স্তন প্রতিস্থাপন কেলেঙ্কারি

ফ্রান্সের আদালতে সোমবার জার্মানির ‘ট্যুভ রাইনল্যান্ড'-এর বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছে৷ পণ্যের গুণগত মান যাচাইয়ের এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ– তারা ফ্রান্সের পিআইপি-র তৈরি স্তন প্রতিস্থাপন সামগ্রীকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করেছিল৷ অথচ পরবর্তীতে জানা গেছে, পিআইপি ‘কেমিক্যাল-গ্রেড সিলিকন' ব্যবহার করেছে, যা স্বাস্থ্যকর নয়৷

সোমবারের মামলাটিসহ এই বিষয়ে করা মামলার মোট সংখ্যা দাঁড়ালো চারটি৷ আগের তিনটি মামলায় বিশ হাজারের মতো ভুক্তভোগী নারী কয়েক বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন৷

ধারণা করা হচ্ছে, পিআইপি'র তৈরি ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত সিলিকনের স্তন প্রতিস্থাপক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের চার লাখের মতো নারী ব্যবহার করেছেন৷ ২০১০ সালে এই কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হওয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে৷

তবে লন্ডনের ট্রেসি কিস-এর মতো অনেকে এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন৷ পিআইপি'র পণ্য ব্যবহারের পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ অতীতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘‘আমার বুক ভেঙে যাচ্ছিল৷ শ্বাস নেয়া কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল৷ আমি ভেবেছিলাম, আমি যদি আমার নবজাতক সন্তানকেও কোলে নিতে না পারি, তাহলে আমার সঙ্গে এসব কী হচ্ছে৷ আমার যখন সবচেয়ে শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী থাকার কথা, আমি সেই সময় অত্যন্ত দুর্বল হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতাম৷ নিজেকে অনেকটা কারাবন্দি মনে হতো৷''

কিস জানান, পিআইপি'র স্তনপ্রতিস্থাপক দেহের ভেতরে থাকতেই ভেঙে গিয়েছিল এবং সেগুলোর মধ্যে ফুটো হয়ে গিয়েছিল৷ ফলে সেগুলো অনেক ভারী মনে হতো৷ পরবর্তীতে অবশ্য তাঁর স্তন থেকে পিআইপি'র সিলিকনের প্রতিস্থাপক সরিয়ে নিরাপদ অন্য প্রতিস্থাপক স্থাপন করা হয়৷

তবে মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েন তিনি৷ বিষয়টি আদালতে তোলার বিষয়ে মনস্থির করেন৷ আর তখনই তিনি জানতে পারেন যে, তিনি একমাত্র ভুক্তভোগী নন৷ বরং ইতোমধ্যে ‘ট্যুভ রাইনল্যান্ড'-এর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের একাধিক মামলা হয়েছে এবং অনেকেই ইতোমধ্যে কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছেন৷

জার্মান প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যে চতুর্থ মামলা করার প্রস্তুতি চলছে, সেটিতে পাঁচ হাজারের মতো ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন বলে কিস-এর আইনজীবী অলিভিয়ার আওমিত্রে জানিয়েছেন৷ তিনি আশা করেছেন, পিআইপির সিলিকনকে নিরাপদ সার্টিফিকেট প্রদান করা প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে৷

তবে ট্যুভ রাইনল্যান্ড দাবি করেছে, তারা নিজেরাও পিআইপি কেলেঙ্কারির ভুক্তভোগী৷ প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী সিসিলে ডিরেক জানিয়েছেন, পিআইপি স্তন প্রতিস্থাপক তৈরিতে সক্ষম কিনা এবং সেটির ডিজাইন নিয়মনীতি মেনে করা হচ্ছে কিনা, শুধু এইটুকু পরীক্ষার দায়িত্ব ছিল ট্যুভ রাইনল্যান্ডের, উৎপাদিত পণ্য পরীক্ষা করে দেখা তাদের দায়িত্বের আওতায় ছিল না৷

কিস অবশ্য আশা করছেন, ফ্রান্সের আদালত ট্যুভ রাইনল্যান্ডের এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করবে না৷ আর সেটা হলে মানসিকভাবে কিছুটা শান্তি পাবেন তিনি৷

লিসা ল্যুইস (লন্ডন) / এআই