সুমো খেলার আদ্যোপান্ত
জাপানে সুমো খেলার চল শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার বছর আগে৷ তখন এটি ছিল এক ধর্মীয় রীতি৷ সুমো কুস্তিগীরদের কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ইতিহাস
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে সুমোর প্রচলন শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়৷ সেই সময় বেশি ফলন পেতে শিন্টো ধর্মের মন্দিরগুলোতে যেসব ধর্মীয় রীতি পালন করা হতো তার মধ্যে সুমো ছিল একটি৷ এরপর সতের শতকের শুরুতে পেশাদার সুমো গ্রুপ গড়ে ওঠে৷
ময়দান আর পোশাক
সুমো কুস্তিগীরদের বলা হয় ‘রিকিশি’৷ দুজন রিকিশি ৪.৫৫ মিটার ব্যাসের একটি রিংয়ের (ডোইয়ো) মধ্যে লড়াই করেন৷ ডোইয়ো কাদা দিয়ে তৈরি৷ তবে সারফেসে বালু থাকে৷ আর রিংয়ের সীমানা নির্ধারণ হয় খড় দিয়ে৷ একজন রিকিশি ৯.১ মিটার লম্বা এক টুকরো কাপড় (মাওয়াশি) পরেন৷ এই কাপড় পেটের চারপাশে চার থেকে সাতবার মুড়িয়ে পরেন তারা৷ প্রশিক্ষণের সময় তুলার মাওয়াশি আর প্রতিযোগিতায় সিল্কের মাওয়াশি পরা হয়৷
বিজয়ী নির্ধারণ
একজন রিকিশি বা কুস্তিগীর অন্যজনকে রিংয়ের বাইরে নিয়ে যেতে পারলে জয়ী হন৷ এছাড়া যদি কোনো রিকিশির পা ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অংশ মাটি স্পর্শ করে তাহলে তিনি হেরে যান৷
শুরুর আগে লবণ ছিটানো
প্রতিটি রাউন্ড শুরুর আগে রিংয়ে লবণ ছিটিয়ে দেয়া হয়৷ এভাবে খেলার ময়দানটি পবিত্র করা হয়৷ আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এতে কুস্তিগীরদের আহত হওয়ার সম্ভাবনা কমে৷
ব়্যাংকিং
ছয়টি বিভাগে কুস্তিগীরদের ব়্যাংকিং করা হয়৷ ঐ বিভাগগুলোতে আবার আলাদা ব়্যাংকিং আছে৷ যেমন শীর্ষ বিভাগ ‘মাকুউটচি’তে পাঁচটি ব়্যাংক আছে৷ সেগুলো হলো ইয়োকোজুনা, ওজেকি, সেকিওয়াকে, কোমুসুবি ও মায়গাশিরা৷ এর পরের দুটি বিভাগ জুরিও এবং মাকুশিটায় রয়েছেন শিক্ষার্থী কুস্তিগীররা৷ আর যারা কেবল সুমো শুরু করেছেন তাদের সবশেষ তিন বিভাগে ব়্যাংকিং করা হয়৷
শীর্ষ কুস্তিগীর
ব়্যাংকিংয়ের শীর্ষ বিভাগ ‘মাকুউটচি’র শীর্ষ ব়্যাংক ‘ইয়োকোজুনা’কে সবচেয়ে সেরা কুস্তিগীর ধরা হয়৷ এই তালিকায় বর্তমানে দুজন কুস্তিগীর আছেন৷ প্রথমে আছেন হাকুহো৷ তারপর আছেন কাকুরিয়ু৷ ২০০৭ সালে প্রথম ইয়োকোজুনা ব়্যাংক পেয়েছিলেন হাকুহো৷ এখনও সেটি ধরে রেখেছেন৷ এখন তার বয়স ৩৫৷
বেশি খান, কম বাঁচেন
শীর্ষ ব়্যাংকিংয়ে থাকা কুস্তিগীরদের ওজন সাধারণত দেড়শ কেজির বেশি হয়ে থাকে৷ রিকিশদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি ‘চানকোনাবে’৷ এটি সবজি, মাংস ও মাছের একটি সিদ্ধ করা মেনু৷ ওজন বাড়াতে বেশি খেলেও তারা সাধারণত অসুখে ভোগেন না৷ কারণ, প্রতিদিনের কঠোর অনুশীলন৷ তবে খেলা ছাড়ার পর যখন খাওয়া কমিয়ে দেন তারা, তখন শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়৷ ফলে সাধারণ জাপানিদের তুলনায় তাদের আয়ু বছর দশেক কম হয়ে থাকে৷
নিয়মতান্ত্রিক জীবন
সুমো কুস্তিগীররা সাধারণত একটি ‘আস্তাবলে’ একসঙ্গে থাকেন৷ সেখানে অনুশীলনের কঠোর নিয়ম মানতে হয়৷ অল্পবয়সিদের অনেকসময় চাকরের মতো সিনিয়রদের কাজ করে দিতে হয়৷ কুস্তিগীর হিসেবে জীবন শুরুর পর চুল বড় করতে হয়, যেন ঝুঁটি বাঁধা যায়৷ এছাড়া আস্তাবলের বাইরে যাওয়ার সময় নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয় যেন তাদের আলাদাভাবে চেনা যায় (যদিও শরীর দেখে এমনিতেই চেনা যায়!)৷ সিনিয়র কুস্তিগীররা চাইলে বিয়ে করে আলাদা থাকতে পারেন৷
ওজন কিন্তু সবসময় এত বেশি ছিল না
সুমো কুস্তিগীর মানেই আমরা বর্তমানে বেশি ওজনের শরীরের মানুষ দেখে থাকি৷ কিন্তু ইতিহাস বলছে, এমনটা আগে ছিল না৷ যেহেতু নির্দিষ্ট ওজন শ্রেণি মেনে সুমো প্রতিযোগিতা হয়না, তাই জেতার জন্য বেশি ওজনকে সুবিধাজনক মনে করেন প্রতিযোগীরা৷
ছয়টি টুর্নামেন্ট
বছরে ছয়টি টুর্নামেন্ট (বাশো) আয়োজন করা হয়৷ এরমধ্যে তিনটি টোকিওতে হয়৷ জানুয়ারি, মে ও সেপ্টেম্বরে এগুলো হয়৷ এছাড়া মার্চে ওসাকায়, জুলাইতে নাগোয়া আর নভেম্বরে ফুকুওকাতে বাশোর আয়োজন করা হয়৷ একেকটি প্রতিযোগিতার মেয়াদ হয় ১৫ দিন৷
বিদেশি কুস্তিগীর
জাপান সুমো এসোসিয়েশনে বর্তমানে প্রায় ৬৬৫ জন রিকিশির নাম নিবন্ধিত আছে৷ বর্তমানের সবচেয়ে সেরা দুই রিকিশির জন্ম মঙ্গোলিয়ায়৷ শীর্ষ দশে আরও একজন মঙ্গোলীয় আছেন৷ জাপান ও মঙ্গোলিয়া ছাড়াও রাশিয়া, জর্জিয়া, বুলগেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিলসহ মোট ১৯ দেশের কুস্তিগীর বর্তমানে সক্রিয় আছেন৷