1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সু চি ব্যর্থ হলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে চলমান সঙ্কট অবসানের ‘শেষ একটি সুযোগ' মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সামনে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷ এবারও সুচি সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/2k831
ছবি: Reuters/M. Salem

২৫শে আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ৪ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমি আশা করি দেশটির নেতা চাইলেই পরিস্থিতি বদলে দিতে পারেন৷ তাঁর হাতে সুযোগ রয়েছে৷ আমার মতে, কিছু করার জন্য এটাই শেষ সুযোগ৷''

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবার প্রাধান্য পাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন৷ তিনি সেখানে এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন৷ সু চির এই অধিবেশনে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করেন৷ তবে আগামী মঙ্গলবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ প্রসঙ্গে প্রথম কথা বলবেন মিয়ানমারের এই নেত্রী৷

আর তাঁর এই ভাষণকেই শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন জাতিসংঘের মহাসচিব৷ বিবিসির হার্ড টক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘সু চি যদি পরিস্থিতি বদলাতে না পারেন, তাহলে আমার মনে হয়, বিপর্যয়টা হবে ভয়ংকর৷ সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী করে এর সমাধান সম্ভব - তার কোনো উপায় আমি দেখছি না৷'' গুতেরেস বলেন, ‘‘মিয়ানমার যে এখনও অনেকখানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তা বেশ স্পষ্ট৷ আর রাখাইনে যা ঘটছে, তা সেনাবাহিনীর কারণেই ঘটছে৷'' সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে রোহিঙ্গারা দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়েছেন৷ তাই তাঁদের নিজ নিজ ঘরে ফেরার সুযোগ দিতে আবারও আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব৷ আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর শুরু হবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন৷

মিয়ানমারের সেনা প্রধানের ঐক্যের ডাক

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়নের মধ্যেই এ ইস্যুতে মিয়ানমারবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান৷ রোহিঙ্গাদের ওপর ‘কাঠামোগত নিধন' চালানোর অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে৷ সেনাপ্রধান মিন তাঁর ফেসবুক পাতায় শনিবার এক মন্তব্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের ডাক দেন৷ লেখেন, ‘‘তারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি চায়৷ কিন্তু মিয়ানমারে এই জাতিসত্তার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ রোহিঙ্গারা যে আদতে বাঙালি - এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷''

রোহিঙ্গা হত্যা থামাতে পারেন যিনি

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বক্তব্য

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২৫শে আগস্টের পর থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ৬২টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তাদের কাছে এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজও রয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, পরিস্থিতি দেখে এই সহিংসতা বন্ধের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি৷ প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে৷ আর তারপরই বাংলাদেশের সীমান্ত পথে ঢল নামছে শরণার্থীদের৷

শরণার্থী শিশুদের করুণ অবস্থা

জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অর্ধেকের বেশিই শিশু৷ এদের মধ্যে ১১০০টি শিশু একাই বাংলাদেশে এসেছে৷ সেভ দ্য চিলড্রেন-এর বাংলাদেশ প্রধান মার্ক পিয়ার্স বলেছেন, ‘‘যেভাবে এদেশে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে, তাতে বছর শেষে বাংলাদেশে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে৷ এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই হবে ৬ লাখ৷'' জাতিসংঘ এ-ও বলছে যে, মিয়ানমারে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসবে৷

কক্সবাজারে যেসব সাহায্য সংস্থা ত্রাণ কাজে নিয়োজিত, তাদের কথায়,বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব শিগগিরই শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ বিশেষ করে যেসব শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত এবং যারা একেবারেই অভিভাবকহীন, তাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা৷ মার্ক জানিয়েছেন, ‘‘এইসব শিশুদের হয়রানি, নির্যাতন ও পাচার হওয়ার ভয় থাকে৷ এছাড়া এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা চোখের সামনে হত্যা ও নির্যাতনের বিভৎস দৃশ্য দেখেছে এবং এখনো আতঙ্কে কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ কেউ কেউ নিজেদের বাড়ি জ্বলতে দেখেছে, কারো সামনে তাদের বাবা-মাকে মেরে ফেলা হয়েছে৷'' তাই এই শিশুদের নিরাপদে রাখাটাই এখন সেভ দ্য চিলড্রেন-এর কাছে অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)

সু চি’র ভাষণে সহিংসতা বন্ধের কোন আহ্বান আসবে বলে আপনার মনে হয়? লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷