বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা জিয়া?
১৭ অক্টোবর ২০১৭রবিবার নির্বাচন কমিশনে সংলাপের সময় সিইসি বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তাতে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত হন৷ এর মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে৷ ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়৷ তাতে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণ করে৷''
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলে সিইসি ইতিহাসের সত্যকেই স্বীকার করছেন৷ তিনি খালেদা জিয়াকে বিশ্বের প্রথম মুসলিমনারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও উল্লেখ করেছেন৷ তিনি বলেছেন, বিএনপি তার শাসনামলে অনেক ভালো কাজ করেছে৷ সিইসি ইতিহাসের যে সত্য উচ্চারণ করেছেন, বর্তমানে তা অনেকে অস্বীকার করতে চান৷''
সিইসি এ কথা বলে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান৷ প্রধানমন্ত্রী একটি পলিটিক্যাল প্রতিষ্ঠান৷ সেখানে রাজনীতির বাইরে কথা হবে – সেটা যাঁরা বলেন তাঁরা ভণ্ডামি করেন৷''
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিইসি কী উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন৷ তবে তাঁর এই কথা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, এটা একটা হাস্যকর কথা৷''
তিনি বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে বন্দুকের নলের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন৷ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি গণতন্ত্র দিতে পারে, এটা কোনো কথা হতে পারেনা৷ তিনি কারচুপির মাধ্যমে পাঁচ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন৷ তিনি কীভাবে গণতন্ত্র দেবেন৷ আর তিনি বলতেন আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ানস৷ যিনি রাজনীতিকে জটিল এবং কুটিল করতে চান তার হাতে কীভাবে গণতন্ত্র প্রচলন হয়৷''
এদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা ইতিহাস ও রাজনীতি চর্চা করবেন না৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানিয়েছেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা৷ কিন্তু আমি বলতে চাই, জিয়াউর রহমান সামরিকতন্ত্রের প্রবক্তা৷''
তবে সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘জিয়াউর রহমানের প্রশংসার বিষয়টি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কৌশল হতে পারে৷ বিএনপি এখন খুশি৷ এই ভাবটা যেন নির্বাচন পর্যন্ত বজায় থাকে৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতও একই ধরণের৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে৷ কিন্তু আমিতো দোষের কিছু দেখিনা৷ সিইসি চাইছেন সবার সঙ্গে একটা ভাল যোগাযোগ রাখতে৷ আলোচনাটা চালিয়ে যেতে৷ এটা তাঁর একটা কৌশল৷ উনি (সিইসি) একটা ইতিবাচক আবহ তৈরি করতে চেয়েছেন৷ একটা ভাল পরিবেশে সবার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন৷''
তবে সিইসি'র ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে সোমবার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সংলাপের মাঝখানে বয়কট করেন এবং সিইসি'র পদত্যাগ দাবি করেন৷