সুন্দরবনের যত পেশাজীবী
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের সঙ্গে নানান পেশার মানুষের জীবন ও জীবিকা সম্পৃক্ত৷ সুন্দরবনকে ঘিরে এরকম নানান পেশার কিছু মানুষের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
বাওয়ালি
সুন্দরবনে কাঠুরিয়া ও গোলপাতা সংগ্রহকারীদের বলা হয় বাওয়ালি৷ বনবিভাগ থেকে পাস নিয়ে সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাওয়ালিরা সুন্দরবনে অবস্থান করেন৷ তবে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সুন্দরবনে কাঠ কাটার মৌসুম আর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি গোলপাতা কাটার মৌসুম৷
বন্ধ আছে কাঠ কাটা
স্বাধীনতা-উত্তরকালে সুন্দরবন থেকে গরান, হেতাল, গেওয়া, সুন্দরী, পশুর, ধুন্দল, গোলপাতা ও বাইন কাঠ কাটার অনুমতি প্রদান করত বনবিভাগ৷ আশির দশকে পশুর কাঠ কাটার অনুমতি বন্ধ করে দেয়া হয়৷ নব্বই দশকে সুন্দরী, গেওয়া ও হেতালের পারমিটও বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ৷ ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডরের আঘাতে সুন্দরবন লন্ডভন্ড হয়ে পড়লে ওই বছর থেকে গরান গাছ কাটার অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না৷
জেলে
সব মৌসুমেই জেলেরা সুন্দরবনে মাছ শিকার করে থাকে৷ তবে শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি জেলে সুন্দরবনে আসেন মাছ ধরতে৷ বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জেলেরা সুন্দরবনের ভেতরের নদী ও খালে মাছ শিকার করেন৷
ভোঁদর জেলে
সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বহুকালের ঐতিহ্য ভোঁদর জেলে৷ নড়াইলের চিত্রা নদী তীরের একদল মৎস্যজীবী ছোট ছোট নৌকায় চেপে সুন্দরবনের ভেতরে উদ্বিড়াল বা ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরেন৷ জাল পেতে পোষা ভোঁদরদের তারা ছেড়ে দেন নদীতে৷ পানির মধ্য থেকে মাছ তাড়িয়ে আনলে জাল তুলে ফেলেন তারা৷
কাঁকড়া শিকারী
এক শ্রেণীর পেশাজীবী আছেন যাঁরা কেবল সুন্দেরবনে আসেন কাঁকড়া শিকার করতে৷ ছোট ছোট নৌকাযোগে এসব মানুষ সুন্দরবনের খালে, নদীতে কাঁকড়া শিকার করেন৷
রেণু শিকারি
সুন্দরবনের নদী-খালে এরা মাছের পোনা সংগ্রহ করে চাষীদের নিকট বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করেন৷ সুন্দরবনের পার্শ্ববতী এলাকাগুলোর অনেক নারী ও শিশু এ পেশায় নিয়োজিত৷
মৌয়াল
সুন্দরবনের গহীনে মধু সংগ্রহ করেন এঁরা৷ সাতক্ষীরা জেলার মুন্সীগঞ্জ ও শ্যামনগরেই এদের বসবাস৷ এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে বনবিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে এরা একেক যাত্রায় সাধারণত পনের দিন বনের ভেতর মধু সংগ্রহ করেন৷
ছন কাটা
সুন্দরবনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে অনেক তৃণভূমিতে জন্ম নেয় প্রচুর ছন গাছ৷ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এসব ছন কাটার জন্য একদল পেশাজীবী সুন্দরবনে আসেন৷ ছন গাছ বিভিন্ন এলাকায় ঘরের ছাউনি ছাড়াও পানের বরজে ব্যবহৃত হয়৷
পদে পদে ঝুঁকি
সুন্দরবনের জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ৷ এরকম নানান হিংস্র বন্যপ্রাণীকে মোকাবেলা করে বছরের বড় একটা অংশ জঙ্গলে কাটিয়ে দেন সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবীরা৷ প্রতিবছর এসব পেশাজীবীদের অনেকেই প্রাণ নিয়ে আর ফিরে আসতে পারেন না৷ নিজেদের খাবারের সন্ধানে গিয়ে বাঘের খাবার হন তাঁরা৷