স্নিকারের দুনিয়া
শুধু ট্রেনিং শু তো নয় - স্নিকার৷ স্নিকার নিয়ে হামবুর্গে যে প্রদর্শনী চলেছে, তার নাম ‘‘স্নিকার্স: ডিজাইন ফর ফাস্ট ফিট’’৷ স্নিকার কিভাবে খেলার সাজপোশাক থেকে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়াল, তাই নিয়ে প্রদর্শনী৷
রানিং শু-র আবার ডিজাইন কিসের?
বেশ কয়েক দশক সময় লেগেছে, তবে শেষমেশ স্নিকার্স আর শুধু স্পোর্টসওয়্যার থাকেনি৷ আশির দশকের মাঝামাঝি হিপ-হপ কালচারের সঙ্গে যুক্ত হয় স্নিকার্স৷ আজ সেই স্নিকার্স একটি অপরিহার্য ফ্যাশন অ্যাকসেসরি৷ হামবুর্গের মিউজিয়াম অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস-এর প্রদর্শনীটিতে সেই স্নিকার সংস্কৃতির পর্যালোচনা করা হয়েছে৷
সূচনা
১৯৩৬ সালের অলিম্পিক গেমসের রানিং শু৷ কিন্তু আজকের দু’টি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের সঙ্গে তার সংযোগ আছে৷ হেরৎসোগেনআউরাখ-এর ডাসলার ভ্রাতৃদ্বয় তাঁদের কোম্পানিটি সৃষ্টি করেন গত শতাব্দির বিশের দশকে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়া অবধি বছরে দু’ লাখ করে জুতো বিক্রি হচ্ছিল৷ যুদ্ধের পরে পারিবারিক ব্যবসাটি ভেঙে হয় দু’টি কোম্পানি- আডিডাস ও পুমা৷
সবচেয়ে সফল স্নিকার
ষাট কোটির বেশি বার বিক্রি হয়েছে কনভার্স কোম্পানির এই ‘চাক টেইলর অল স্টার্স’ বা ‘চাকস’ জুতো৷ প্রথম অল স্টার মডেলটিতে তলাটা ছিল রাবারের আর ওপরটা ক্যানভাসের৷ জুতোটি ডিজাইন করা হয় ১৯১৭ সালে, ম্যাসাচুসেটসে৷ বাস্কেটবল খেলোয়াড় চাক টেইলর মডেলটির উন্নতি ঘটিয়ে তাতে নিজের সই যোগ করে দেন৷ নতুন মডেলটি বাজারে আসে ১৯২৩ সালে৷
লাইট অ্যান্ড এয়ারি: এয়ার ম্যাক্স আর এয়ার জর্ডান
নাইকি’র দু’টি বিপুলভাবে জনপ্রিয় মডেল৷ প্রথম এয়ার জর্ডান মডেলটি বেরোয় ১৯৮৪ সালে, সর্বকালের সফলতম বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডানের সাহায্য নিয়ে৷ শীঘ্রই সে জুতো পায়ে পরার নয়, বরং সংগ্রহ করার বস্তু হয়ে দাঁড়ায়৷ এয়ার ম্যাক্স বেরোয় ১৯৮৭ সালে; সে জুতোও দারুণ হিট হয়, বিশেষ করে হিপ-হপ মহলে৷
ট্রেনিং শু থেকে স্নিকার
স্নিকার নামটা এসেছে নাকি মার্কিন বিজ্ঞাপন জগতের এক এজেন্টের মস্তিষ্ক থেকে৷ হেনরি নেলসন ম্যাককিনি বিংশ শতাব্দির সূচনায় লেদার সোলের পরিবর্তে রাবার সোল জনপ্রিয় করার চেষ্টায় ছিলেন৷ তখন তাঁর মাথায় আসে, রাবার সোল জুতো পরে কারো দিকে এগোলে কোনো শব্দ হয় না; কাজেই যার দিকে এগোনো হচ্ছে,সে জানতেও পারে না৷ একেই তো বলে ‘স্নিক’ করে কাছে আসা বা এগোনো! কাজেই জুতোর নামই হয়ে যায় স্নিকার্স৷
মন্ত্রীর পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো
সবুজ দলের ইয়শকা ফিশার যখন ১৯৮৫ সালে হেসেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী হলেন, তখন সেটা ছিল রীতিমতো একটা সেন্সেশন! তার ওপর তিনি তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসেন সাদা নাইকি জুতো পরে, যেজন্য পরে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘টেনিস শু মিনিস্টার’৷
বরিস বেকারের পায়ে যা ছিল
স্নিকার সংস্কৃতিতে ১৯৮৫ সালটা ছিল একটা বিশেষ বছর৷ সে বছর ‘রান ডিএমসি’ সংগীত গোষ্ঠী তাদের ‘মাই আডিডাস’ গানটি রেকর্ড করে৷ ওদিকে জার্মানির টেনিস-ওয়ান্ডারকিন্ড বরিস বেকার পুমা কোম্পানির এই জুতো পায়ে দিয়ে উইম্বলডন জেতেন৷
স্নিকারের বিজ্ঞাপন
স্নিকার্স আজকাল শহুরে ফ্যাশনের অপরিহার্য অঙ্গ৷ স্নিকারের বিজ্ঞাপনও আজকাল যত না তার কাজের দিকটা নিয়ে, তার চেয়ে বেশি আধুনিক জীবনযাত্রায় তার স্থানকে নিয়ে৷ যেমন হলিউড-মার্কা বিয়ে-পালানো বউয়ের পায়ে স্নিকার্স না থাকলে চলে?
সৃজনশীলতার জোয়ার
এক ডজন বড় ব্র্যান্ড আর শত শত ছোট ছোট কোম্পানি আজ স্নিকার্স তৈরি করতে ও বেচতে ব্যস্ত৷ বিক্রির ক্ষেত্রে পায়ের আরামের চেয়ে ইমেজ আর ডিজাইন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ স্টার অ্যাথলিটদের দিয়ে প্রোমোট করা জুতোর মডেল লিমিটেড এডিশনে বিক্রি করা হয়, সঙ্গে থাকে সুবিশাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন৷
ট্রেন্ডি নিয়ন
জার্মান ফুটবল দলের পায়ে চিরকালই চোখে পড়ার মতো রঙচঙে বুট দেখতে পাওয়া যায়৷ অবশ্য নিয়ন অরেঞ্জ রঙের স্নিকার পরে অফিসে যাওয়া যায় কিনা, সেটা আরেক কথা৷ ২১শে আগস্ট অবধি হামবুর্গে এই নয়নাভিরাম বুটজোড়াকে দেখতে পাওয়া যাবে৷