1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্ত পার হওয়ার পথ ‘‘চেকপয়েন্ট চার্লি’’

৩ নভেম্বর ২০০৯

বার্লিন প্রাচীরের পতন এবং তৎকালীন পূর্ব জার্মানির শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে এবছর৷ তারপর থেকে বার্লিনের কী পরিবর্তন হয়েছে আর প্রাচীরের সেই জায়গাটাই বা এখন দেখতে কেমন?

https://p.dw.com/p/KC1c
ফাইল ফটোছবি: AP

বার্লিন প্রাচীরের পতন এবং তৎকালীন পূর্ব জার্মানির শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে এবছর৷ তারপর থেকে বার্লিনের কী পরিবর্তন হয়েছে আর প্রাচীরের সেই জায়গাটাই বা এখন দেখতে কেমন?

প্রাচীরঘেঁষে সীমান্ত পার হওয়ার এক জায়গা চেকপয়েন্ট চার্লি৷ ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র বাহিনীর সেনা ও কূটনীতিকরাই যাতায়াত করতেন এই পথ দিয়ে৷ আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক মিউজিয়াম৷

সেখানকার একটি দৃশ্য: চেকপয়েন্ট চার্লির তিন সীমান্ত রক্ষীর মেজাজ ভাল নয়৷ আবহাওয়া খারাপ৷ পর্যটকদের আসা যাওয়াও প্রায় নেই বললেই চলে৷ অ্যামেরিকান, রাশিয়ান ও ফরাসি সেনার ছদ্মবেশে এই তিন তরুণ আসলে সত্যিকারের কোনো সেনা নয়৷ ২০ বছর আগে যেখানে সদর্পে প্রাচীরটি দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে আজ তাঁরা সীমান্তরক্ষীর অভিনয় করছেন মাত্র৷ তাদের একজন বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সেই সময়কার পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের মূল স্ট্যাম্প রয়েছে৷ পর্যটকরা তাদের পাসপোর্টে, ভিসার ফর্মে বা পোস্টকার্ডে তা স্ট্যাম্প করিয়ে নিতে পারেন৷''

এ বাবদ ১০ ইউরো উপার্জন করে ফেলে এই তরুণ৷ সেনার ইউনিফর্মে তাকে বেশ গুরুগম্ভীর মনে হচ্ছিল৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের আগে সীমানা পার হওয়ার জায়গা ‘চেকপয়েন্ট চার্লি' দিয়ে সামরিকবাহিনীর সদস্য এবং কূটনীতিকরাই কেবল যাতায়াত করতে পারতেন৷ ১৯৬১ সালে সেখানে একবার অ্যামেরিকান ও সোভিয়েট ট্যাঙ্ক একেবারে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল৷ সেই চেকপয়েন্ট চার্লিই আজ বার্লিনে আসা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ৷ অসংখ্য স্যুভেনিরের দোকানের পাশাপাশি সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রাচীর-মিউজিয়াম ‘চেকপয়েন্ট চার্লি ভবন'৷ তিন তলার এই ভবনটিতে শীতল যুদ্ধ ও বার্লিন দেয়াল সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়৷

দেখা যায় অ্যামেরিকান সামরিক বাহিনীর ছায়াছবি৷ যাতে তুলে ধরা হয়েছে তখনকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, কীভাবে পূর্ব বার্লিনের অস্ত্রধারী পুলিশ ও সোভিয়েট সেনাবাহিনীর সদস্যরা পূর্ব বার্লিনবাসীদের অ্যামেরিকান সেক্টরে যাওয়া আটকাচ্ছে৷

চলচ্চিত্র ছাড়াও বার্লিন প্রাচীরের ওপর এবং পূর্ব জার্মানদের প্রতিবাদ আন্দোলন ও দেশ ছেড়ে পালোনোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে অসংখ্য ছবি, নথিপত্র ইত্যাদিও নজরে পড়বে দর্শকদের৷ এমনকি যেসব যান বাহনে করে পূর্ব জার্মানির অনেকে পশ্চিমে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেসবের কিছু নমুনাও রয়েছে এই মিউজিয়ামে৷ যেমন: স্বনির্মিত ছোট্ট উড়োজাহাজ, নৌকা, গ্যাসবেলুন ইত্যাদি৷

ব্রিটিশ এক পর্যটক বলেন, ‘‘সত্যি চমৎকার৷ আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, ইউরোপের ইতিহাস সম্পর্কে আমার খুব কমই ধারণা ছিল৷ এটা সেই ইতিহাসেরই এক অংশ, যা আমার জানার ইচ্ছা ছিল৷ এক্ষেত্রে প্রাচীর মিউজিয়াম বেশ তথ্যবহুল৷''

একজন জার্মান পর্যটক বললেন, ‘‘সত্যি দারুণ৷ এই রকম একটি যাদুঘর আছে বলে আমি খুব খুশি৷ আমি মনে করি তরুণদের এখানে আসাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এ ছাড়া এ ধরণের জিনিস সংরক্ষণ করে রাখাও খুব জরুরি, যাতে এরকম ঘটনা আর কখনই না ঘটে৷ ''

মিউজিয়ামটির বিযয়বস্তু শুধু দুই জার্মানির সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নয়৷ সেই সময় রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিভক্ত দুই শিবির পূর্ব ও পশ্চিমের অনেক কিছুই স্মরণ করিয়ে দেয় এই মিউজিয়াম৷ যেমন রাশিয়ার প্রতিবাদী শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের ছবি, পোল্যান্ডের শ্রমিক আন্দোলন ‘সলিডারিটি'র প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি৷ এছাড়া সাবেক পূর্ব জার্মানির কুখ্যাত গোয়েন্দা বিভাগ স্টাসির আড়িপাতার যন্ত্র এবং দুই জার্মানির সীমানায় পেতে রাখা মানুষ খোঁজার যন্ত্র এসবও সজ্জিত রয়েছে মিউজিয়ামটিতে৷ সমস্ত প্রদর্শনীটিই যেন কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক অভিযোগ এবং বিরুদ্ধবাদীদের স্মৃতিকে ধরে রাখার আন্তরিক প্রয়াস৷ মিউজিয়ামের প্রধান এবং মানবাধিকার কর্মী আলেক্সান্ড্রা হিলডেব্রান্ট-এর হৃদয় ছুঁয়ে যায় সেইসব দিনের স্মৃতি আজো৷ তিনি জানান, ‘‘জার্মানির সেসব দিনের কথা, প্রাচীরের পতন, আমি আজো ভুলতে পারিনা৷ এজন্য আমি খুব কৃতজ্ঞ৷ জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বা জিডিআর-এ ১৯৫৩ সালের ১৭ই জুনে সংঘটিত প্রথম গণজাগরণে অংশ নিয়েছিলাম আমি৷ কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সেটাই ছিল জনতার প্রথম উত্থান৷ তা নাহলে প্রাচীরের পতন তথা পূর্ব ইউরোপের মুক্তি হয়তো সম্ভব হত না''

কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রামের জন্য ইউক্রেনে জন্ম নেয়া বার্লিনবাসী এই নারী বৈরিতারও সম্মুখীন হচ্ছেন৷ সমালোচকরা বলেন, মনোভাবের দিক দিয়ে এখনও তিনি সেই শীতল যুদ্ধের যুগেই রয়ে গেছেন৷ বার্লিনের পর্যটকরা অবশ্য এই সব বিতর্ক নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননা৷ বার্লিনে পের্গামন মিউজিয়াম ছাড়া আর যে মিউজিয়ামটি দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে, তা হলএই ‘চেকপয়েন্ট চার্লি ভবন'৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক