সিয়েরা লিওনে যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে নারীর লড়াই
আফ্রিকার যেসব দেশে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের হার বেশি, সিয়েরা লিওন সেগুলোর মধ্যে একটি৷ এক নারী এবার পদক্ষেপ নিয়েছেন এই রীতি বন্ধের৷
এফজিএম
সিয়েরা লিওনে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএমকে বলা হয় ‘কাটিং’৷ বহু পুরানো এই প্রথায় অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়া ব্লেড, রেজার আর কাঁচের টুকরো দিয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷
যৌনাঙ্গচ্ছেদের হার
২০১৭ সালে প্রকাশিত ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনের নারীদের ৮৬ ভাগ যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷
অদ্ভুত রীতি
নারীর যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ আংশিক বা পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়৷ সবচেয়ে ভয়াবহ হল মেয়েদের যোনির মুখ সেলাই করে বন্ধ করে দেয়া হয় যাতে সে বিয়ের আগে কোনো যৌনসম্পর্কে জড়াতে না পারে৷ বিয়ের পর স্বামী সেই সেলাই খোলে, যা অনেক সমাজে বিয়ের পূর্বশর্ত৷
ধর্মগ্রন্থে নেই
সাধারণত মেয়ের বয়স পাঁচ বছর পার হওয়ার আগেই যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ অনেকে ধর্মের দোহাই দিয়ে করলেও কোরআন বা বাইবেলে এ রকম কিছু লেখা নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে যা হয়
এর ফলে রক্তক্ষরণ বা সংক্রমণে মেয়েদের মৃত্যুও ঘটে৷ জরায়ুতে সিস্টের কারণে অনেক নারী বন্ধ্যাত্বের শিকার হন৷ অনেকের সন্তান জন্ম দেয়ার সময় নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়৷
রুগিয়াতু টুরে
প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি নারী-পুরুষদের সমবেত করে প্রজেক্টারের সাহায্যে তথ্যচিত্র দেখান, যেখানে যৌনাঙ্গচ্ছেদের পুরো ঘটনা বিস্তারিত দেখানো হয়৷ ভিডিও দেখে সবার মুখ থেকেই আর্তচিৎকার বের হয়৷ তথ্যচিত্র দেখানো শেষে সবার মতামত জানতে চান তিনি এ বিষয়ে৷
সোয়াইস
সিয়েরা লিওনের বন্দো সমাজে প্রবীণ নারী, যারা এই কাজে দক্ষ, তাদের বলা হয় সোয়াইস৷ বন্দো হলো নারীদের গোপন সমাজ, দেশের আদিবাসীদের জীবনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গণে যাদের ভূমিকা রয়েছে৷ তথ্যচিত্র দেখে তাদের অনেকে শিউরে ওঠেন৷
২০০২ থেকে প্রচারণা
নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে ২০০২ সাল থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্যুরে৷ দ্য অ্যামাজোনিয়া ইনিশিয়েটিভ মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এই নারী ২০২০ সালে জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার জিতেছেন৷
সোয়াইসদের জন্য উপহার
যৌনাঙ্গচ্ছেদ অনুষ্ঠানে মেয়ের পরিবার সোয়াইসদের খাবার, কাপড়, গহনা এবং নগদ অর্থ দিয়ে থাকে৷ এছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসবে উপহার দেয়ার চল আছে৷ ফলে যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ হলে তাদের উপার্জনের পথ তৈরি করতে হবে৷
২০১৯ সালে ‘কাটিং’ বন্ধ
টুরের প্রচারণার পর একদল সোয়াইস যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধে একমত হন৷ ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা এই কাজ থেকে বিরত আছেন৷
বন্দো সমাজে অন্য প্রথার প্রচলন
বন্দো সমাজে যৌনাঙ্গচ্ছেদ উপলক্ষে প্রাচীন নাচ গানের যে রীতি আছে, সেটাকে আরো প্রচারের আলোয় আনতে চান টুরে৷ তিনি বন্দো সংস্কৃতির প্রচার ঘটাতে চান৷
‘নো ব্লেড, নো ব্লাড, নো পেইন’
বন্দো সমাজের জন্য এই স্লোগানে নতুন প্রচারণা শুরু করেছেন টুরে৷ এই প্রচারণায় প্রথমে একশ জন নারী অংশ নিয়েছেন৷ এই কর্মসূচির মাধ্যমে মেয়েদের প্রতকি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করছেন তিনি৷