1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সৌদি আরবে সংগীতপ্রেমীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে মিউজিক স্কুল

১৭ জুলাই ২০২২

বাবা মন দিয়ে দেখছেন সাত বছরের কন্যা ইয়াসমিন মন দিয়ে কি বোর্ড বাজাচ্ছে রিয়াদের স্কুলে৷ সৌদির ব্যবসায়ী আহমেদ আবদুল্লাহ যখন ছোট ছিলেন, তখন এটা তার কাছে একটা স্বপ্ন ছিল৷

https://p.dw.com/p/4EFW5
ইয়াসমিন মন দিয়ে কি বোর্ড বাজাচ্ছে রিয়াদের স্কুলে৷
ইয়াসমিন মন দিয়ে কি বোর্ড বাজাচ্ছে রিয়াদের স্কুলে৷ ছবি: Fayez NureldineAFP/Getty Images

সৌদি আরবের শাসকরা কয়েক দশক ধরে ইসলামের কঠোর বিধি মেনে এসেছেন৷ সম্প্রতি কিছু সামাজিক বিধিনিষেধে শিথিলতা জারি করা হয়েছে৷আগে সংগীতচর্চা সহ সামাজিক ক্রিয়াকলাপ আরো কঠিন ছিল৷

আহমেদ বলেন, ‘‘এখন আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভাবতে পারি, চর্চায় সময় দিতে পারি৷''

যাদের সামর্থ ছিল, তারা আগে বাড়িতে আসার জন্য বাদ্যযন্ত্রের গৃহশিক্ষক নিয়োগ করতেন, বাকিরা সংগীতচর্চার জন্য রীতিমতো লড়াই করতেন৷

সৌদির রাজধানী রিয়াধ এবং লোহিত সাগরের উপকূলের দেশটির দ্বিতীয় শহর রাজধানী জেদ্দায় গত কয়েক বছরে অন্তত পাঁচটি স্কুল খোলা হয়েছে৷ এ ফলে শিশু এবং কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক উত্সাহীও এই সুযোগ পাচ্ছেন৷

শনিবার আধঘণ্টা করে ইয়ামাহা মিউজিক সেন্টারে ক্লাস করে খুদে ইয়াসমিন৷ তার মিশরীয় সংগীতশিক্ষক কি-বোর্ড শেখান৷ এই কি-বোর্ডের ভাবনা হল, ‘সংগীত সবার জন্য'৷

আবদুল্লাহর নিজের মেয়ের এই উৎসাহ দেখে খুশি হন৷ আবার নিজের ছোটবেলার কথাও মনে পড়ে৷ তার কথায় আফসোসের সুর, ‘‘আমার ছোটবেলায় এসবের সুযোগ ছিল না৷''

সংগীত হিসেবে প্রকৃতির ধ্বনি

পরিবর্তনের সুর

পাঁচ বছর আগে সৌদির ক্ষমতায় আসেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান৷সামাজিক সংস্কারের একটি ধাপে সংগীত চর্চা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছেন তিনি৷কয়েক দশক ধরে দেশটিতে শিল্পীরা পারফর্ম করতে আসতে পারেননি৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরে জাস্টিন বিবার এবং বিটিএস-সহ সারা বিশ্বের কিছু নামী শিল্পী রিয়াধে পারফর্ম করতে এসেছেন৷

মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ আড়াল করতে এই বড়সড় ইভেন্টে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, এমনও বলছেন অনেকে৷ তবে সৌদির তরুণরা এইসব অনুষ্ঠানের জন্য কৃতজ্ঞ৷

২৮ বছর বয়সি ওয়েজদান হাজি মন ভাল করছেন সুরে সুরে
২৮ বছর বয়সি ওয়েজদান হাজি মন ভাল করছেন সুরে সুরেছবি: Fayez NureldineAFP/Getty Images

গত ডিসেম্বরে সাত লাখেরও বেশি দর্শক রিয়াধে এমডিএল বিস্ট সাউন্ডটর্ম মিউজিক ফেস্টিভ্যালে এসেছিলেন৷ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুপারস্টার ফরাসি ডিজে ডাভিড গেট্টা উপস্থিত ছিলেন চার দিনের সেই উৎসবে৷

এছাড়াও রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেগুলিতে স্পিকারের গান বাজছে, লাইভ অনুষ্ঠান হচ্ছে৷ দৈনন্দিন জীবন আরো সুরেলা হয়ে উঠেছে৷প্রার্থনার সময়ও অনেক ক্যাফে-রেস্তোরাঁয় গানবাজনা হচ্ছে, কিন্তু আগে এমন হলে গানবাজনা বন্ধ করে দেয়া হতো৷এই পরিবর্তনকে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে মনে করছেন৷ 

তরুণরা সংগীত স্পৃহা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ ২৮ বছর বয়সি ওয়েজদান হাজি একটি মেডিক্যাল সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন৷ তিনি বলেন, একসময় ইউটিউব দেখে গিটার শেখার চেষ্টা করতেন তিনি৷ কিন্তু এতদিন কোনো ভুল করলে তাকে শুধরে দেয়ার কেউ ছিল না৷ এখন তিনি ইয়ামাহা মিউজিক সেন্টারে প্রতি মাসে ৯৪০ সৌদি রিয়াল (প্রায় ২৫০ মার্কিন ডলার) দিয়ে এক ইউক্রেনিয়ান শিক্ষকের কাছে গিটার শেখেন৷

তিনি বলেন, ‘আমি আগে কিছুই জানতাম না, এখন প্রাথমিক বিষয়গুলো আমি জানি৷ এক ঘণ্টার এইসব সেশন আমার মন ভাল করেছে, আমার ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন এনেছে, আমি এখন অনেক শান্তি পাই৷''

আরো অনেক সৌদি তরুণ দ্রুতই এমন সুযোগ পেতে পারেন৷ ২০২০ সালে সৌদি আরবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠা করা হয় মিউজিক কর্তৃপক্ষ৷ এই কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মিউজিক স্কুলকে লাইসেন্স দেয়৷ সরকারি হিসাবমতে, কেবল চলতি বছরেই সৌদি আরবে প্রায় একশ বেসরকারির স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সংগীত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷

সৌদি সংগীতপ্রেমীদের আশা, শিগগিরই হয়তো সৌদি ব্যান্ড মাতাবে বিশ্ব আসর৷

একেডি/আরকেসি