1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুইস ব্যাংকে আমানত কমার কারণ কী?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৯ জুন ২০১৮

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমানো অর্থের পরিমাণ কমেছে৷ তার মানে কি অর্থপাচার কমেছে? অর্থনীতিবিদদের অনেকেই তা মনে করেন না৷

https://p.dw.com/p/30Yxt
ছবি: Reuters/R. Sprich

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৭' শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে৷ প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অর্থ গচ্ছিত রাখার তথ্য উঠে এসেছে৷ সুইস ব্যাংকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমার পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ৷

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বাড়তে থাকলেও ২০১৭ সালে এসে এটি কমে গেছে৷ এক বছরের ব্যবধানে ২৭ শতাংশের বেশি কমেছে জমার পরিমাণ৷ সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাবে ২০১৭ সাল শেষে জমার পরিমাণ কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ-তে নেমেছে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা (১ সইস ফ্রাঁ = সাড়ে ৮৪ টাকা হিসাবে)৷ আগের বছর ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ (৫ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা)৷ বিগত ৫ বছরে জমার পরিমাণ বাড়লেও এ বছর সেটা কমে গেছে৷

Symbolbild Referendum Goldreserven Schweiz am 30.11.2014
ছবি: Reuters/R. Sprich

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য একটা ভালো খবর৷ বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা পাচার বন্ধে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে৷ সেটা কাজে লেগে যদি পাচার কমে, তাহলে তো খুবই ভালো৷ কিন্তু সেটা যে হয়েছে, তা আমরা মনে করতে পারছি না৷ আমরা দেখছি, বাংলাদেশিরা এশিয়ার অনেক দেশসহ ইউরোপ, অ্যামেরিকার বহু দেশে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করছে৷ কারণ, ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে বিনিয়োগকে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ আবার সুইস ব্যাংকে টাকা না ঢুকে অন্য ব্যাংকেও চলে যেতে পারে৷ সেটা তো আমরা জানি না৷''

ড. জাহিদ হোসেন

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ কমলেও এবার ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে৷ ২০১৫ সালে ১২০ কোটি ফ্রাঁ থেকে ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ফ্রাঁ-তে নেমে এসেছিল ভারতীয়দের জমার পরিমাণ৷ অর্থ পাচারে কড়াকড়ির কারণে ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থ গত কয়েক বছর ধরেই কমছিল৷ কিন্তু ২০১৭ সাল শেষে ভারতীয়দের জমার পরিমাণ প্রায় একশ কোটি ফ্রাঁ-তে উন্নীত হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি৷ প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে ভারত, নেপাল, ভিয়েতনামের নাগরিকদের জমার পরিমান বাড়লেও এবার পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার গচ্ছিত আমানত কমেছে৷

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে শুধু ব্যক্তি আমনতই নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থও লেনদেন হয়৷ বিশ্বব্যাপী মানিলন্ডারিং আইনের কড়াকড়িতে সুইজারল্যন্ডের ব্যাংকগুলো আগের মতো গ্রহকদের তথ্য গোপন রাখতে পারছে না৷ সে কারণেও গ্রাহকরা আমানত কমিয়ে আনতে পারে৷ তিনি বলেন, তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার কমছে৷ আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে৷ পাচারকৃত এই অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা না হলেও বিভিন্ন দেশে সম্পত্তি ক্রয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন৷ বিশেষ করে রিয়েল এস্টেটেও যেতে পারে৷

ড. আহসান এইচ মনসুর

প্রসঙ্গত, গ্রাহকদের তথ্য কঠোর গোপনীয়তায় রক্ষা করায় ধনীদের কাছে অর্থ জমা রাখার জন্য সুইজারল্যন্ডের ব্যাংকগুলো বিখ্যাত৷ বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা রাখে৷ আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না৷ আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো৷ একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো৷ কিন্তু বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করায় আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক তাদের গোপনীয়তা কিছুটা শিথিল করে৷ প্রতিবছর দেশভিত্তিক অর্থ জমা ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করলেও তারা গ্রাহকের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে না৷ বার্ষিক প্রতিবেদনে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে, সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে৷ তবে অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশ করতে বাধ্য৷

সেই অপরাধ সুইজারল্যান্ডেই হোক বা অন্য কোন দেশেই হোক, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢালাওভাবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়৷ যদি প্রয়োজন হয় তবে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে সুইস ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়া সম্ভব৷ তবে এখনো বাংলাদেশ এমন কোনো তথ্য পায়নি৷