1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিন্ধু নদের শুশুক সংরক্ষণে উদ্যোগ

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

গাঙ্গেয় শুশুকের মতো সিন্ধু নদের শুশুকের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ পাকিস্তানের এক পরিবার এই শুশুকদের উদ্ধার ও দেখাশোনার কাজে বহু দশক ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে৷

https://p.dw.com/p/3XHds
Global Ideas Delfin
ছবি: Colourbox

সিন্ধু নদ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ নদীগুলির অন্যতম৷ বহুকাল ধরে সেটি বিরল প্রজাতির ইন্ডাস রিভার ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র৷ সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরে অন্ধ ডলফিনদের কাণ্ডকারখানা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়৷

শুশুক পর্যবেক্ষণ ও উদ্ধারকাজ

সিন্ধু প্রদেশের বন বিভাগের পর্যবেক্ষণকারীরা সুক্কুর বাঁধের কাছে ইন্ডাস ডলফিনদের উপর নজর রাখেন৷ নাজির মিরানি তাঁদেরই একজন৷ তিনি জানালেন, ‘‘এই বাঁধ এলাকায় প্রায় ৩০টি শুশুক থাকে৷ নদীর পানির উচ্চতা কমে গেলে মাছের সংখ্যা বাড়ে৷ কম গতির স্রোতে সেগুলির বংশবৃদ্ধি ঘটে৷''

ইন্ডাস ডলফিন স্তন্যপায়ী প্রাণী৷ নিঃশ্বাস নিতে সেটি প্রায়ই পানি থেকে মুখ তোলে৷ নাজির মিরানি বহুকাল ধরে দিনরাত এই বিরল প্রাণী পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন৷ নাজির বলেন, মাদি শুশুকের স্তন খুবই ছোট, যার মাধ্যমে সেগুলি শাবকদের দুধ খাওয়ায়৷

সিন্ধুর অন্ধ ডলফিন

নাজির মিরানি সারা জীবন ধরে সুক্কুর বাঁধের আশেপাশে প্রায় ২০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুশুক নিয়ে মেতে রয়েছেন৷ তিনি ও তাঁর বাবা সিন্ধু নদে অসংখ্য শুশুক উদ্ধার অভিযান ও গণনা কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন৷ শৈশব থেকে বাবা করম এলাহি মিরানির তত্ত্বাবধানে তিনি এই বিদ্যা রপ্ত করেছেন৷ এখন তাঁর পুত্ররাও সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে এগিয়ে এসেছে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নাজির বলেন, ‘‘ড. জর্জো পিলেরি ১৯৭০ সালে এই ছবিটি তুলেছিলেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, আমি ভারি একটি নৌকায় বসে আছি৷ ড. পিলারি লিখেছিলেন, তখন আমার বয়স আট৷ তিনি আমার বাবার প্রশংসা করে বলেছিলেন, এই ব্যক্তি তাঁদের জন্য গণনা করেছেন৷ তিনি শুশুক সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন৷ আমি ২০ বছর ধরে উদ্ধারকার্য এবং জিল ব্রলিকের সঙ্গে বেশ কিছু সমীক্ষাও চালিয়েছি৷''

শুশুকের আবাসস্থলে সমস্যা

সিন্ধু নদে বেশ কয়েকটি বাঁধের কারণে সেখানকার শুশুকের আবাসস্থল টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে৷ বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সিন্ধু নদে ইন্ডাস ডলফিনের সংখ্যা ১,৮০০ থেকে দুই হাজারের মতো৷ আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ইউনিয়ন মিঠা পানির এই স্তন্যপায়ী প্রাণীকে লুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় অন্তর্গত করেছে৷

সুক্কুরে সিন্ধু নদের শুশুক সংরক্ষণ কেন্দ্রের ফিল্ড অফিসার মির আখতার হুসেন তলপর ১৯৮৬ সাল থেকে শুশুক উদ্ধারকার্য পরিষেবার সঙ্গে কাজ করছেন৷ তাঁর টিম খালে আটকে পড়া শুশুক উদ্ধার করে৷ সাধারণত খাদ্যের খোঁজে শুশুক কম পানির খালে চলে যায়৷

কঠিন উদ্ধারকার্যের পর অত্যন্ত সংবেদনশীল এই প্রাণীগুলিকে নদীর মূল স্রোতে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ মির আখতার হুসেন বলেন, ‘‘আমরা শুশুককে পানির উপরে নিয়ে আসার কাজকে অগ্রাধিকার দেই, যাতে সেটি নিঃশ্বাস নিতে পারে৷ কারণ এগুলির অক্সিজেন ধরে রাখার ক্ষমতা সীমিত৷ কখনো উদ্ধারের পর শুশুক স্থানান্তর করার সময়ে সেগুলির হার্ট-অ্যাটাক হয়৷''

জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও সিন্ধু নদের শুশুকদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে৷ যেমন নদীতে পানির অভাব ও শহর ও কলকারখানার আবর্জনার কারণে দূষণের ফলে এমনটা ঘটছে৷ ডিডাব্লিউ রিপোর্টার ইরফান আফতাব বলেন, ‘‘একদিকে আমরা সিন্ধু নদের মূল্যবান সম্পদ দেখলাম৷ স্থানীয় ভাষায় শুশুকের নাম ‘অন্ধি-ভুলান'৷ নদীর উপর কী সুন্দরভাবে এই প্রাণী ঝাঁপ দেয়৷ কিন্তু অন্যদিকে গোটা শহরের জঞ্জাল নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে৷ শহর ও কলকারখানার এই আবর্জনা শুশুকের খোরাকের সঙ্গে মিশে গেলে এই প্রাণী জীবন অবশ্যই বিপন্ন হয়ে পড়ে৷''

বালু ভরা পানির নীচে ব্লাইন্ড ইন্ডাস ডলফিন শ্রবণশক্তি কাজে লাগিয়ে রাডারের প্রতিফলনের মাধ্যমে পথ খুঁজে নেয়৷ পানির স্বচ্ছতা পরীক্ষা করতে পানিতে ক্যামেরা রাখা হয়েছে৷ তাতে বেশ কিছু ছবিও তোলা হয়েছে৷ সিন্ধু প্রদেশের বন্যপ্রাণী বিভাগের প্রধান জাভেদ মাহের বলেন, ‘‘পানির অভাব ও মানুষের কার্যকলাপ পানির দূষণের তুলনায় আরও বড় হুমকি৷ মানুষ শুশুক শিকার করছে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে বলি, সিন্ধু প্রদেশসহ গোটা পাকিস্তানে কেউ ইন্ডাস ডলফিন খায় না৷''

নদীর ইকোসিস্টেমের ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এই অভিনব মিঠা পানির প্রাণীর সংরক্ষণ করতে হলে মানুষকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে৷

ইরফান আফতাব/এসবি