1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাধীনতা পরবর্তী লুটপাটের ঘটনায় শোকাহত মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া

২৪ আগস্ট ২০১১

মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রেক্ষাপট তৈরির দীর্ঘ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন রোকেয়া সুলতানা৷ স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে বিভিন্ন মহলের লুটপাট ও অরাজকতার ঘটনায় প্রচণ্ড ব্যথিত হন তিনি৷ যদিও এরপরও, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচলিত হননি রোকেয়া৷

https://p.dw.com/p/12MjB
Bangladeshis participate in a candle light vigil at the Liberation War Museum to mark the killing of thousands of unarmed Bengalis by the then West Pakistani forces on this night in 1971, in Dhaka, Bangladesh, Wednesday, March 25, 2009. March 25 was also the night that the country's independence leader Sheikh Mujibur Rahman proclaimed the independence of East Pakistan, taking the name Bangladesh. (AP Photo/Pavel Rahman)
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শান্তি কামনায় বিশেষ আয়োজনছবি: AP

কুমিল্লায় সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম রোকেয়া সুলতানার৷ বাবা ড. আরিফুর রহমান৷ মা ফরিদা বানু৷ পরিবারে কিংবা বংশে রাজনীতির তেমন কোন ছোঁয়া না থাকলেও স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন রোকেয়া৷ ১৯৬৩ সাল থেকেই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করতে থাকেন তিনি৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷  

১৯৭১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ সম্মান শ্রেণীতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন রোকেয়া৷ কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি৷ মুক্তিযুদ্ধ যে শুরু হতে যাচ্ছে তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন সেসময়ের ছাত্রনেতারা৷ তাই বেশ কয়েকমাস ধরে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন করছিলেন তাঁরা৷ রোকেয়া সুলতানাও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন৷ অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯ মার্চেই বঙ্গবন্ধুর স্লোগান দিয়ে কুমিল্লার পথে মিছিল বের করেন রোকেয়া এবং তাঁর সহকর্মীরা৷ মিছিল নিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে এগুনোর সময় পাক সেনাদের বাধার মুখে পড়েন৷ তাদের কাছে থেকে মাইক কেড়ে নেয় সেনা সদস্যরা৷ তবে কৌশলে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যান তাঁরা৷

কুমিল্লায় অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল তাঁর৷ পশ্চিম পাকিস্তানের কাছ থেকে পুরোপুরি স্বাধীনতা নাকি স্বায়ত্বশাসনের দাবি তুলবে পূর্ব পাকিস্তান, সেই নীতিগত বিতর্কের ক্ষেত্রেও উচ্চ কণ্ঠ ছিল রোকেয়ার৷ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের সময় সেখানে হাজির ছিলেন তিনি৷ বঙ্গবন্ধুর খুব কাছে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে রোকেয়ার৷ তাঁর মতে, বঙ্গবন্ধু নিজেও পুরোপুরি স্বাধীনতার দাবি তোলার ব্যাপারে মত দিতে চাননি৷ কারণ সরাসরিস্বাধীনতার ডাক দিলে নিজ জাতির লোকদের বহু রক্ত ঝরবে তা তিনি ঠিক অনুধাবন করেছিলেন৷ তাই এতো রক্ত যেন না ঝরে সেজন্য যুদ্ধ এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির শিকার হয়েই দেশমাতৃকার স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷

http://en.wikipedia.org/wiki/File:BDP.jpg A Selection of Pamphlets on Bangladesh's Independence Movement. In the fast breaking events of 1971-1972, in which a movement for independence exploded in what was then West Pakistan, the Pakistan authorities attempted to suppress the movement by military force. When India moved in to settle the issue, the Library's New Delhi Field Office was able to get pamphlets from all parties putting forward their positions. As is true for collections of pamphlets on many other subjects that would not each merit individual cataloging, these items have been preserved and cataloged as a collection so that future scholars may study the events and propaganda battle. (Southern Asian Pamphlet Collection, Asian Division)
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে এতোটুকু বিচলিত হননি রোকেয়াছবি: Public domain

২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক সেনাদের নির্মম নির্যাতন শুরু হলে পাশের বাড়ির দোতলায় গিয়ে সেখান থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন রোকেয়া৷ যুদ্ধ শুরুর সময়ের ঘটনা সম্পর্কে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেদিন রাতে তো আর আমি বের হতে পারলাম না৷ পরের দিন শুনছি মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে৷ কেউ যেন বাড়ি থেকে বের না হয় সেজন্য অনুরোধ করা হচ্ছে৷ বাইরে দেখা মাত্রই গুলি করা হবে৷ এর কিছুক্ষণ পর আমার ভাই কান্দির পাড় থেকে দৌড়ে এসে বলল বাজারের কাছে একটা ছেলেকে গুলি করা হয়েছে৷ আমরা দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে আসলাম৷ কিন্তু এর মধ্যেই ছেলেটা আমাদের সামনেই মারা গেল৷ গুলিটা করেছিল বোর্ড অফিসের সামনে থেকে৷ ছেলেটা আসলে কিছু জানতো না৷ হয়তো কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিল৷''

যুদ্ধের ভয়াবহতায় সবাই যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান কিন্তু রোকেয়া যুদ্ধের কাজের জন্য বাড়িতেই থেকে যান এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষা করতে থাকেন৷ যুদ্ধে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ১৪ মে তৎকালীন ছাত্র নেতা এবং সামনের সারির এক মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন রোকেয়া৷ এরপর ২ নম্বর সেক্টরে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে  মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ শুরু করেন৷ মেলাঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেন তিনি৷ উদয়পুরে অবস্থান করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ, খাবার, পোশাক সরবরাহসহ নানাভাবে সহায়তা করেন৷

তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুমিল্লা ফিরে যে লুটপাটের ঘটনা দেখেছেন তিনি, তাতে প্রচণ্ড শোকাহত এবং প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন৷ ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সামনের সারির কর্মী হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করলেও স্বাধীনতার পর তিনি ঘুরে দাঁড়ান৷ রাজনীতির মাঠ থেকে সরে শিক্ষা জগতে প্রবেশ করেন৷ অবশ্য আদর্শগত দিক থেকে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ থেকে এতোটুকু বিচলিত হননি তিনি৷ দীর্ঘ ২৬ বছর বাংলার অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেন৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান