1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্পিন-ঘূর্ণির পর রাহুল-কোহলিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারালো ভারত

৮ অক্টোবর ২০২৩

প্রথমে টসে হেরে বল করতে নেমে স্পিন-বিষে অস্ট্রেলিয়াকে নীল করেছে ভারত৷ ২০০ রান তাড়া করে শুরুতে বিপদে পড়লেও বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুলের জুটিতে শেষ পর্যন্ত ছয় উইকেটের সহজ জয়েই স্বাগতিক ভারত শুরু করেছে বিশ্বকাপ মিশন।

https://p.dw.com/p/4XGKp
কোহলি ও রাহুল রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে
কোহলি ফিফটি করেছেন ৭৫ বলে, রাহুলের লেগেছে ৭২ বলছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS

অথচ গল্পটা হতে পারত অন্যরকম৷ সেটা হলে কোহলির নায়ক হওয়া হয় না৷ আর মিচেল মার্শকেও আক্ষেপ করতে হয় না৷
কোহলির রান তখন ১২৷ জশ হ্যাজলউডের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে হলো গড়বড়৷ মার্শ আর ক্যারি দুজনেই দৌড়ে এলেন৷ ক্যারিকে দেখে মার্শ একটু থমকে না গেলে হয়তো সহজেই ধরতে পারতেন৷ কিন্তু ওই মুহূর্তের দ্বিধার জন্য ক্যাচটা ধরতে ধরতেও ধরা হলো না৷ কোহলি পেলেন জীবন, ম্যাচের ভাগ্যও ওখানেই বোধহয় লেখা হয়ে গেল৷ 

ওই মুহূর্তে কোহলি আউট হলে ২০ রানের মধ্যে চার উইকেট নেই ভারতের৷ তার আগে টপ অর্ডাররা একের পর এক এসেছেন আর গিয়েছেন৷ শুরুটা ইশান কিশানকে দিয়ে, মিচেল স্টার্কের মুখোমুখি প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন স্লিপে৷ পরের ওভারে হ্যাজলউডের বলে এলবিডব্লু অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কিশানের মতোই আউট কোনো রান না করেই৷ রোহিত রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে লাভ হয়নি৷ ওই ওভারেই শ্রেয়াস আইয়ারও ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন কাভারে, তিনিও পেলেন ডাক৷ দুই রানের মধ্যে তিন উইকেট নেই ভারতের৷ ওয়ানডে ইতিহাসে টপ অর্ডারের তিন জনের ডাক মারার ঘটনা ভারতের হয়ে এটাই প্রথম৷ ২০০ রানকে মনে হচ্ছিল চেন্নাই থেকে হিমালয় পর্যন্ত দূর৷ 

কোহলির ব্যাটিং
দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে কোহলি আউট হন ৮৫ রানে ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS

কিন্তু কোহলি আর কেএল রাহুল মিলে এরপর হাল ধরলেন৷ কোহলির ক্যাচ তালুবন্দি হলে ম্যাচের চিত্রনাট্য হয়তো অন্যরকম হতে পারতো, তবে এরপর ভারত আর পেছনে ফিরে তাকায়নি৷ রাহুল-কোহলি এরপর কিছুটা সময় সতর্ক ছিলেন৷ কোহলি নিজের খোলস ছেড়ে প্রথম বেরিয়েছেন গ্রিনের এক ওভারে দুই চার মেরে৷ নতুন বলে হ্যাজলউড-স্টার্কের আঘাতের পর অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারছিলেন না৷ চেন্নাইয়ের উইকেটে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা হতে পারতেন তুরুপের তাস, কিন্তু তার প্রথম ওভারেই তিন চার মেরে ম্যাচের লাগামটা পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়ে নিলেন রাহুল৷ 

কোহলির রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানোর ইনিংস আছে অনেক। ইস্পাতকঠিন স্নায়ুতে একাধিকবার দলকে বের করে এনেছেন এমন মহাদুর্যোগ থেকে৷ তবে আজকের পরিস্থিতিটা এমনই ছিল, ওপাশ থেকে সঙ্গ না পেলে কাজটা হতো কঠিন৷ রাহুল শুধু সঙ্গই দেননি, বরং কখনো কখনো কোহলির চেয়েও বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন৷ প্রথমে ফিফটি অবশ্য কোহলিই পেয়েছেন, খানিক পর পেয়েছেন রাহুল৷ কোহলি করেছেন ৭৫ বলে, রাহুলের লেগেছে ৭২ বল৷ চিপকের গ্যালারি আর ভারতের ড্রেসিংরুম ফিফটিতেই প্রায় সেঞ্চুরির সম্ভাষণ জানিয়েছে দুজনকে৷ 

কে এল রাহুল ব্যাটিংয়ে
৯৭ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন কেএল রাহুলছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS

অস্ট্রেলিয়া এরপর যেন হাল ছেড়েই দিয়েছে। জ্যাম্পা কিছুই করতে পারছিলেন না, তাতে অবশ্য শিশিরের প্রভাবও থাকতে পারে। হ্যাজলউড-স্টার্ক শুরুতে দুর্দান্ত হলেও পরে এসে আর উইকেট পাননি৷ ওদিকে কোহলি-রাহুলের জুটি এগিয়েছে তরতর করে৷ শেষ পর্যন্ত হ্যাজলউডকে পুল করতে গিয়ে কোহলি যখন ৮৫ রানে ফিরলেন, ভারত জয় থেকে ৩৩ রান দূরে৷ পান্ডিয়াকে নিয়ে বাকি কাজটা শেষ করে এসেছেন রাহুল৷ ৯৭ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন৷

তার আগে রোববার দুপুরে চেন্নাইয়ের ভরা গ্যালারি দেখেছে ভারতের স্পিন-ঘূর্ণির জাদু৷ স্পিন দিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে ভারত, তা ছিল অনুমিত৷ ভারতের একাদশে তিনজন স্পিনার রাখা সেই আভাসই দিচ্ছিল৷ শুরুটা অবশ্য করে দিলেন পেসাররা৷ জাসপ্রিত বুমরার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারলেন মিচেল মার্শ, বিরাট কোহলির ক্যাচটা সহজ ছিল না মোটেই। শুন্য রানে মার্শের বিদায়ে প্রথম ধাক্কা খেলো অস্ট্রেলিয়া৷

উইকেট নেয়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে জাদেজার উল্লাস
২৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে অসি ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙেছেন জাদেজা ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS

ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথ দ্রুত হাল ধরলেন। ওয়ার্নারের বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ইনিংসে হাজার রান হয়ে গেল, মনে হচ্ছিল বড় ইনিংস দিয়েই উপলক্ষটা রাঙাবেন। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই ৪১ রানে কুলদীপ যাদবকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন। 
অশ্বিন-কুলদিপ-জাদেজা মিলে তখন অসি ব্যাটারদের চেপে ধরেছেন৷ সিঙ্গেল নিতে জেরবার হচ্ছিলেন স্মিথরা৷ শেষ পর্যন্ত চাপটা নিতে পারলো না অস্ট্রেলিয়া৷ জাদেজার দুর্দান্ত টার্ন করা বলে বোল্ড হয়ে গেলেন স্মিথ, যেটিকে আপনি বলতে পারেন এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বল৷

মার্নাস লাবুশেনের বিশ্বকাপ দলে থাকাটাই ছিল চমক, সেখান থেকে সুযোগ পেয়ে গেলেন একাদশে। কিন্তু ওই যে বাড়তে থাকা চাপটা নিতে পারলেন না তিনিও। জাদেজার বলে হাঁসফাঁস করতে করতে বড় শটের চেষ্টা করতে গেলেন, কিন্তু ইনসাইড এজ হয়ে বল জমা পড়লো কিপার রাহুলের গ্লাভসে৷ থামলেন ২৭ রানে৷ উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারিও ফিরে গেলেন দ্রুত, ২ উইকেটে ১১০ রান থেকে ১১৯ রান পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া৷

কুলদীপের বলে বোল্ড হলেন ম্যাক্সওয়েল
স্পিনে ধরাশায়ী হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলওছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS

এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলই কিছু করলে করতে পারতেন। কিন্তু এদিন যে স্পিনারদের ভাষা বোঝার আশা জলাঞ্জলি দিয়েছেন তিনিও। কুলদিপ যাদবের ভেতরের দিকে বলটা বুঝতেই পারলেন না৷ ক্যামেরন গ্রিনও টিকলেন না বেশিক্ষণ৷ অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক মিলে খানিকটা চেষ্টা করলেন, তাতেই স্কোরটা খানিকটা ভদ্রস্থ হলো৷ কিন্তু একটুর জন্য হলো না ২০০, খেলা হলো না ৫০ ওভারও৷

ভারতের সব বোলাররাই আঁটোসাঁটো বল করেছেন৷ তবে আলাদা করে বলতে হবে জাদেজার কথা৷ ১০ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ভেঙে দিয়েছেন অসি ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ ও বুমরা৷

১৯৯ রান আসলে লড়াই করার মতোও নয়। তারপরও অস্ট্রেলিয়া স্বপ্নই দেখছিল শুরুতে৷ কিন্তু কোহলি আর রাহুল ভেবেছিলেন অন্যকিছু। চেন্নাইয়ের দর্শকেরা তাই বাড়ি ফিরতে পেরেছেন হাসিমুখেই৷

অস্ট্রেলিয়া  ৪৯.৩ ওভারে ১৯৯ (স্মিথ ৪৬, ওয়ার্নার ৪১, স্টার্ক ২৮, লাবুশেন ২৭;; জাদেজা ৩/২৮, বুমরা ২/৩৫, কুলদিপ ২/৪২)
ভারত ৪১.২ ওভারে ২০১/৪ ( রাহুল ৯৭*, কোহলি ৮৫; হ্যাজলউড ৩/৩৮)
ভারত ৬ উইকেটে জয়ী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান