1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা নিয়ে অভিনব গ্রাফিটি

১৬ জুলাই ২০২০

করোনা সংকটের জের ধরে লকডাউনের কারণে অনেক মানুষকে ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে৷ জার্মানিতে অপেক্ষাকৃত উদার নিয়মের সুযোগ নিয়ে স্ট্রিট আর্ট শিল্পীরা দেওয়ালের উপর অভিনব গ্রাফিটি সৃষ্টি করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3fONS
গ্রাফিটি শিল্পী এমে ফ্রিথিংকারের একটি স্ট্রিট আর্টছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall

গোটা বিশ্বের অনেক গ্রাফিটি শিল্পী করোনা মহামারিকে বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ তাঁদের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে জরুরি বার্তার পাশাপাশি হাস্যরস ও সমালোচনার সঠিক মেলবন্ধন পাওয়া যায়৷ করোনা সংকটের সময়কালের বৈশিষ্ট্যও তাতে উঠে আসে৷ যেমন, ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট আর্টিস্ট ‘টিভি বয়’-এর প্যারোডি-সৃষ্টিকর্মে আংকেল স্যাম মানুষকে বাসায় থাকার ডাক দিচ্ছেন৷

স্ট্রিট আর্টিস্ট হিসেবে বাসায় থাকা মোটেই সম্ভব নয়৷ কারণ, প্রকাশ্যে কাজ করাই তো তাঁদের বৈশিষ্ট্য৷ বাল্কি স্যাভেজ বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে এটাই বিশ্বের কাছে প্রধান বিষয়৷ তাই পথেঘাটেও তার ছাপ দেখলে বিস্ময়ের কোনো কারণ নেই৷ শিল্পীরা বৈশ্বিক বিষয় বেছে নিয়ে যেখানে পারেন তুলে ধরেন৷’’

বার্লিন প্রাচীরের অবশিষ্ট অংশকে ঘিরে একটি পার্ক স্ট্রিট আর্ট শিল্পীদের প্রিয় আড্ডার জায়গা৷ সেখানে আইন মেনেই করোনা-অনুপ্রাণিত দেয়ালচিত্র সৃষ্টি করা হয়েছে৷ বাল্কি স্যাভেজ ও এমে ফ্রিথিংকার বর্তমান যুগের বৈশিষ্ট্য থেকে প্রেরণা নিয়ে সৃষ্টির কাজে মেতে উঠেছেন৷ বাল্কি স্যাভেজ বলেন, ‘‘আমরা হাতমোজা পরেছি, মাস্ক পরেছি৷ রাজপথে বাকি লোকের তুলনায় এগুলি সম্ভবত আরো বেশি সুরক্ষা দেয়৷ হ্যাঁ, আমি বাসায় থেকেও অনেক কাজ করেছি৷ কিন্তু কোনো এক পর্যায়ে বাইরে বের হয়ে দেওয়ালের উপর কাজ করতে হয়৷’’

করোনা নিয়ে গ্রাফিটিতে হাস্যরস ও সমালোচনা

এমে ফ্রিথিংকারের জন্ম ডমিনিকান রিপাবলিকে৷ তাঁর সর্বশেষ সৃষ্টিকর্মে ‘লর্ড অফ দ্য রিং’ চলচ্চিত্রের লোভী চরিত্র গোলাম এবং ‘আইস এজ’ ছবির কাঠবিড়ালি চরিত্র ‘স্ক্র্যাট' ফুটে উঠেছে৷ তারা একটি টয়লেট পেপারের রোল নিয়ে চম্পট দিচ্ছে৷ ফ্রিথিংকারের দেওয়ালচিত্রে টয়লেট পেপার চোর হিসেবে গোলাম-এর মোটিফ গোটা বিশ্বে নজর কেড়েছে৷ এমে বলেন, ‘‘লোকজনের এত পছন্দ হয়েছে, জেনে আমি খুব অবাক হয়েছি৷ কারণ, আমার কাছে এটা শুধু মজার বলে মনে হয়েছিল৷ ছেলের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি৷ সে বললো, আমাকে এটা করতেই হবে৷ তাই করলাম৷’’

বাল্কি স্যাভেজের জন্ম নিউজিল্যান্ডে৷ তিনি কোনো ভাবনাচিন্তা না করেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ শুরু করে দেন৷ অন্যান্য অনেক স্ট্রিট আর্টিস্টের মতো কোনো পরিকল্পনা করেন না৷ জার্মানিতে মানুষের মধ্যে যোগাযোগের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর পর তিনি ‘মাই করোনা’ নামের গ্রাফিটি সৃষ্টি করেন৷ তাঁর দেওয়ালচিত্রে প্রায়ই পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসে৷

সংকটের সময়েও ঐক্যের বার্তা নিয়ে আসছে তাঁর ‘ইন ইট টুগেদার’ নামের সৃষ্টিকর্ম৷ বাল্কি স্যাভেজ জানান, ‘‘আমি কোনো উপার্জন করছি না৷ কতদিন নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে রং কিনতে পারবো জানি না৷ কবে যে এই অবস্থা কেটে যাবে! চারিদিকেই অনিশ্চয়তা৷ মাথায় সে সব ঘোরে বৈকি৷’’

সংকটের মধ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকার বার্তা নিয়ে বাস্কি স্যাভেজ ও এমে ফ্রিথিংকার প্রথমবার একসঙ্গে এক দেওয়ালচিত্র সৃষ্টি করেছেন৷ করোনা সংকটের কারণে অবশ্যই সামাজিক ব্যবধান রাখতে হয়েছে৷ শারীরিক দূরত্ব সত্ত্বেও তাঁদের আবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে৷ একা বাসায় থাকার যন্ত্রণা অনেকের পক্ষেই মেনে নেওয়া কঠিন৷ এমে ফ্রিথিংকার বলেন, ‘‘বাইরেও কিছু কাজ করেছি৷ এখনো বাসায় কিছু স্কেচ করি৷ তবে এখানে যেমন ব্যবধান বজায় রেখে রং করা মোটেই নিষিদ্ধ নয়৷ কোনো বাধা না থাকলে আমি অবশ্যই বাইরে বেরিয়ে রং করতে চাই৷’’

এমে ফ্রিথিংকার ও বাল্কি স্যাভেজের মতো গ্রাফিটি শিল্পী শহরের পরিবেশকেই আর্ট গ্যালারি ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ সমাজকে নাড়া দেয়, এমন বিষয়ই তাঁরা বেছে নেন৷ সে সব বিষয় তাঁদেরও উদ্বেলিত করে৷

কোভিড-১৯ যে স্থায়ী প্রভাব রেখে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মেনে নেওয়া কঠিন৷ তবে স্ট্রিট আর্টের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্ম আশার আলো দেখাচ্ছে৷ ক্ষণিকের জন্য হলেও এই সব কাজ দর্শক ও শিল্পীদের উৎসাহ যোগাচ্ছে৷

ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি

১৩ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...