সিরিয়ার ফটোগ্রাফারদের চোখে এক দশকের গৃহযুদ্ধ
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের ছবি তোলেন স্থানীয় কিছু সাংবাদিক৷ সেসব ছবি সমকালীন ইতিহাসের নথি হিসেবে সংগ্রহ করছে জাতিসংঘ৷ দেখুন ছবিঘরে৷
রাকার ধ্বংসস্তূপে স্মৃতির খোঁজ
চারপাশে ধ্বংসস্তূপ, এর মাঝে একটি স্ট্রলার নিয়ে হাঁটছেন এক নারী৷ ২০১৯ সালে রাকায় তোলা ছবিটি৷ ফটোগ্রাফার আবুদ হামাম বললেন, ‘‘আমার শহরের এই অবস্থা আমাকে খুব কষ্ট দেয়৷ এর প্রতিটি রাস্তায় আমার স্মৃতি আছে৷ আমাদের অতীতের সব স্মৃতি, এই শহরের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত তারা ধ্বংস করে দিয়েছে৷’’
অন্তহীন শোক
২০২০ সালে ইদলিবে তোলা এই ছবিতে মায়ের মৃত্যুর পর দুই ভাই একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদছে৷ সিরিয়া যুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন ফটোগ্রাফার গাইথ আল সাঈদের বয়স ছিলো ১৭৷ সেসময় বোমা হামলায় তিনি তার ভাইকে হারান৷ সাঈদ বলেন, ‘‘আমি যখনই কোন বিমান হামলার ছবি তুলতে আসি, তখন আমার ভাইয়ের কথা মনে হয়৷ প্রতিদিনই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে৷’’
বোমা হামলায় সৃষ্ট পানির পুল
২০১৩ সালে বোমা হামলায় বিধ্বস্ত পাইপ থেকে পানি বের হয়ে ছোট্ট পুলের মত তৈরি হয়েছে৷ সেখান থেকে পানি খাচ্ছে আলেপ্পোর এই ছেলেটি৷ ফটোগ্রাফার মুজাফ্ফার সালমান বললেন, ‘‘অনেকেই আমার এই ছবিটির সমালোচনা করে বলেছেন, ফটোগ্রাফারের উচিত ছিলো ছেলেটিকে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানো৷ কিন্তু আমার মতে, যা বাস্তব সেটাই তুলে ধরা উচিত, যাতে মানুষ পরিস্থিতিটা উপলব্ধি করে তা পরিবর্তনের চেষ্টা করে৷’’
ঘৌলা ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ
২০১৮ সালের মার্চ মাসে ঘৌলা ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজের সন্তানকে একটা সুটকেসে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন এক বাবা৷ ফটোগ্রাফার ওমর সানাদিকি বলেন, ‘‘যুদ্ধ কেবল সিরিয়াকে বদলে দেয়নি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে এবং বিশ্বের কাছে কীভাবে মানবিক আবেদন তুলে ধরতে হয় সেটাও আমাদের শিখিয়েছে এই যুদ্ধ৷ আমার স্বপ্ন, ৫০ বছর পর আমার দুই মেয়ে বিশ্বের কাছে এই ছবিগুলো তুলে ধরবে৷’’
দৌমায় এক কাপ কফি
দামেস্কের অদূরে দৌমায় নিজের বাড়িতে বসে কফি খাচ্ছেন এক দম্পতি৷ ২০১৭ সালে তোলা ছবিটি৷ ফটোগ্রাফার সামির আল দৌমি বলেন, ‘‘উম্মে মোহাম্মদ আমার দেখা বিশেষ একজন মানুষ৷ যুদ্ধে গুরুতর আহত হন, একটু সুস্থ হতেই স্বামী বিমান হামলায় আহত হয়ে চলার শক্তি হারান৷ স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা অতুলনীয়৷’’
মর্টার হামলায় পা হারানো শিশুটি
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দামেস্কে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাতের খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে পাঁচ বছরের আইয়া৷ স্কুলে যাওয়ার সময় মর্টার হামলায় পা হারায় সে৷ ফটোগ্রাফার ক্যারোল আলফারাহকে আইয়া বলে, ‘‘আমি তখন আমার বাদামি জুতাটা পড়েছিলাম, জুতার সাথে আমার পা-টাও উড়ে গেলো৷ চলে গেলো আমার পা৷’’
পার্কুর প্রশিক্ষণ
আলেপ্পোর কাছে কাফর নৌরানে পার্কুর অ্যাথলেটরা বিধ্বস্ত ভবনে তাদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছেন৷ ছবিটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তোলা৷ ফটোগ্রাফার আনাস আলখারবোতিল দেখাতে চেয়েছেন ধ্বংসের মধ্যেও মানুষের জীবন থেমে থাকে না৷
নতুন করে বাঁচা
‘‘অস্ত্রবিরতির পর ইদলিবের দক্ষিণে বালিউন শহরে এক পরিবারের বাড়িতে ফেরার এই ছবিটা তুলেছিলাম ২০২০ সালে৷ ছবিটি তুলতে গিয়ে আমার একই সাথে আনন্দ ও কষ্টের অনুভূতি হয়েছিল৷ ’’ জানালেন ফটোগ্রাফার আলি হাজ সুলেইমান৷ তিনি বললেন,‘‘ মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখে আমার আনন্দ হয়েছে, কিন্তু কষ্ট হয়েছে এই ভেবে আমি আমার গ্রামে যেতে পারছি না৷’’