1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্থাপত্য হিসেবে নজর কাড়ছে কারখানার ক্যান্টিন

১৫ ডিসেম্বর ২০২১

ব্রাজিলের প্রবাদপ্রতীম স্থপতির শেষ সৃষ্টি কিনা এক কারখানার ক্যান্টিন! কিন্তু একাধিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সেই স্থাপনা অবহেলা করার কোনো জো নেই৷ ক্যান্টিনের বাসনপত্রও স্থাপত্যকে অনুযায়ী বাছাই করা হয়৷

https://p.dw.com/p/44Gs5
BdT - Kugel-Café von Oscar Niemeyer
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas

লাইপসিশ শহরের শিল্প এলাকার মাঝে একটি ভবনের দিকে নজর দিলে মনে হতে পারে যে, অপার্থিব জগতের কোনো বস্তু সেটির গায়ে আটকে গেছে৷ লুডভিশ ক্যোনে নামের এক উদ্যোক্তা এমন অপ্রচলিত ভবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই গোলক অনেকটা মহাকাশযানের মতো দেখতে৷ সেটি কি সবে এখানে নেমেছে, নাকি এখনই উড়ে যাবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই৷ আকাশের সঙ্গে যেন সংলাপ চালাচ্ছে৷ আকাশ পুরোপুরি নীল থাকলে গোলকের রং একঘেয়ে লাগে৷ মেঘে ঢাকা আকাশের নীচে রংয়ের খেলা দেখা যায়, মনে হয় যেন মেঘের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে৷''

স্থাপনার সৃষ্টিকর্তা অস্কার নিমায়ারের নামে এই গোলকের নাম নিমায়ার-স্ফিয়ার রাখা হয়েছে৷ ২০১১ সালে লুডভিশ ক্যোনে ব্রাজিলের এই তারকাকে এই ব্যতিক্রমী আইডিয়া দিয়েছিলেন৷ কারখানার নিজস্ব ক্যান্টিনটিকে ইভেন্ট লোকেশন হিসেবে ব্যবহারের জন্য আলাদা স্থাপনা চেয়েছিলেন তিনি৷ ১০৩ বছর বয়স সত্ত্বেও নিমায়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্যোনে বলেন, ‘‘তাঁর মতো ব্যক্তিত্বকে কারখানা নির্মাণের কাজে শামিল করার আইডিয়াটি নিমায়ারের বেশ উদ্ভট লেগেছিল৷ কারণ কাব্যিক, সুন্দর ও কেজো স্থাপত্যের মধ্যে জোরালো বৈপরিত্য সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ প্রথম মুহূর্ত থেকে আমাদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল৷ আমি নিজের প্রয়োজনের কথা বলেছিলাম এবং তিনি প্রবল উৎসাহ নিয়ে জার্মানিতে আবার নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন৷''

অস্কার নিমায়ার বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দূরদর্শী স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত৷ তাঁর হাতে তৈরি ১৯৫০-এর দশকের শেষে ব্রাজিলের রাজধানী শহর ইউনেক্সোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ তার মধ্যে ব্রাসিলিয়া শহরের ক্যাথিড্রাল ও ব্রাজিলের জাতীয় সংসদ ভবনও রয়েছে৷

মহাকাশযানের আদলে ক্যান্টিন

১৯৫৭ সালে বার্লিনে অস্কার নিমায়ার ভবনের উদ্বোধন হয়েছিল৷ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সেই আধুনিক বসতি সবার নজর কেড়েছিল৷ স্পেনের আভিলেস শহরে ‘সেন্ট্রো নিমায়ার' নামে এ সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে৷ নিমায়ারের সৃষ্টি সম্পর্কে লুডভিশ ক্যোনে বলেন, ‘‘সবকিছু কিছুটা ভাসমান মনে হয়৷ সবাই জানে, তাঁর অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিলো আকাশ৷ তিনি সবসময়ে আকাশের আকার-আকৃতির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ আকাশের আরও কাছাকাছি আসতে এই ভবনের তুলনা মেলা ভার৷''

লুডভিশ ক্যোনের কোম্পানি রেলের ক্রেন ও ট্রামের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ৷ কারখানার ক্যান্টিন ভবনের জন্য তিনি বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলেন৷ তাঁর রাঁধুনী হিসেবে টিবর হ্যারৎসিশকাইট নিজস্ব রেস্তোরাঁর দৌলতে খ্যাতি অর্জন করেছেন৷ তা সত্ত্বেও ক্যান্টিনের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করতে চান না তিনি৷

রোদের তাপে গোলকটি যাতে বাড়াবাড়ি রকম গরম না হয়ে ওঠে, সেটা নিশ্চিত করতে ট্যাবলেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে স্তরগুলি আলাদা করে অন্ধকার করা যায়৷ একটি ক্লিকের মাধ্যমে কাচের স্তরগুলির মাঝে তরল ক্রিস্ট্যাল চার্জ করা যায়৷ ফলে সানগ্লাসের মতো মনোরম সুরক্ষা সৃষ্টি করা যায়৷

স্ফিয়ার ছিল অস্কার নিমায়ারের শেষ আইডিয়া৷ ২০১২ সালে তাঁর মৃত্যুর পরেও ব্রাজিলে তাঁর দফতর ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করে চলেছে৷ জার্মানির স্থপতি হারাল্ড ক্যার্ন সেই সব পরিকল্পনা কার্যকর করার দায়িত্ব পেয়েছেন৷ প্রায় ৩০ লাখ ইউরো মূল্যের স্থাপনাটির কাজ শেষ করতে আট বছর সময় লেগেছে৷ এমন দায়িত্ব নেওয়া সহজ না হওয়ায় অনেক নির্মাণ কোম্পানি পিছিয়ে এসেছিল৷ ক্যার্ন বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৌণিক এবং বর্গক্ষেত্রের কথা ভাবে৷ এমন আকার-আকৃতিতে তারা অভ্যস্ত নয়৷ প্রথমত সিমেন্টের মান খুব উঁচু হতে হবে, অন্যদিকে কাচের এফেক্ট  ক্রিস্ট্যালের মতো হতে হবে৷''

সপ্তাহে একটি সন্ধ্যায় সেই গোলক দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়৷ রেস্তোরাঁর নাম ‘সেউ'৷   ব্রাজিলীয় পোর্তুগিজ ভাষায় যার অর্থ আকাশ৷ দশ কোর্সের পদগুলি সচেতন ভাবেই ছোট প্লেটে পরিবেশন করা হয়৷ কারণ কাচের গম্বুজের নীচে বড় বাসনের বেশি প্রতিফলন ঘটতো৷ শেফ হিসেবে টিবর হ্যারৎসিশকাইট বলেন, ‘‘বড় প্লেটে পরিবেশন করতে শুরু করলে বাইরের কোনো দৃশ্য আর চোখে পড়বে না৷ মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এমন সব ব্যবস্থা করতে হয়৷ কোথায় প্রতিফলন ঘটবে, কোথায় তা কাম্য নয় সেটা স্থির করতে হয়৷ সম্ভব হলে মানুষ যাতে খাবারের প্লেট নিয়ে ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করতে পারে, সেই সুযোগও দিতে চাই৷''

অস্কার নিমায়ারের শেষ ডিজাইনের সাফল্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে৷

ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি