1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কি বিবাদ মিটবে?‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুনদিল্লী
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যের মধ্যে শতাব্দী প্রাচীন বিবাদের মীমাংসার লক্ষ্যে শীঘ্রই রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই রায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই৷

https://p.dw.com/p/2sOsG
Jerome Kulandai Yesu-Livelihood
ছবি: Jerome Kulandai Yesu

চলতি ফেব্রুয়ারির যে কোনও দিন রায় দেবে আদালত৷এই ‌রায়ে রাজ্যগুলির কয়েক কোটি কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণ হবে৷ তাই রাজনৈতিক দলগুলিও তাকিয়ে আছে রায়ের দিকে৷

কর্ণাটকে নির্বাচন আসন্ন৷ ভোটের মুখে সুপ্রিম নির্দেশ কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে৷ স্বভাবতই কৃষকের ক্ষোভের আশঙ্কায় ভুগছে কংগ্রেস-‌শাসিত রাজ্য সরকার৷ অন্যদিকে, প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ুর জলকষ্ট দূর করতে ‘‌ব্যর্থ'‌ হওয়ায় শাসক দল এআইএডিএমকে-‌কে চেপে ধরেছে বিরোধী দল ডিএমকে৷ উভয় রাজ্যই নিজেদের পক্ষে রায় হবে বলে দাবি করলেও উভয় রাজ্যই নিজেদের অবস্থানে অনড়৷ যার ফলে, পরিস্থিতি অনেকটা ‌ছাইচাপা আগুনের মতো হয়ে রয়েছে৷ কর্ণাটক পুলিশ এই ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে৷ সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে কৃষক ও সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে আইন-‌শৃঙ্খলা বজায় রাখার আগাম আর্জি জানিয়ে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে৷

একদিকে যখন রাজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (‌জাতীয় ক্ষেত্রেও)‌ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সব মহলের ব্যস্ততা তুঙ্গে উঠেছে, তখন জল-‌বিবাদের অন্য পক্ষ তামিলনাড়ু কাল্পনিক যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে আছে৷

সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি৷ খুব শীঘ্রই রায় ঘোষণা করতে পারে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত৷ ‘‌কাবেরী জলবন্টন বিবাদ ট্রাইব্যুনাল'‌ বা সিডাব্লিউডিটি-‌র ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির শেষতম রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলাড়ু, কর্ণাটক এবং কেরালা৷ প্রশ্ন উঠছে, দীর্ঘ দিনের এই সমস্যার সত্যিই কি সমাধান আদালতের রায়ে সম্ভব হবে?

‘আদালতের রায়ের মাধ্যমে কি এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব?‌’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, ‘‘‌‌সুপ্রিম কোর্ট অফ ইন্ডিয়া সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, আদালতের রায়ের মাধ্যমে কি এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব?‌ কোনও এক পক্ষের পক্ষে যদি রায় হয়, তবে অন্য পক্ষ খোলা মনে সেটা কার্যকর করবে কি?‌ এর সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত আছে রাজনৈতিক বিষয়গুলি৷ তাছাড়া আদালত যদি বলে, যেমন চলছে তেমনই চলুক, তাহলে কোনও রাজ্যই খুশি হতে পারবে না৷ জলাধারগুলিতে জলের সীমাবদ্ধতা এবং তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা সমস্যা জিইয়ে রাখবে৷''

সৌম্য চক্রবর্তী আরো বললেন, ‘‘ক'‌দিন পরেই কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচন৷ তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল৷ এই অবস্থায় ঘোলা জলে মাছ ধরার জন্য রাজনৈতিক দলগুলি তৈরি হয়ে আছে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও তা চলতে থাকবে৷'‌'‌ তিনি মনে করেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এই রায়ের পরেও হয়ত বিবাদ সহজে মিটবে না৷ কারণ, কোনও না কোনও পক্ষ উচ্চতর বেঞ্চে আবেদন জানাতেই পারে৷

দেখে নেওয়া যাক কাবেরী জলবন্টন বিবাদের ইতিবৃত্ত—

কর্ণাটকের কোডাগু জেলা থেকে উৎপত্তি কাবেরী নদীর৷ তারপর নদীটি কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পুমপুহার অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে৷ এই অঞ্চলটি তামিলনাড়ু, কেরালা এবং কর্ণাটক ছাড়াও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুডুচেরির কাবেরী বেসিনের অন্তর্গত৷

স্বাধীনতার আগে থেকেই কাবেরীর জল নিয়ে বিবাদ চলছে৷ এর নিজস্ব ইতিহাসও রয়েছে৷ ১৮৯২ থেকে ১৯২৪– এই সময়কালে মাইশোরের রাজা ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর কাবেরীর জলবন্টন বিবাদ মেটাতে ১৯৯০ সালে কেন্দ্র সরকার ‘‌কাবেরী ওয়াটার ডিসপুট ট্রাইব্যুনাল'‌ গঠন করে৷ এরপর '‌৯১ সালে এক অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে তামিলনাড়ুকে ২০৫ হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফুট জল দেওয়ার কথা জানায়৷

২০০৭ সালে ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে৷ তাতে বলা হয়, তামিলনাড়ুর ৪১৯ হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফুট জল পাওয়া উচিত, যা অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের প্রায় দ্বিগুন৷ এই রায়ে স্বভাবতই কর্ণাটক খুশি হতে পারেনি, কারণ, এর ফলে কর্ণাটককে ১০টি মাসিক কিস্তিতে তামিলনাড়ুকে জল দিতে হচ্ছে৷

সুপ্রিম কোর্টও এই রায় বহাল রাখার পর ২০১৩ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র সরকার৷

এই রায়ে উভয় রাজ্যই অখুশি৷ ২০০৭ সালের নির্দেশের আগে তামিলনাড়ু ৫৬২ টিএমসিএফটি জলের দাবি জানিয়েছিল, যা কাবেরী বেসিনের প্রায় তিন-‌চতুর্থাংশ জল৷ কর্ণাটক ৪৬২ টিএমসিএফটি জলের দাবি করে আসছে, যা আবার কাবেরী বেসিনের দুই-‌তৃতীয়াংশ জল৷

২০১৬ সালের আগস্টে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় তামিলনাড়ু সরকার৷ বিষয়টিতে তারা সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করে৷ বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশের পরেও কর্ণাটকের জলাধারগুলি থেকে যে পরিমাণ জল তামিলনাড়ুকে দেওয়া হয়, তাতে ৫০,০০৫২ টিএমসিএফটি জলের ঘাটতি তৈরি হয়েছে৷ সেইসঙ্গে তারা ট্রাইব্যুনালের রায়কেও ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দেয়৷ যুক্তি হিসেবে বলা হয়, শুধুমাত্র একটি ফসলের কথা বিবেচনা করা হয়েছিল, অথচ দুটি ফসলের চাষ হয় রাজ্যে৷ আরও বলা হয়েছে, ‘‌সাম্বা'‌ ধান চাষের জন্য রাজ্যের কৃষকদের আরও জলের প্রয়োজন৷ আদালতে কর্ণাটক জবাব দিয়েছে, স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে জলাধারগুলি প্রায় শূন্য হতে বসেছে৷ তাই বেশি জল দেওয়া সম্ভব নয়৷

২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কর্ণাটক সরকারকে কাবেরী বেসিন থেকে ১০ দিনের জন্য প্রতিদিন ১৫০০০ কিউসেক জল ছাড়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এই নির্দেশের পর কর্ণাটক জুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কৃষকরা৷ রাজ্যের মান্ডয়া, মাইশুরু এবং হাসান অঞ্চলে বিক্ষোভ হিংসার আকার নেয়৷ গতবছর ২০ সেপ্টেম্বর কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুর আবেদনের শুনানির পর রায়দান স্থগিত রাখে সুপ্রিম কোর্ট৷

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত জানায়, একমাসের মধ্যে কাবেরী জলবণ্টন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে৷ আদালত আরও বলেছে, গত দু' দশক ধরে বিস্তর বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে৷ আদালত রায়দানের আগে কোনও সংস্থা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে আদালত৷

কিরণ মজুমদার সাউয়ের নেতৃত্বাধীন ‘‌ব্যাঙ্গালোর পলিটিক্যাল অ্যাকশান কমিটি'‌ ব্যাঙ্গালোর ও আশপাশের জেলাগুলিতে পানীয় জল সরবরাহ অটুট রাখার আবেদনের শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট এই মন্তব্য করেছে৷

 

গত জানুয়ারিতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই কে পালানিস্বামী ‘‌অবিলম্বে ৭ টিএমসিএফটি জল দাও'‌ আর্জি জানান৷ সেই আর্জি খারিজ করে দেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া৷ কারণ হিসেবে জলাধার গুলিতে কম জল থাকার কথা জানানো হয়েছে৷

এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে গোয়া ও কর্ণাটকের মধ্যে মহাদয়ী নদীর জলবণ্টন সম্পর্কিত ‘‌মহাদয়ী ওয়াটার ডিসপুট ট্রাইব্যুনাল'‌-‌এর শুনানিও৷ ফলে সর্বভারতীয় স্তরে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি উঠছে দেশজুড়ে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য