1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেনেটে সাক্ষীদের ভিডিও দেখালেন ডেমোক্র্যাটরা

২৩ জানুয়ারি ২০২০

ডনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট মামলায় ফের চমক। সওয়াল জবাবের প্রথম দিনে সেনেটে সাক্ষীদের ভিডিও দেখালেন ডেমোক্র্যাটরা। 

https://p.dw.com/p/3Wfqw
ছবি: Getty Images/AFP/J. Watson

মঙ্গলবারের পর বুধবারও নাটক অব্যাহত মার্কিন সেনেটে। মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিতর্কের পর বুধবার ফের শুরু হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের সওয়াল জবাব। বস্তুত, এ দিনই প্রথম সওয়াল জবাব শুরু হয়েছে। আরও দু'দিন রিপালবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা সওয়াল জবাব চালাতে পারবেন। তার পরেই জানা যাবে, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের চেয়ারে থাকছেন, না কি তাঁকে সরে যেতে হচ্ছে।

বুধবার সওয়াল জবাব শুরু হওয়ার পরে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে ডেমোক্র্যাট সাংসদরা ইমপিচমেন্টের পক্ষে সওয়াল করেন। ফের তাঁরা দাবি করেন, সাক্ষীদের এই বিচারসভায় নিয়ে আসা কতটা জরুরি। বস্তুত, ট্রাম্পপন্থী রিপাবলিকানদের খানিকটা হতচকিত করে এ দিন প্রায় ৫০টি ভিডিও ক্লিপ সেনেটে চালিয়ে দেখান ডেমোক্র্যাটরা। সেখানে বহু সাক্ষীর জবানবন্দি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ভিডিওগুলি চালিয়ে রিপাবলিকানদের খানিকটা চাপেই ফেলে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। কারণ, সাক্ষীদের সরাসরি উপস্থিতি নিয়ে রিপাবলিকনারা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁরা ভাবতে পারেননি, সাক্ষীদের ভিডিও ফুটেজ চালিয়ে দেবেন ডেমোক্র্যাটরা। ১৯৯৯ সালে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে ঠিক এই অস্ত্রই ব্যবহার করেছিলেন রিপাবলিকানরা। ১৯টি ভিডিও ক্লিপ সে সময় চালানো হয়েছিল।

ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছেন, সেনেটে ভিডিও চালানো নিয়ে তাঁদের প্রাথমিক ভাবে সংশয় ছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, সেনেটে রিপাবলিকানদের দলনেতা মিচ ম্যাককনেল ভিডিও চালানো নিয়ে বাদ সাধবেন। কিন্তু ১৯৯৯ সালের কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেননি রিপাবলিকনরা।

এ দিনের ভিডিও ক্লিপগুলিতে ডনাল্ড ট্রাম্পেরও বেশ কিছু ভাষণ এবং ইন্টারভিউ দেখিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। এ ছাড়াও ইউক্রেনে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম টেলরের ১০টি ক্লিপ দেখানো হয়েছে। বস্তুত ভিডিওগুলি দেখিয়ে ডেমোক্র্যাটরা দাবি করেছেন, কেন তাঁরা বার বার সাক্ষীদের সেনেটে উপস্থিত করার কথা বলছেন। ফের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব জন বল্টনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করার দাবিও তাঁরা তোলেন।

ডেমোক্র্যাটদের ভিডিও ক্লিপ দেখানোর বহর দেখে এক সময় রিপাবলিকান নেতা ম্যাট গেটজ বলেন, ডেমোক্র্যাটরা যে ভাবে ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করছেন, তাতে মনে হচ্ছে তাঁরা কেবল টিভির অপারেটর।

ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্যকে এ দিন মুন্সিয়ানার সঙ্গেই খণ্ডন করেছেন রিপাবলিকানরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রেসিডেন্টের কোনও কোনও বিষয় গোপন রাখার অধিকার আছে। সব তথ্য সকলকে জানানোর জন্য নয়। বিশেষত, সেনেটের বিতর্ক গোটা দেশের মানুষ দেখছেন। ফলে সেখানে যে কোনও কাগজ, যে কোনও সাক্ষীকে উপস্থিত করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। শুধু তাই নয়, এ দিন ফের রিপাবলকিনরা দাবি করেন, যে ভাবে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট করেছেন, তা মোটেই স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়নি।

বুধবারের দীর্ঘ সওয়াল জবাবের মধ্যেই সেনেটে ঘটে যায় আরও একটি নাটক। সেনেটের তিনতলায় আচমকাই ঢুকে পড়েন এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। ট্রাম্পের সমর্থনে তিনি স্লোগান দিতে শুরু করেন। খানিকক্ষণের জন্য থেমে যায় সেনেটের কাজ। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করে বাইরে নিয়ে যায়।

এ দিকে এ দিনই দাভোস থেকে দেশে ফিরেছেন ট্রাম্প। সেনেটে যখন সওয়াল জবাব চলছে তখন একের পর এক রিপাবলিকান নেতা এবং সাংসদের টুইট রিটুইট করতে থাকেন তিনি। বলার চেষ্টা করেন, তিনি নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।

নাটক অবশ্য এখানেই শেষ নয়। এ দিন দুপুরে বিরতি নিয়েও চাপানউতোর তৈরি হয় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলকিনদের মধ্যে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তখন যুক্তি সাজাচ্ছেন অ্যাডাম শিফ। তারই মধ্যে বেজে যায় বেলা ৩টে ৮ মিনিট। বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর উঠে দরজার কাছে পৌঁছে যান। যদিও বিরতির সময় ছিল বেলা ৩টে১৫। শিফ যখন বক্তব্য শেষ করেন, ততক্ষণে সেনেটের প্রচুর আসন খালি হয়ে গিয়েছে। বহু রিপাবলিকান সেনেটরই বাইরে চলে গিয়েছেন। বিচার চলাকালীন এমন ঘটনাও মার্কিন ইতিহাসে অভূতপূর্ব। ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য এই বিষয়টি নিয়েও ঠাট্টা তামাশা করছেন। বলছেন, ট্রাম্পকে নিয়ে এত অস্বস্তি আর মেনে নিতে পারছেন না রিপাবলিকানরা। তাই উঠে চলে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার সেনেটে ট্রাম্পের বিচারের দ্বিতীয় দিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দিনটি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনই মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাবে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ। বস্তুত, সব ঠিক থাকলে রিপাবলিকান অধ্যুষিত সেনেটে ভোট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাওয়ার বিশেষ কারণ নেই। কিন্তু যে ভাবে গুটি সাজিয়ে, সাক্ষীদের ভিডিও নিয়ে বিতর্কে নেমেছেন ডেমোক্র্যাটরা, তাতে শেষ মুহূর্তে অঘটন ঘটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেটা হলে ভাল, না হলে অন্তত আসন্ন প্রসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প-বিরোধী প্রচারটা সেরে ফেললেন ডেমোক্র্যাটরা৷

এসজি/জিএইচ (নিউ ইয়র্ক টাইমস, পলিটিকো, রয়টার্স)