সাহিত্যসম্রাটের ভিটে যেন বাঙালির সাহিত্য-তীর্থ
একাধারে প্রশাসক, বিচারক ও সাহিত্যস্রষ্টা৷ সরকারি চাকরির গুরুভার সামলে সাহিত্যরচনাতেও দিকপাল ইনি৷ দেশাত্মবোধ থেকে লোকশিক্ষা বা নির্মল হাস্যরস – এই অমর সৃষ্টিই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বাংলা সাহিত্যের সম্রাট করে তুলেছে৷
প্রাসাদোপম নিবাস
নৈহাটি স্টেশন থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে কাঁটালপাড়া৷ ১৮৪০ সালে এখানেই এই বিশাল অট্টালিকাটি তৈরি করেন বঙ্কিম-পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তবে যাদবচন্দ্রের উইলে বঙ্কিম এই বাড়ির ভাগ পাননি৷
পারিবারিক রথ
১৮৬২ সালে বঙ্কিমের দাদা শ্যামাচরণের উদ্যোগে প্রথম রথ বের হয়৷ রথটি নাকি প্রস্তুত হয়েছিল তমলুকে৷ সে বছরই আরম্ভ হয় রথের মেলা৷ পরবর্তীতে এই রথের মেলার একটি ঘটনাই ‘রাধারাণী’ উপন্যাসের জন্ম দেয়৷
মেলার প্রস্তুতি
বঙ্কিমভবনের সামনে শতাব্দী প্রাচীন রথের মেলা বসে আজও৷ মেলাপ্রাঙ্গনের পেছনেই শিবমন্দির ও বঙ্কিমের বৈঠকখানা৷ ১৮৬৬ সালে বসতবাড়ির দক্ষিণে নিজস্ব বাগানে এই বৈঠকখানা তৈরি করেন বঙ্কিম৷
গৃহদেবতা রাধাবল্লভ
বঙ্কিমের মাতামহ রঘুদেব ঘোষাল রাধাবল্লভজিউয়ের কৃপা লাভ করেন৷ তারপর থেকেই চাট্টুজ্জেরা বংশপরম্পরায় রাধাবল্লভের সেবাইত ছিলেন৷ বঙ্কিমের নিজের জীবনে রাধাবল্লভজির প্রভাব ছিল গভীর৷
পুনর্নির্মিত নাটমন্দির
সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিনই বঙ্কিমের ভিটে ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়েছিল৷ ১৯৮৪ সালে বাড়িটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে৷ ১৯৯৯ সালে গড়ে ওঠে ‘বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র’৷ তাঁদেরই উদ্যোগে চাটুজ্জেদের এই নাটমন্দিরটি নতুন ভাবে নির্মিত হয়৷
বারান্দা থেকে দৃশ্যমান রেল
১৮৬২ সালেই বেঙ্গল রেলের উদ্বোধন হয়৷ বঙ্কিম ভবনের পাশ দিয়ে দমদম থেকে রানাঘাট রেল চালু হলো৷ কাঁটালপাড়ার কাছেই ব্যস্ত নৈহাটি স্টেশন৷
শয়নকক্ষ
বঙ্কিম পত্নী রাজলক্ষ্মী দেবী ছিলেন বাড়ির কল্যাণস্বরূপা৷ সাহিত্যসম্রাট বলেছেন, ‘‘তিনি না থাকিলে আমি কী হইতাম, বলিতে পারি না৷’’ ছবিতে শয়নকক্ষের দেওয়ালে সস্ত্রীক বঙ্কিম৷
পাগড়িতে যায় চেনা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে যে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে সকলের থেকে আলাদা করা যায়, তা হলো তাঁর শিরোভূষণ৷ বঙ্কিম ভবনে আজও যা সযত্নে রক্ষিত৷
আঁতুড়ঘর
যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমের জন্ম ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন৷ এই সেই আঁতুড়ঘর৷
ফলকে লেখা নাম
আঁতুড়ঘরের কেন্দ্রে বইয়ের জোড়া পাতার মতো খোলা এই ফলক৷ তাতেই উৎকীর্ণ বঙ্কিমের আবির্ভাবের অভিজ্ঞান৷
রক্ষণশীল অন্দরমহল
যাদবচন্দ্রের রক্ষণশীলতা মেনে বঙ্কিম পরিবারের কোনো নারীই তখন বিদ্যালয়মুখী হননি৷ এ বাড়িতে হতো বাল্যবিবাহও৷ বঙ্কিমের নিজের বিয়েই হয়েছে দশ বছর আট মাস বয়সে৷
সৃষ্টির ঘর
বঙ্কিম নির্মিত বৈঠকখানাই কালক্রমে হয়ে ওঠে বাংলা নবজাগরণের পীঠস্থান৷ এই ঘরেই লেখা হয়েছিল ‘বন্দেমাতরম’ গানটি৷ বঙ্কিম ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল সেই সৃষ্টিপর্বের সাক্ষী৷
বঙ্গদর্শনের মজলিস
বৈঠকখানার হলঘরেই বসত বঙ্গদর্শনের মজলিস৷ উপস্থিত থাকতেন দিকপাল সব কবি-সাহিত্যিকরা৷ নবীনচন্দ্র সেন, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখ৷ এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গদর্শন, প্রচার ও ভ্রমর পত্রিকা৷
নবরূপে বঙ্গদর্শন
বঙ্কিম প্রবর্তিত ‘বঙ্গদর্শন’ এখনও প্রকাশিত হয়৷ তাঁর জন্মদিনে প্রকাশিত হল বিশেষ সংখ্যা৷ এবারের বিষয় কলকাতার সংগ্রহশালা৷