সেখানে শুধুই মৃত্যুর দিন গোনা
শেষ জীবনে সবাই একটু শান্তি চান৷ অথচ তাঁরা চান মৃত্যু৷ মৃত্যুতেই নাকি শান্তি৷ পরিবার-পরিজনের অনাদর অবহেলা থেকে মুক্তি, আধ্যাত্মিক মুক্তি – সবই মেলে বেনারসে গেলে৷ দেখুন আজকের ছবিঘরে৷
মৃত্যুর অপেক্ষায়
কাশী৷ ভারতের এক প্রাচীন শহর৷ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান৷ শহরটি বেনারস বা বারাণসী নামেও পরিচিত৷ উত্তর প্রদেশের এই শহরে এখন ১৪ লক্ষেরও বেশি লোকের বাস৷ শহরবাসীদের বড় একটা অংশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা৷ জীবনের তিন কাল পার করে তাঁরা এসেছেন ওপারের ডাক শুনতে৷ জীবন তাঁদের টানেনা, শুধু মৃত্যুর দিন গোনেন তাঁরা৷
যেখানে মোক্ষ মেলে
ভারতের প্রায় সব এলাকার মানুষই আসেন বেনারসে৷ হোটেলে একটা রুম ভাড়া নেন৷ সেই কক্ষেই কেটে যায় বাকি জীবন৷ ছবিতে দেখছেন এমনই এক হোটেল, নাম মোক্ষ ভবন৷ এখানে প্রায় একশ প্রবীণ-প্রবীণা এসেছেন শান্তিতে ‘শেষ ঘুম’ ঘুমাতে৷ এককালীন ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার ডলারের বিনিময়ে শেষ ঘুমের আশ্রয় কিনেছেন তাঁরা!
আধ্যাত্মিক পান্থনিবাস
মুক্তি ভবন আরো অদ্ভুত জায়গা৷ এখানে মানুষ শুধু বিছানা ভাড়া করে, সেই বিছানাতেই তাঁর মৃত্যু হবে৷ সাধারণত মুমূর্ষু রোগীরাই আসেন এখানে৷ তিন বেলা ‘আরতি’, অর্থাৎ বিশেষ প্রার্থনা হয়৷ স্টিরিও রেকর্ডারে সারাক্ষণ বাজে ভক্তিমূলক গান৷ এমন জায়গায় মৃত্যুশয্যার জন্য প্রতিদিনের ভাড়া মার্কিন মুদ্রায় ২০ সেন্ট৷ রোগীর শেষ দিনগুলোয় নিকটাত্মীয়রাও সঙ্গে থাকেন৷
‘পবিত্র শেষকৃত্য’
বেনারসের ‘মণিকর্ণিকা ঘাট’৷ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয় এখানে৷ হিন্দুদের অনেকে মনে করেন, মণিকর্ণিকায় শবদাহ হলে জীবনের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি মেলে, মৃতের আত্মা মুক্তি পায়, স্বর্গবাসী হয়৷
শেষ অবসর
এই দম্পতির ঠিকানাও এখন মোক্ষভবন৷ ছেলে আর অন্যান্য নিকটাত্মীয়ের দুর্ব্যবহার সইতে না পেরে এখানে চলে এসেছেন তাঁরা৷ আর কোনো আশ্রয় তো নেই তাঁদের৷ তাই যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা শেষ সঞ্চয়টুকু দিয়ে কিনেছেন এই ঠিকানা৷
পাপমুক্তি
ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কেউ কেউ মনে করেন, বেনারসে মৃত্যু হলেই পাপমুক্তি এবং স্বর্গবাস নিশ্চিত৷ তাহলে আর পুনর্জন্ম হবে না৷ এমন বিশ্বাস নিয়েই ছবির এই প্রৌঢ়া বেনারসে এসেছেন অন্ধ্র প্রদেশ থেকে৷
জীবনচক্র
এই নারীরা এভাবে গল্প করে, নিবিষ্টমনে প্রার্থনা করে আর বাগানের পরিচর্যা করেই কাটিয়ে দেবেন বাকি জীবন৷ কেন? প্রশ্ন করলে সবাই বলবেন, ‘‘আমরা এই পবিত্র স্থানে এসে মানব জীবনে ইতি টানার অপেক্ষা করছি৷ এভাবেই আমরা জন্ম গ্রহণ এবং মৃত্যু বরণের এই চক্র থেকে মুক্তি পাবো৷’’