জমে যেত৷ রাস্তায় হাঁটা তাঁর জন্য ছিল মুশকিল৷ ৪৩টি চলচ্চিত্র এবং এক হাজারের বেশি টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি৷ কেবল তাঁর অভিনয়ের জন্য নয়, মনের কথা খোলাখুলি বলার জন্যও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি৷ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আবদো বলেন, ‘‘আমার একটা সুন্দর জীবন ছিল, মানুষ আমাকে ভালোবাসতো৷ কেবল অভিনয়ের জন্য নয়, টকশোর জন্যও৷ এ সব শোয়ে আমি মধ্যপ্রাচ্যের সমাজ সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতাম৷''

সিরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘বাব আল হারা'-য় অভিনয়ের জন্য আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান জিহাদ আবদো৷ এই ধারাবাহিকের দর্শক সংখ্যা ছিল ৫ কোটি৷ মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্তের আগুন লাগলে তার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়ায়৷ আবদোর স্ত্রী চিত্রশিল্পী এবং মানবাধিকার আইনজীবী ফাদিয়া আফাশি সিরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন৷ আসাদ বিরোধীদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের সময় আটক করা হয় তাঁকে৷ পরে তিনি পালিয়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে৷ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক পলিসিতে পড়ালেখা শেষে আর সিরিয়ায় ফেরেননি ফাদিয়া৷ অন্যদিকে, একই সময় বিভিন্ন টকশোতে আসাদবিরোধী কথা বলায় আসাদের রোষানলে পড়েন আবদো৷ বৈরুতে এক সফরে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি৷ সিরিয়ায় ফেরার পর অজ্ঞাত কিছু মানুষ তাকে হুমকি দিতে থাকে৷ তাঁর গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়৷ ঐ সাক্ষাৎকারের জন্য টিভিতে আসাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয় তাঁকে৷

এটা এমন এক সময় যখন তাঁর কিছু বন্ধু-বান্ধব আসাদবিরোধী বক্তব্য রাখায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বা কাউকে গুম করা হয়েছে৷ ২০১১ সালের অক্টোবরে নিজের সব সম্পদ-সম্পত্তি ছেড়ে মেনোপোলিসে তাঁর স্ত্রীর কাছে চলে আসেন৷ স্বামী-স্ত্রী লস অ্যাঞ্জেলেসে আশ্রয়ের আবেদন জানান৷ কাজ খুঁজতে শুরু করেন তিনি৷ কিন্তু প্রথমেই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর নাম, জিহাদ নাম পরিবর্তন করে জয় নাম রাখেন তিনি৷ জিহাদ বলেন, ‘‘অনেকেই জানে না যে জিহাদ একটি খ্রিষ্টান নাম৷''

কিন্তু নাম পরিবর্তনের পরও একশ'রও বেশি অডিশন দিয়ে ব্যর্থ হন তিনি৷ বাধ্য হয়ে পিৎসা পৌঁছে দেয়ার কাজ নেন তিনি, সপ্তাহে ৩০০ মার্কিন ডলার আয় করতেন এই কাজ করে৷ তাই দিয়ে সংসার চালাতেন৷ অবশ্য তাঁর এত পরিশ্রম বৃথা যায়নি৷ অবশেষে সুযোগ পেয়েছেন হলিউডে অভিনয়ের৷ তাও আবার নিকোল কিডম্যান এবং জেমস ফ্রাঙ্কোর মুভি ‘কুইন অফ দ্য ডেজার্ট'-এ৷ এ বছরই মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রটি৷

আবদো জানান, তাঁর সব অভিনয়ই নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে৷ নিকোল তাঁকে অনেক সহায়তা করেছেন বলেও জানান আবদো৷ পরিচালক ওয়ের্নার হেরজোগ জানতেনই না জিহাদ এতটা জনপ্রিয়৷ কিন্তু মরক্কোতে শ্যুটিং করার সময় তিনি জিহাদের জনপ্রিয়তা টের পান৷ কেবল চলচ্চিত্র নয়, অ্যামাজনের টিভি সিরিজ ‘দ্য প্যাট্রিয়ট' এবং ‘বন ভয়েজ'-এ সুযোগ পান তিনি৷ গত বছর তাকে টম হ্যাঙ্কস-এর সঙ্গে ‘ আ হলোগ্রাম ফর দ্য কিং'-এও অভিনয় করেন তিনি৷

তবে প্রায়ই হতাশা আব্দোকে ঘিরে ফেলে৷ সিরিয়ার যে অবস্থা তাতে কবে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন জানেন না৷ তবে এটা জানেন, তাঁর কোনোকালেই হলিউডে অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল না৷ ‘‘কিন্তু ভাগ্য যখন আমায় এখানে নিয়ে এসেছে, তখন নিশ্চয়ই এর কোনো কারণ আছে'', বলেন আবদো৷

এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)

বন্ধুরা, কেমন লাগলো জিহাদ আবদোর জীবন কাহিনি? জানান আমাদের, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য