1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজআফ্রিকা

স্বাস্থ্যকর চকোলেট তৈরি করছেন এক নারী

১৯ আগস্ট ২০২০

চকোলেট মানেই ছোট-বড় সবার প্রিয় মিষ্টি, লোভনীয় এক হাতছানি৷ কিন্তু তার মূল উপাদান হিসেবে কোকো কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী৷ পানামার এক নারী চকোলেটকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3hAbZ
ছবি: DW/A.M. Goretzki

পানামার জঙ্গলের মাঝে মেইভিস অর্টিসের চকোলেট কারখানা৷ পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এবং ন্যায্য মজুরির ভিত্তিতে সেখানে কোকো চাষ করা হয়৷ মেইভিস বলেন, ‘‘আমরা দেখাতে চাই, যে চকোলেট কোনো মিষ্টি নয়৷ বরং কোকো গাছ সুস্বাস্থ্য ও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসে৷’’

চিরায়ত পদ্ধতিতে কোকো চাষ

অর্টিস কাছেই সোলেদাদ দে রিস্কো নামের গ্রাম থেকে কাঁচামাল হিসেবে কোকো সংগ্রহ করেন৷ সেখানকার মানুষ আদিকালের এক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন৷ পূর্বপুরুষদের দেখানো পথে চলে তাঁরা আজও বিশেষ পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদ্ধতিতে কোকো চাষ করেন৷ গাছ কাটা, কীটনাশকের ব্যবহার বা প্লান্টেশন তৈরির কোনো চেষ্টাই তাঁরা করেন না৷ জঙ্গলের মাঝেই কোকো বেড়ে ওঠে৷ কোকো চাষি হিসেবে ডিয়ানা বুই বলেন, ‘‘বাড়িঘর তৈরির কাঠের জন্য আমাদের গাছপালা রয়েছে৷ অন্যান্য গাছ থেকে আমরা খাদ্য পাই৷ বিক্রির জন্য কোকো তো রয়েছেই৷ এমন বৈচিত্র্যের জন্য এটা আসলে এক কৃষি-অরণ্য প্রণালী হয়ে উঠেছে৷ প্লান্টেশন গড়ে তুলে আলাদা করে শুধু কোকো চাষ হচ্ছে না৷ এটাই আমাদের ঐতিহ্য৷’’
এমন প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি কোকো বিশেষজ্ঞ হিসেবে মেইভিস অর্টিসের মনে ধরেছিল৷ পাঁচ বছর আগে খুব কাছেই তিনি চকোলেট কারখানা গড়ে তোলেন৷ তিনি শুধু সবচেয়ে সেরা মানের অরগ্যানিক কোকো ব্যবহার করতে চান বলেই সোলেদাদ দে রিস্কো-র কোকো চাষিদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন৷ জঙ্গলের মধ্যে ঐতিহ্যগত চাষ করে যে কোকো পাওয়া যায়, একমাত্র সেটির মানই অর্টিসের কঠিন চাহিদা পূরণ করতে পারে৷ চকোলেট প্রস্তুতকারক হিসেবে মেইভিস অর্টিস এই কৃষি পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘ঝরে পড়া পাতাই মাটি সংরক্ষণ করে৷ কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না বলে সেটি মানুষের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর৷ কোকো গাছের উপর খুব বেশি বা খুব কম ছায়া না পড়ায় ভালো ফলন হয় এবং অরগ্যানিক পদ্ধতিও সার্থক হয়৷’’

কোকো গাছের মাঝে বিরল গাছপালা এবং পানামার সবচেয়ে বড় আদিবাসী গোষ্ঠীর ঔষধি ও উপাসনার জন্য প্রয়োজনীয় লতাগুল্মও গজিয়ে ওঠে৷ তবে বড় আকারে কোকো উৎপাদন বেড়ে চলার ফলে পুরানো কৃষিপদ্ধতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে৷ অরণ্যে কৃষিকাজ নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুবাদে মেইভিস অর্টিস সেই প্রবণতা কিছুটা হলেও কমাতে চান৷ সে কারণে তিনি কোকো চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন৷ এভাবে তিনি চাষের কাজে আরও উন্নতি এনে কোকো বিনসের মান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

নারীদের উন্নয়নের হাতিয়ার

মাইভিস অর্টিস নিজের কোম্পানির মাধ্যমে আদিবাসি নারী চাষিদের সাহায্য করতে চান৷ নিজস্ব আয়ের পথ খুলে দিয়ে স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরতা কমাতে চান৷ সে কারণে তিনি কোকোর আঞ্চলিক দরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি দামে তাদের কাছ থেকে কোকো কেনেন৷ মেইভিস মনে করেন, ‘‘নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অদৃশ্য থাকেন৷ তাঁদের কণ্ঠ শোনা যায় না৷ কঠিন পরিশ্রম সত্ত্বেও তাঁরা অভিযোগ করেন না৷ আমি চাই, কোকো চাষ ও চকোলেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাঁদের উদ্যোগের আরও কদর হোক৷’’
নারীরাও এমন উদ্যোগের ফলে খুশি৷ যেমন কোকো চাষি হিসেবে ডিয়ানা বুই বলেন, ‘‘নারীদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়া আমাদের জন্য জরুরি৷ এতে আমাদেরই লাভ৷ কারণ আমরা সন্তানদের দেখাশোনা করি, তাদের খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করি৷ পাশাপাশি নিজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারি৷’’

উচ্চ মানের চকোলেট

অর্টিস কাছেই কাঁচা কোকো প্রক্রিয়াজাত করেন৷ প্রথমে কয়েক দিন ধরে গাঁজানোর পর সেগুলি শুকাতে হয়৷ এমনই একটি নমুনা পরীক্ষা করে মেইভিস অর্টিস বলেন, ‘‘এবার কোকো বিনের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে৷ এই প্রক্রিয়ায় চকোলেটের স্বাদ শুরু হয়৷ সাধারণত আমি শুকানোর পর কোকো বিন চেখে দেখি৷ কারণ তখন বোঝা যায়, ফসল ও গাঁজানোর পদ্ধতি ভালো ছিল কিনা৷’’

এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ‘মায়ামেই কাকাও’ নামের চকোলেট কোম্পানি আঞ্চলিক পর্যায়ে উচ্চ মানের চকোলেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করতে চায়৷ অর্টিস অনলাইন পদ্ধতিতে এবং পানামার বিভিন্ন বাণিজ্যমেলা, অনুষ্ঠান ও দোকানে সেই চকোলেট বিক্রি করেন৷ চকোলেট তাঁর কাছে মিষ্টি নয়, বরং স্বাস্থ্যকর উপাদান ভরা এক খাদ্য৷ নিজের মূলমন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘কোকোর শুঁটির মধ্যেই পুষ্টি রয়েছে৷ কোকোর বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে চাইলে যত কম সম্ভব চিনির সঙ্গে সেটি খেতে হবে৷ এটাই আমার বার্তা৷ মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে আরও বেশি মানুষের সেই উপলব্ধি হচ্ছে৷’’

‘মায়ামেই কাকাও’ ছাড়া অন্য অনেক কোম্পানিও প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি ও যতটা কম সম্ভব চিনি ব্যবহার করছে৷ গত পাঁচ বছরে পানামার অনেক ছোট কোম্পানি উচ্চ মানের স্বাস্থ্যকর চকোলেট উৎপাদনের ব্রত নিয়েছে৷

আনা গোরেৎস্কি/এসবি

হাতের ছোঁয়ায় বাহারি চকলেট

স্বাস্থ্যকর চকোলেট বানান তিনি