স্কুল কলেজে ড্রেস-জুতার সিন্ডিকেট ব্যবসা!
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের একটি আদালত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে প্রতিযোগিতা আনার নির্দেশ দিয়েছেন৷
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই সিন্ডিকেটের কারণে ড্রেসের মান খারাপ হচ্ছে, আর অভিভাবকদের কাছ থেকে উল্টো বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে৷ তাই প্রতিবছর টেন্ডার ডেকে কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে৷
ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্কুলের মধ্যেই দোকান ভাড়া নিয়ে এককভাবে গত প্রায় ১৮ বছর ধরে (২০০৩ সাল থেকে) ড্রেস বিক্রি করে আসছে৷ এটা কমিশনের নজরে এলে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেন৷ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রতিবছর কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পোশাক সরবরাহের দায়িত্ব দেয়ার আদেশ দেয়া হয়৷ রায়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলা হয়, স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে ওই প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে পোশাক সরবরাহ আর শিক্ষার্থীদের ওই দোকান থেকেই পোশাক কিনতে বাধ্য করা হয়৷
এর আগে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যাপারেও একই ধরনের রায় দেয়া হয় বলে কমিশন চেয়ারম্যান জানান৷
চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ইব্রাহিম মোল্লা তার এই একচেটিয়া ব্যবসার কথা স্বীকার করেন৷ তবে তার দাবি, আগে যিনি ছিলেন তিনি ২৫ বছর ধরে একচেটিয়াভাবে ছিলেন৷ ফখরুদ্দিন বাবুর্চি আছেন ৭০ বছর ধরে৷ তাহলে তার দোষ কোথায়? তিনি জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে একটি কক্ষ দিয়েছে পোশাক বিক্রির জন্য ৷ বিনিময়ে তাকে মাসে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়৷ যা অনেক বেশি৷ এর বাইরে তিনি আর কোনো সুবিধা দেন না বলে দাবি করেন৷
প্রতি সেট পোশাকের জন্য তিনি নেন এক হাজার ২০০ টাকা৷ বছরে ১৩ হাজার সেট পোশাক বিক্রি হয়৷ তিনি জুতা, বেল্ট, ব্যাজও বিক্রি করেন৷
ইব্রাহিম মোল্লা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ড্রেসও সরবরাহ করেন৷ তিনি জানান, ঢাকার স্কুলগুলোতে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান পোশাক সরবরাহ করে৷ তারাই বছরের পর বছর এই কাজ করছেন৷ স্কুল-কলেজে বই, স্টেশনারি, ক্যান্টিনও এভাবেই চলে বলে জানান তিনি৷
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু অভিযোগ করেন, ‘‘ঢাকার স্কুলগুলোর ম্যানেজিং কমিটি ও কিছু শিক্ষকের সাথে যোগসাজশে এই একচেটিয়া ব্যবসা চলে৷ পোশাক থেকে শুরু করে বই-খাতা সবই স্কুলের দোকান থেকে কিনতে হয়৷ ওইসব দেকানে পণ্যের মানও খারাপ, দামও বেশি৷ আর স্কুলের মধ্যেই চলে এসব দোকান৷ এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে৷ আমরা আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাইনি৷’’
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘‘স্কুলের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক সামগ্রী সরবরাহের জন্যও একইভাবে চুক্তিবদ্ধ সিন্ডিকেট আছে৷ তাদের বাইরে কিছু হয়না৷’’
ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুননাহার বলেন, তিনি নতুন এসেছেন তাই জানেন না কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান একচেটিয়াভাবে বছরের পর বছর পোশাক সরবরাহের কাজ পায়৷ তবে আদালতের নির্দেশের কপি তিনি এখনো পাননি৷ পেলে ব্যবস্থা নেবেন৷ তিনি জানান, ‘‘এসব সিদ্ধান্ত ম্যানেজিং কমিটি নেয়, তবে অধ্যক্ষের মতামত থাকে৷ কিন্তু এসব ব্যাপারে স্বচ্ছতা প্রয়োজন৷’’
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, সবশেষ রায়টি ভিকানরুননিসা স্কুল ও কলেজের ব্যাপারে হলেও দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই ধরনের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা চালুর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে৷
প্রতিযোগিতা কমিশনের এই নির্দেশনা এখনো হাতে পাননি বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোহাম্মদ ফারুক৷ তবে তিনি মনে করেন, ‘‘এই ধরনের একচেটিয়া সরবরাহ ব্যবস্থা অনৈতিক৷ এর অবসান হওয়া প্রয়োজন৷’’