1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্টেম সেল; পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক

২২ মার্চ ২০০৯

স্টেম সেল এই নামটি ইদানিং আমরা প্রায় শুনছি৷ মানুষের ভ্রূণের মধ্যে অবস্থিত স্টেম সেল নিয়ে চলছে নানা ধরনের গবেষণা৷

https://p.dw.com/p/HHBk
স্টেম সেল গবেষণা নিয়ে চলছে নানা বিতর্কছবি: AP

স্টেম সেল থেকে অনেক রকমের সেল বা কোষ পাওয়া যায়৷ যেমন নারীর শরীরের ডিম্বাণু যখন পুরুষের বীর্যের মাধ্যমে উর্বর হয় এবং এরপর যখন ভ্রূণের উৎপত্তি শুরু হয় প্রথমদিকে কিন্তু সেল বা কোষগুলো একই রকম থাকে৷ এরপর এক পর্যায়ে কোন সেল লিভারের কোষে পরিণত হয় যা থেকে মানুষের লিভার হয়, কোন সেল কিডনি সেল, মস্তিষ্কের কোষ এবং চোখের কোষ তৈরি হয়৷ স্টেম সেল এর এমন সম্ভাবনা আছে যে এ ধরনের কোষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কোষ আমরা পেতে পারি৷

ধরুন কারো ডায়বেটিস হলো, তার যদি টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস হয় তাহলে বেটা সেলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে৷ এখন তার মধ্যে যদি স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা হয় এবং সেই স্টেম সেলগুলো তার মধ্যে বেটা সেল তৈরি করে তাহলে তার ডায়বেটিস সেরে যেতে পারে৷ কারো যদি মস্তিষ্কের অসুখ হয়ে থাকে, মস্তিষ্কের কোন কোষ নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা মারা গেছে তাহলে এই কোষগুলোকেও পুনরায় জাগিয়ে তোলা যেতে পারে যদি ঠিকমত তার মধ্যে স্টেমসেল গুলো প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়৷ কাজেই স্টেম সেলের গবেষণায় বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ ভবিষ্যতে অনেক রোগের প্রতিষেধক ওষুধ হয়তো এ গবেষণার মাধ্যমে আসতে পারে৷

Wissenschaftler nimmt gefrorene Stammzellen aus einem Kuehlbehaelter
গবেষণাগারে স্টেম সেল নিয়ে কাজ করছেন এক গবেষকছবি: AP

স্টেম সেল ও এর গবেষণা নিয়ে সম্প্রতি যে বিতর্ক চলছে তা নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল আজীম এর সঙ্গে৷ তিনি এ গবেষণার বিতর্কের কারণ হিসেবে বলেন, যেহেতু এই সেলগুলো আমরা ভ্রূণ থেকে পেয়ে থাকি তাই এই সেলগুলোর ওপর গবেষণা চালানোর মানে হচ্ছে যে মানব শিশুগুলো এ সেলগুলো থেকে হতে পারতো তা আমরা হতে দিচ্ছি না৷ এটাকে এক ধরনের হত্যাও বলা হচ্ছে৷ অনেকে বলছে এমন কোন অধিকার আমাদের নেই৷ এজন্যই বিতর্ক হচ্ছে৷ কিন্তু এ স্টেম সেলগুলো আমরা পাই কোত্থেকে? নারীর ডিম্বাণু যখন উর্বর হয় তখন অনেক বাড়তি ভ্রূণ আমরা পেয়ে থাকি৷ সেগুলো থেকেও কিন্তু আমরা স্টেম সেলগুলো জোগাড় করে গবেষণার কাজে লাগাতে পারি এমনটা বললেন ড. মো আনোয়ারুল আজীম৷

ধর্মীয় দিক থেকে এ গবেষণা নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে৷ তবে ড. আনোয়ারুল আজীম মনে করেন এ ক্ষেত্রেও জবাব রয়েছে৷ তিনি বলেন, ধর্মীয়ভাবে এ ব্যাপারে কোন সমস্যা থাকতেও পারে৷ কেননা ভ্রূণকে হত্যা করা মানে একটি জীবনকে হত্যা করা ৷ কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে মায়ের পেটে থাকা কোন ভ্রূণকে কিন্তু সরাসরি হত্যা করা হচ্ছে না৷ এটা টেস্টটিউবের মাধ্যমে একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করা হচ্ছে৷ এরপর উৎপত্তি হওয়া ভ্রুণটির ওপর কিন্তু গবেষণা চালানো হচ্ছে৷

অনেকের ধারণা যে স্টেম সেল গবেষণার মাধ্যমে একটি পুরো মানুষ তেরি করা সম্ভব৷ কিন্তু এই তৈরি করা পুর্ণাঙ্গ মানুষটির দায়দায়িত্ব কে নেবে সে প্রশ্নটিও ইতিমধ্যে উঠেছে৷ আরো প্রশ্ন উঠেছে সরকার কিংবা সমাজ এটি গ্রহণ করবে কিনা? এছাড়া এ গবেষণাকে কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তাহলেও মানব সভ্যতা বিপদের মুখে পড়তে পারে৷

স্টেম সেলের গবেষণার এসব বিষয় নিয়ে গোটা বিশ্বেই এখন চলছে নানা বিতর্ক৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ বিতর্ক সবচেয়ে বেশি৷ বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার পক্ষে অবস্থান নিলেও সেখানকার ধর্মীয় নেতারা এ গবেষণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণার জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে৷ কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ স্টেম সেল নিয়ে গবেষণার ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেন৷ বিজ্ঞানীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও এতদিন ধরে এ বাধা নিষেধ অব্যাহত ছিলো৷ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন গবেষকরা৷ কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি পাল্টেছে৷ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি এ ধরণের গবেষণা কর্মের ওপর বিধি নিষেধ তুলে নিয়েছেন৷ কিন্তু এরপরও বিরোধ থামেনি৷ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য নিজেরা আইন করে এ গবেষণাকর্ম নিষিদ্ধ করেছে৷ তারা বিজ্ঞানের চেয়ে তাদের ধর্মীয় ব্যাখ্যাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে৷

প্রতিবেদক: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক