সোনাজয়ী বাঙালি ভারোত্তোলকের লড়াইয়ের কাহিনি
অচিন্ত্য শিউলি। কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন। অতি গরিব পরিবার থেকে আসা অচিন্ত্যকে অনেক লড়াই করে এই জায়গায় পৌঁছাতে হয়েছে।
অচিন্ত্যর লড়াই
কলকাতার পাশে হাওড়ার পাঁচলায় দেউলপুর গ্রামে অচিন্ত্যর বাড়ি। গরিব গ্রামের অতি গরিব পরিবারের ছেলে। এমন পরিবার যাদের মাসের আয় হাজার তিন-চার টাকা। জরাজীর্ণ বাড়ি। টালির ছাদ। প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়, সেখান থেকে উঠে এসেছে এই চ্যাম্পিয়ন।
অচিন্ত্যর স্কুল
এই স্কুলেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে অচিন্ত্য। তারপর বাবা মারা যাওয়ায় আর পড়া এগোয়নি। লেগে পড়তে হয়েছে কাজে।
প্রশিক্ষণের জায়গা
এখানেই প্রশিক্ষণ করত অচিন্ত্য। অষ্টম দাসের কাছে। নিজের বাড়িতে অতি সাধারণ বা বলা ভালো ন্যূনতম সরঞ্জাম নিয়ে কোচিং করান অষ্টম। এখানেই দিনের পর দিন পড়ে থেকে ভারোত্তোলনের টেকনিক শিখেছে অচিন্ত্য।
মায়ের অবদান
অচিন্ত্যের বাবা ভ্যান চালাতেন। কিন্তু খুব কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চলে যান। তখন হাল ধরতে হয়েছে মা-কে। তিনি জরির কাজ করতে থাকেন। একসময় অলোক ও অচিন্ত্যও জরির কাজ করেছে। এভাবেই ছেলেকে তৈরি করেছেন তিনি।
কষ্ট সার্থক
অচিন্ত্যর মা পূর্ণিমা জানালেন, তার কষ্ট সার্থক। একটা সময়ে তিনি ও তার দুই ছেলে মিলে জরির কাজ করে প্রতি সপ্তাহে সাতশ টাকা পেতেন। তাই দিয়ে সংসার চালাতে হয়েছে।
দাদার কৃতিত্ব
অচিন্ত্যর দাদা অলোক শিউলি আসলে ভারোত্তোলন শিখতেন অষ্টম দাসের কাছে। তিনিই ভাইকে নিয়ে যান কোচের কাছে। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার নিতে হবে বলে ভাইকেই এগিয়ে দেন তিনি। নিজে পিছনে চলে যান। উপমহাদেশের পরিবারের বড় ভাইয়ের সেই আত্মত্যাগের কাহিনি। এখন ভাইয়ের কৃতিত্বে উদ্বেল হন তিনি।
সোনা জেতার পর
অচিন্ত্যও সোনা জেতার পর তার মা, দাদা ও কোচের অবদানের কথা বলেছেন। আসলে তারা না থাকলে সোনা তো দূরে থাক, ভারোত্তোলকই হতে পারতেন না তিনি।
মেডেল ঝুলিয়ে রাখা
অচিন্ত্যদের কোনো আলমারি নেই। তাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাওয়া সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জের মেডেল ঝুলিয়ে রাখতে হয় এভাবেই।
একটা ডিমের জন্য
একটা ডিমসেদ্ধ ও এক প্লেট ঘুগনির জন্য ধান পর্যন্ত বয়েছেন অচিন্ত্য। তার দাদা অলোক জানিয়েছেন, সেনা অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করতে যাওয়ার পর ভাই ভালো করে খেতে পেরেছে। কোচ অষ্টমও বলেছেন, তারপর থেকে অচিন্ত্যর পেশি সুগঠিত হয়েছে।
কোচ অষ্টম দাস
অচিন্ত্যর এই লড়াইয়ে সবসময় পাশে থেকেছেন কোচ অষ্টম দাস। এমনকি তিনি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। অষ্টম বলেছেন, ''আমি ১৬০ জনকে কোচিং করিয়েছি। কিন্তু আমার পরিকাঠামো সামান্য। আমাকে যদি সাহায্য করা হয়, তাহলে আমি এরকম আরো অচিন্ত্য তৈরি করব।''
শিক্ষকের কথা
অচিন্ত্যর স্কুলে বাংলা শিক্ষক দিলীপ সিং জানিয়েছেন, অচিন্ত্য লেখাপড়ায় মাঝারি মানের ছিল। তার মনোযোগ বেশি ছিল খেলাধুলোয়। তবে অষ্টম শ্রেণির বেশি সে পড়তে পারেনি।
অলিম্পিকের জন্য
কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতা হয়ে গেছে। এবার লক্ষ্য অলিম্পিক। তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু করবে অচিন্ত্য। উপরের ছবিতে কোচ অষ্টম ভাবিষ্যতের অচিন্ত্যদের তৈরি করতে ব্যস্ত।
স্কুলের হিরো
স্কুলের বাচ্চাদের কাছে অচিন্ত্য এখন হিরো। তার ছবি নিয়ে বাচ্চারা ব্যান্ড বাজিয়ে উৎসব পালন করছে। তবে অচিন্ত্যকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। অলিম্পিকের মেডেল পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।