1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বৈরশাসকের ‘বিরুদ্ধে' আবার সফল রিচার্ডসন

১৬ নভেম্বর ২০২১

মাত্র চার দিন আগে তাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের আদালত৷ সেই মার্কিন সাংবাদিক ড্যানি ফেনস্টার এখন মুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে৷ প্রায় অসম্ভবকে আবার সম্ভব করেছেন সেই বিল রিচার্ডসন!

https://p.dw.com/p/434LW
Bill Richardson und Danny Fenster
ছবি: RICHARDSON CENTER via REUTERS

উত্তর কোরিয়া, ইরাক, ইরান, মিয়ানমার- যেখানেই আটক মার্কিন নাগরিক, সেখানেই ছুটে যান বিল রিচার্ডসন৷ এ কারণে গত ২৭ বছরে অনেকবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন কূটনীতিক থেকে ‘ফ্রিল্যান্স-ফিক্সার' হয়ে যাওয়া এই মার্কিন নাগরিক৷ তার সর্বশেষ সাফল্য  ‘ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার' নামের অনলাইন ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ড্যানি ফেনস্টারকে মিয়ানমার থেকে মুক্ত করা৷ সরকারবিরোধী আন্দোলনে উসকানি দেয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগে গত সপ্তাহেই ৩৭ বছর বয়সি ফেনস্টারকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয় মিয়ানমারের আদালত৷ তাকে মুক্ত করার আশা দৃশ্যত ছেড়েই দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷ তবে আশা ছাড়েনি ফেনস্টারের পরিবার৷ প্রিয়জনকে মুক্ত করতে তারাও ভরসা রেখেছিলেন বিল রিচার্ডসনের ওপর৷ বলা বাহুল্য, ভরসার ষোল আলা মর্যাদা রেখেছেন নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর৷

বিল রিচার্ডসনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার

১৯৯৪ সালে বিল রিচার্ডসন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য৷ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন তখন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন৷ চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন রিচার্ডসন৷ কিন্তু পিয়ংইয়ং-এ পৌঁছানোর আগেই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা৷

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক হেলিকপ্টার উত্তর কোরিয়ার আকাশসীমায় ঢুকে পড়ায় গুলি চালায় উত্তর কোরীয় সেনাবাহিনী৷ গুলিতে বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টার৷ নিহত হন এক পাইলট৷ অন্যজনকে আটক করে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী৷ ফলে বাধ্য হয়ে কয়েক সপ্তাহ পিয়ংইয়ংয়ে থাকতে হয় রিচার্ডসনকে৷

Bill Richardson
বিল রিচার্ডসনছবি: picture-alliance/AP Photo/Thet Htoo

পিয়ংইয়ং থেকে ফেরার পরই ইরাকে যেতে হয় তাকে৷ কুয়েত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিক৷ তাদের আটক করে ইরাকের সীমান্তরক্ষী বাহিনী৷ দুই সহনাগরিককে ছাড়ানোর জন্যও ডাক পড়েছিল রিচার্ডসনের৷ ব্যর্থ হননি৷ ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে আটকে পড়া দুজনকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন রিচার্ডসন৷

কেমন করে স্বৈরাচারী শাসকদেরও প্রাভাবিত করে সফল হয়ে ফেরেন? ২০১৮ সালে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন সাবেক কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন ৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, যে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় তার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে পারস্পরিক সম্মান নিশ্চিত করা৷ তার মতে, ‘‘সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইলে তাদেরও (প্রতিপক্ষ) সম্মান দিতে হবে আপনাকে৷... তাছাড়া অন্যপক্ষ যাতে মুখরক্ষার একটা সুযোগ পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, এমন একটা পথ বের করতে হবে যাতে তারাও কিছুটা কৃতিত্ব বা আলোচনা থেকে কিছু একটা যেন পায়৷''

বিল ক্লিন্টনের সময়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত করা হয় রিচার্ডসনকে৷ ক্লিন্টনের বিদায়ের পর আবার ফেরেন রাজনীতিতে৷ ২০০২ সালে নিউ মেক্সিকোর গভর্নর নির্বাচিত হন রিচার্ডসন৷ তারপর ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীও হতে চেয়েছিলেন৷ তবে সে আশা পূরণ হয়নি৷

তাই বলে হতোদ্যম হয়ে অবসরে চলে যাননি বিল রিচার্ডসন৷ বরং বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর গ্লোবাল এনগেজমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠান৷ প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আটক বা নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা৷ মার্কিন সরকারের সহায়তায় সেই ব্যক্তিদের পরিবারের অনুরোধেই কাজ করেন তারা৷

US-Journalist Danny Fenster
ড্যানি ফেনস্টারছবি: via REUTERS

২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের হয়েই গুগলের সিইও এরিক শ্মিড্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন রিচার্ডসন৷ লক্ষ্য ছিল কোরিয়ান-অ্যামেরিকান মিশনারি কেনেথ বে-কে মুক্ত করা৷ ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ারকে ছাড়াতেও উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন তার পরিবারের অনুরোধে, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনগেজমেন্টের হয়ে৷ খুব কাহিল অবস্থায় ওয়ার্মবিয়ারকে দেশে ফিরিয়েছিলেন ঠিকই, তবে ফেরার পর বেশিদিন বাঁচেননি তরুণ শিক্ষার্থী৷

এছাড়া ২০১৯ ও ২০২০ সালে দুবার ইরানেও গিয়েছেন বিল রিচার্ডসন৷ প্রথমবার গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ছাত্র শিয়ে ওয়াংকে মুক্ত করতে৷ পরেরবার লক্ষ্য ছিল ইরানে আটক নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল হোয়াইটকে ছাড়িয়ে আনা৷ ইরান সরকারকে রাজি করিয়ে দুবারই যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিককে ফিরিয়ে এনেছিলেন বিল রিচার্ডসন৷

মিয়ানমারে রিচার্ডসনের অতীত ও বর্তমান

সোমবার ছিল বিল রিচার্ডসনের ৭৪তম জন্মদিন৷ এমন দিনেই সাংবাদিক ফেনস্টারকে মুক্তি দেয়ার খবর প্রচার করে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী পরিচালিত টিভি চ্যানেলে৷ সেখান বলা হয় ‘মানবিক কারণে' মুক্তি দেয়া হয়েছে ফেনস্টারকে৷ কয়েকদিন আগেই মিয়ানমারের আদালত যাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, তাকে মুক্ত করে টুইটারে ফেনস্টারের সঙ্গে নিজের ছবিও পোস্ট করেছেন রিচার্ডসন৷

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে এর আগেও একাধিকবার আলোচনায় বসেছেন তিনি৷ ১৯৯০-এর দশকে গিয়েছিলেন তখনকার গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সুচিকে মুক্ত করতে৷ ২৮ বছর পর আবার যেতে হয়েছিল মিয়ানমারে৷ তখন নোবেলজয়ী সুচি ক্ষমতায়৷ তাই তার সঙ্গেই বসেছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে কারামুক্ত করার বিষয়ে কথা বলতে৷ আবার পালাবদল হয়েছে মিয়ানমারে৷ সুচি আবার কারাগারে৷ আবার ক্ষমতায় সেনাবাহিনী৷ আবার আলোচনায় বসলেন রিচার্ডসন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ফেনস্টারকে মুক্ত করতে৷ আবার সফল হয়েই ফিরলেন তিনি৷

এসিবি/ কেএম (রয়টার্স)