স্ট্রেসের মোকাবিলা করতে বৌদ্ধ রীতিতে ধ্যান
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯মনাস্ট্রিতে দিন শুরু হয় আধ ঘণ্টা নীরবে ধ্যান করে৷ কনরাড বিলিৎস্কি-র মতো মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা বেশ অপ্রত্যাশিত৷ পেশায় তিনি একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ৷ কনরাড বলেন, ‘‘ভীষণ দ্রুত গতিতে কাজ করতে হয়৷ অনেক তথ্য আসে৷ তার মধ্য থেকে বড় অংশ গ্রহণ করে বাকিটা বর্জন করতে হয়৷ মগজ সবসময় ব্যস্ত থাকে৷ বলতে গেলে আমি নিজের মধ্যে থাকি না৷''
তিন বছর ধরে তিনি নিয়মিত এখানে এসে গোটা বিশ্বের সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে আত্মসংযমের অনুশীলন করেন৷ বসার পর নিজের শরীরকে সক্রিয় করে তুলতে হয়৷ শি গং-এর লক্ষ্যে ওয়ার্ম-আপ৷ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ও শরীরকে একই সূত্রে বাঁধতে হয়৷
প্রাতরাশের সময় নীরব থাকতে হয়৷ খাবার সময় অন্য সব কিছু ভুলে শুধু খাবার প্রতি মনোনিবেশ করতে হয়৷ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ফাপ শা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘একবার এক নারী এখানে এসে বলেছিলেন, তাঁর কাছে প্রতিদিন ভোরে ওঠা ও ধ্যান করার সময় নেই৷ তারপর তিনি ভাবলেন, প্রতিদিন সকালে তিনি এক কাপ চা খান৷ চা খাওয়ার সময় ধ্যান করা যায়৷ অর্থাৎ চায়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷ তাই তিনি এখন বসে ধ্যান করার বদলে চা নিয়ে ধ্যান করতে পারেন৷''
এখানে ধর্ম বিষয়ে যাতে শিক্ষা না দেওয়া হয়, ইউরোপীয় ফলিত বৌদ্ধধর্ম ইনস্টিটিউট সে দিকে নজর রাখে৷ নিজেকে আবিষ্কার ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে হারিয়ে না ফেলাই মূল লক্ষ্য৷ ফাপ শা বলেন, ‘‘অনেক রকম পথ রয়েছে৷ এত রকম স্মার্টফোন ও অ্যাপ রয়েছে, যা আমাদের সে বিষয়ে মনে করিয়ে দিতে পারে৷ প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর আমরা ঘণ্টা বাজার শব্দ শুনতে পারি৷ সেটা আমাদের ও আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে মনে করিয়ে দেয় যে শরীরের মধ্যে ফিরে যেতে হবে৷ আমরা যেন বুঝতে পারি,যে আমাদের শরীর টানটান উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে এবং আমরা নিজেদের শরীর ছেড়ে দিতে পারি৷''
মনাস্ট্রিতে সত্যি একজন হাতে করে ঘণ্টা বাজান৷ সেই শব্দ পরের প্রশিক্ষণের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ এবারের বিষয় হাঁটার সময় ধ্যান৷ ফাপ শা বলেন, ‘‘পা ফেলা ও নিঃশ্বাস ফেলা সম্পর্কে সচেতন হতে হয়৷ মনে করতে হয় আমরা ধরিত্রী মায়ের উপর পা ফেলছি৷''
ধীরে ধরে চলার এই ছন্দ দেখতে অদ্ভুত লাগে বটে, কিন্তু স্ট্রেস-ভরা দিনের শেষে বিশ্রাম নিতে এই পদ্ধতি কনরাড-কে সাহায্য করে৷ কনরাড বিলিৎস্কি বলেন, ‘‘প্রথমে আমি সন্ধ্যার দিকে এমনওয়াকিং মেডিটেশন করার চেষ্টা করেছি৷তারপর খেয়াল হলো, কীভাবে আমার মধ্যে তাজা ভাব প্রবেশ করছে, মৃদু হাসি, হালকা বোধ আসছে৷ খুব ভালো ফল পাচ্ছি৷''
সবাই যে যার পছন্দসই পথে অগ্রসর হচ্ছেন৷
জোসেফিন কারোল/এসবি