1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিলেটের বন্যায় হাওরের অবকাঠামো কতটা দায়ী?

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৮ জুন ২০২২

গত দুই মাসের মধ্যে তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জ৷ তবে এবারের বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ সিলেটে কেন এত ঘন ঘন বন্যা? গবেষকরা বলছেন, অতিবৃষ্টির কারণেই এই বন্যা। তবে এর বাইরেও বেশ কিছু কারণ আছে৷

https://p.dw.com/p/4CtVJ
পুরো সিলেট শহর এখন পানির নীচে
পুরো সিলেট শহর এখন পানির নীচেছবি: Abdul Goni/REUTERS

হাওরে অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর তলদেশ পলিমাটিতে ভরে যাওয়া, অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন, পুকুর-খাল ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়াকেও দায়ী করছেন তারা৷  তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ হাওরের অবকাঠামো এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন না৷

এবারের বন্যা এত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল স্টেশন, এয়ারপোর্ট সবই বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷  পুরো সিলেট শহর এখন পানির নিচে৷ এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন৷  বিদ্যুৎহীন সিলেট-সুনামগঞ্জের মানুষ পুরো নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন৷  সুনামগঞ্জ পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷  পরিস্থিতি ভয়াবহতা এতটাই বেশি যে, সামাল দিতে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে নামাতে হয়েছে৷ 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক  সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিলেট বিভাগে বন্যা এতটা তীব্রতা পাওয়ার কারণ, পানি নামতে বাধা পাচ্ছে৷  হাওরে নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে৷  এটা পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে৷  কারণ এই অঞ্চলের পানি হাওর হয়ে নদী দিয়ে নেমে যায়। শুধু এই অবকাঠামো নয়, পাশাপাশি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। এতে পানি দ্রুত সরতে পারছে না৷’’

‘‘ময়লা-আবর্জনায় নদীর তলদেশ ভরে যাওয়াও দায়ী’’

তবে ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা একেবারেই স্বাভাবিক বন্যা৷ এই বন্যার সঙ্গে হাওরের অবকাঠামোর কোন দায় নেই৷  এখন যে বন্যাটি হয়েছে এটা হয়ত দুই সপ্তাহ আগে হয়েছে। এটা দুই সপ্তাহ পরে হতে পারত। অনেক সময় স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বন্যার সৃষ্টি হয়৷ এবারও তাই হয়েছে৷ কয়েক বছর পরপরই এটা হয়ে থাকে৷  এর সঙ্গে অন্য কিছু মেলানো ঠিক না৷ তবে হ্যাঁ, জলবায়ু পরিবর্তনের দায় কিছুটা আছে৷’’

শনিবারের বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বেগে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অনেক উঁচু এলাকাও প্লাবিত হয়ে পড়ছে৷  শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টার মধ্যে নতুন করে শহরের অন্তত ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ এর ফলে সিলেট শহরের পুরোটা কার্যত প্লাবিত হয়ে পড়ল৷  এ অবস্থায় দুর্ঘটনা এড়াতে এসব স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে৷  গত বুধবার তৃতীয় দফায় বন্যা শুরু হওয়ার পর সুরমা নদীর পানি উপচে নগরের অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছিল৷ রেল স্টেশনও বন্ধ করা হয়েছে৷

জল গবেষণা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবারের এইরকম আকস্মিক বন্যার পিছনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ৷  হাওরের অবকাঠামোর এক্ষেত্রে কোন ভূমিকা আছে বলে আমার মনে হয় না৷  গত তিনদিন চেরাপুঞ্জিতে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, ২ হাজার ৪৮৭ মিলিমিটার, এখনো  সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে৷  এরকম ধারাবাহিক বৃষ্টি হয়েছে ১৯৯৫ সালে একবার, তিনদিনে ২ হাজার ৭৯৮ মিলিমিটার আর ১৯৭৪ সালে ২ হাজার ৭৬০ মিলিমিটার৷  এরকম খুব কম দেখা গিয়েছে। হাওরের অবকাঠামো যদি পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করত তাহলে ভৈরব ব্রিজটিই হতো মূল কারণ৷  সেটা তো পানি প্রবাহে কোন বাধার সৃষ্টি করছে না, তাহলে হাওরের এগুলো আসবে কেন?’’

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘হঠাৎ এই বন্যার পেছনে চেরাপুঞ্জির প্রবল বৃষ্টিপাত প্রধান কারণ৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া-জলবায়ু বা বৃষ্টির ধরন বদলে গিয়েছে৷ এখন বৃষ্টি হলে অনেক বেশি গভীর বৃষ্টি হয়৷ চেরাপুঞ্জিতে যখন বৃষ্টি হয়, সেটা ছয় থেকে আট ঘণ্টার ভেতরে তাহিরপুরে চলে আসে৷ কিন্তু সেখানে এসে পানি তো আর দ্রুত নামতে পারছে না৷ ফলে তখন সেটা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে বন্যার তৈরি করছে৷ বিশেষ করে ভারতের উজানে পাথর উত্তোলনের ফলে মাটি আলগা হয়ে নদীতে চলে আসে৷ ফলে নদীর তলদেশ ভরে যায়। সেখানে নাব্যতা সংকট তৈরি হচ্ছে৷ সেখানে গাছও কেটে ফেলা হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি নদীগুলো ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়া, ময়লা-আবর্জনায় নদীর তলদেশ ভরে যাওয়া, ঘরবাড়ি বা নগরায়নের ফলে জলাভূমি ভরাট হয়ে যাওয়াও এর জন্য দায়ী৷ হাওরে বিভিন্ন জায়গায় পকেট আমরা রোধ করে ফেলেছি৷ ফলে পানি প্রবাহে বাধার তৈরি হচ্ছে৷”

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির আশঙ্কা: আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি আরও দু-তিন দিন ধরে অবনতি হতে পারে৷ উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও দ্রুত অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, কারণ, উজানে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ বাংলাদেশেও বৃষ্টি চলছে৷”

বন্যার পানি নামতে কী কোথাও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে? জানতে চাইলে জনাব ভূঁইয়া বলেন, ‘‘পানি স্বাভাবিকভাবে নামছে না, এটা আমাদের মনে হয়েছে৷ কিন্তু কেন নামতে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে, সেটা আমি বলতে পারব না৷ এর কারণ নির্ধারণে মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা কমিটি করা হয়েছে৷ ওই কমিটির রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে কোথায় এই বাধার সৃষ্টি হচ্ছে৷”

 

বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হবে না৷ সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির আশা নেই৷ দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী দুই দিনের মধ্যে আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে৷ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ বলছে, সিলেট বিভাগের বন্যা এর আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে৷ উজান থেকে আসা ঢলে এই বিভাগের বেশির ভাগ এলাকা এখন পানির নিচে৷ সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ নেই, সুপেয় পানি নেই, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নেই৷ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান