সিচুয়ান ভূমিকম্পের ১০ বছর পর...
২০০৮ সালের মে মাসের এক দুপুরে রিশটার মানদণ্ডে আট মাত্রার একটি ভূকম্পন চীনের সিচুয়ান প্রদেশকে বিধ্বস্ত করে, প্রাণ হারান প্রায় ৭০,০০০ মানুষ৷ ধ্বংসের চিহ্ন আজও সর্বত্র৷
মনে পড়ে
ডেং হাইয়াংয়ের বয়স আজ ২৭৷ ২০০৮ সালের ১২ মে’র ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়া স্কুলভবনের নীচে ২২ ঘণ্টা আটকে থাকার পর তাঁকে উদ্ধার করা হয় বটে, কিন্তু পা’দুটি কেটে বাদ দিতে হয়৷ ডেং তাতে ভেঙে পড়েননি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা পাস করে, পড়াশুনা শেষ করে, আজ তিনি পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত৷ নিজে বাঁচলেও ভূমিকম্পে অনেক সহপাঠীকে হারিয়েছেন তিনি৷
ভাঙাবাড়ি
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিচুয়ানের ভূমিকম্পে ৬,৮৯৮টি বাড়ি ধসে পড়ে৷ ক্ষতিগ্রস্তদের ধারণা, ঐ বাড়ি বানানোর সময় গোঁজামিল দেওয়া হয়েছিল বলেই ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক হয়েছিল ৷ কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন৷
সরকারি হিসেব নিয়ে সন্দেহ
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৬৯,২২৭, যাদের মধ্যে ৫,১৯৪ জন ছিল শিশু৷ ২০০৮ সালের মাঝামাঝি প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান গত এক দশকে সংশোধন করা হয়নি৷ চীনে নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের সরকারি খাতাপত্রে বিশ্বাস নেই৷ তারা চান, ভূমিকম্পের ফলশ্রুতি সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত৷ কিন্তু তাদের সে দাবি এযাবৎ গ্রাহ্য করা হয়নি৷
পুলিশের নিপীড়নের শিকার আই ওয়ে ওয়ে
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী আই ওয়ে ওয়ে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে বিপর্যস্ত এলাকায় যান ও ভূমিকম্পে নিহত শিশুদের নাম সংগ্রহ করেন৷ ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে এই কাজ করার সময় পুলিশ তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে৷ ‘‘আমি প্রায় মারা যেতে বসেছিলাম,’’ বলেছেন আই ওয়ে ওয়ে৷ কেন তাঁকে মারধর করা হয়, তার কোনো তদন্ত হয়নি৷ এক বছর পরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে জার্মানিতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়৷
দশ বছর আগে ও পরে
ভূমিকম্পের এপিসেন্টার বা কেন্দ্রবিন্দুর কাছে অবস্থিত কিছু এলাকায় গত দশ বছরে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়নি – ছবিতে যেমন শুধুমাত্র লাশ তোলার ‘বডি ব্যাগ’টি উধাও হয়েছে৷ চীনের পূর্তশিল্প তার দক্ষতা ও গতির জন্য প্রখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও ভূমিকম্পের এলাকায় পুনর্নির্মাণের কাজ চলেছে ঢিমে তালে৷
বিপুল অর্থ
ভূমিকম্পের পর চীন আন্তর্জাতিক দাতাবর্গের কাছ থেকে ৭,৬০০ কোটি ইউয়ান (হাজার কোটি ইউরো বা ১,২০০ কোটি ডলার) অনুদান সংগ্রহ করে, যা কিনা একটা রেকর্ড৷ তবে এই অর্থ বাস্তবিক পুনর্নির্মাণের কাজে ব্যয় করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ আছে৷
বিস্মৃত
মা কিঙ্গান পেশায় কৃষিজীবী৷ গত দশ বছর ধরে এই দুয়ারটি পার হয়ে এই পথেই হাটে যান৷ পিছনে তাঁর বাড়ি দেখা যাচ্ছে – ভূমিকম্পের পরে যে অবস্থা হয়েছিল, দশ বছর পরেও ঠিক সেইরকমই রয়েছে, কোনোরকম মেরামত বা চুনকামের চিহ্ন নেই৷
শোক ও সান্ত্বনা
ভূমিকম্পে নিহত আত্মীয়-স্বজনদের কবরে আগাছা পরিষ্কার করছেন এক বৃদ্ধ৷ ওয়েনঝুয়ান প্রদেশটি সেবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ ১২ই মে’র ভূমিকম্পের দশম বার্ষিকীকে ওয়েনঝুয়ানে ‘‘কৃতজ্ঞতা দিবস’’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রশ্ন হলো: কিসের জন্য কৃতজ্ঞতা?