সীমাহীন যুদ্ধ: যুদ্ধাস্ত্রের জন্য উন্মত্ততার শুরু যেভাবে
কখন থেকে যুদ্ধ শুরু করেছে মানুষ? যুদ্ধ কি মানব প্রকৃতির অংশ, নাকি তা অবশ্যাম্ভাবী? সভ্যতার আদি এই প্রশ্নের জবাবের প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে ভিয়েনার একটি প্রদর্শনীতে৷
তরবারির শক্তি এবং নির্বুদ্ধিতা
মানুষের নির্বুদ্ধিতা সীমাহীন বলে মনে করেন যুদ্ধাস্ত্রের বিবর্তনের গবেষক ভিয়েনার ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের প্রাগৈতিহাসিক বিভাগের পরিচালক অ্যান্টন কার্ন৷ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, প্রস্তর যুগ থেকে আরো ভালো অস্ত্রের জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষাই এই নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ দেয়৷ প্রাগৈতিহাসিক যুগের ধারালো পাথরখণ্ড থেকে পরের ক্ষুরধার তরবারির আগমণ তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে৷
প্রাণঘাতী কুড়াল
নব্য প্রস্তরযুগে কুড়ালের মতো নিত্যব্যবহার্য অনেক সরঞ্জাম সংঘাতকালে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে৷ ধারণা করা হয়, পাথরের গদা, মুগুর, কুড়ালই মানুষের আত্মরক্ষা বা আক্রমণের সবচেয়ে পুরাতন অস্ত্র৷ খ্রীষ্টপূর্ব ৫ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ অব্দের এসব যুদ্ধাস্ত্রের ছবি অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তোলা৷
মাথায় গর্ত
সম্মুখভাগে গর্ত থাকা এই কঙ্কাল ২০-৩০ বছরের এক ব্যক্তির৷ ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্র জার্মানির উত্তরাঞ্চলের টলেনসি নদীর এলাকা থেকে এটা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ এটি প্রায় ৩ হাজার ২০০ বছর আগের৷ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোঞ্জ যুগে হাজার হাজার যোদ্ধা অসংখ্য বর্শা, তরবারি এবং পাথর, ব্রোঞ্জ ও অন্যান্য ধাতুর কুড়াল নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হতেন৷
দ্য থার্টি ইয়ার্স ওয়ার
শিল্পী মেরিয়ানের ক্যানভাসে সাক্সনির লুৎসেনে ১৬৩২ সালের যুদ্ধের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তাতে প্রায় ৪০০ বছর আগের আগ্নেয়াস্ত্র মোতায়েন দেখা যাচ্ছে সামনের কাতারে৷ নির্মম এই বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে সুইডেনের রাজা গুস্তাভ অ্যাডোলফাসও ছিলেন, যদিও তাঁর প্রোটেস্ট্যান্ট পক্ষ শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জয়ী হয়৷ এই ধর্মযুদ্ধে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই বর্তমান জার্মানির৷
প্রাক আধুনিক গোলাবারুদ
ছবিতে দুই হাজার ৭০০ সীসার বুলেট দেখা যাচ্ছে, যেগুলো প্রাথমিক পর্বের পিস্তল, অশ্বারোহীদের ব্যবহৃত বন্দুক ও গাদাবন্দুক থেকে বর্ষিত হয়েছিল লুৎসেন যুদ্ধক্ষেত্রে৷ থার্টি ইয়ার্স ওয়ার-এর সবচেয়ে বড় এই যুদ্ধে ২২ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়৷ তাঁদের অনেকেরই গুলিতে মৃত্যু হয় এবং মাথার খুলি উড়ে যায়৷ এই যুদ্ধে প্রধান লক্ষ্যবস্তুই হয় মাথা, শরীরের অন্যান্য অংশে আঘাতের ঘটনা ছিল তুলনামূলক কম৷
অজানা সৈনিকেরা
লুৎসেন যুদ্ধক্ষেত্রে এসব দেহাবশেষ পাওয়া যায়, এগুলো সেই নাম না জানা সৈনিকদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যাঁদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই গণকবরে রাখা হয়েছিল৷ এখানে ৪৭ জন সৈনিকের দেহাবশেষ রাখা হয়েছে৷ ২০১১ সালে পাওয়া এসব দেহাবশেষ নতুন ফরেনসিক টেকনিক প্রয়োগ করে বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে যতটা সম্ভব তাঁদের বৃত্তান্ত এবং মৃত্যুর কারণ বের করা যায়৷ ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি এই ব্যক্তিদের অর্ধেকেরই মৃত্যু হয় গুলিতে৷