সারা বিশ্বের সাংসদরা ঢাকায়
৩ এপ্রিল ২০১৭পাঁচদিনব্যাপী এই আইপিইউ সম্মেলন শুরু হয় শনিবার বিকেলে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন৷ পাঁচদিনব্যাপী এই সম্মেলন মূলত আইপিইউ'র ১৩৬ তম অ্যাসেম্বলি৷ বছরে দু'বার এই সম্মেলন হয়৷ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এই প্রথম বারের মতো আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজক৷
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘এখানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিরা এই সম্মেলন থেকে গৃহীত পরিকল্পনা নিজ নিজ দেশে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে বিশ্বকে শান্তি, উন্নতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা করি''৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা৷ এই লক্ষ্য পূরণে আপনারা যে পরিশ্রম করছেন, তা সফল হবে৷ আপনাদের পরিশ্রম সার্থক হবে৷''
এই সম্মেলনে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সন্ত্রাসবাদ, মধ্যপ্রাচ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, এইডস, মাতৃসেবা, শিশু স্বাস্থ্যসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ এর মধ্যে ‘ফোরাম অফ উয়োম্যান' পার্লামেন্টারিয়ান এবং ইয়াং পার্লামেন্টারিয়ানদের গ্রুপ অন্যতম৷
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন উদ্বোধনের আগেই ফোরাম অফ ওম্যান পার্লামেন্টারিয়ানের একটি বৈঠক হয় শনিবার সকালে৷ সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংসদ সদস্য ডা. দিপু মনি৷ সেই বৈঠকে বলা হয় ৮০ শতাংশ নারী সাংসদদের প্রতি সেক্সিস্ট মন্তব্য করা হয় অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে হুমকি দেয়া হয়৷ এরমধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী সাংসদকে হত্যা, ধর্ষণ বা অপহরনের হুমকি দেয়া হয়েছে৷ ২০ শতাংশ নারী সাংসদ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং ২৬ শতাংশ শারীরিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন৷
লিঙ্গ সমতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তারা বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন হলে তারা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করতে পারে৷ বর্তমানে সারা বিশ্বে সংসদে ২৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব আছে, যা একবছর আগে ছিল ২২ শতাংশ৷ বর্তমান গতিতে এ হার বাড়তে থাকলে সংসদে নারী-পুরুষ সমতা আসতে আরো ৫০ বছর লাগবে বলে জানান তারা৷
দ্বিতীয় দিন রবিবার আলোচনা জমে ওঠে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের নাক গলানো বা হস্তক্ষেপ নিয়ে৷ আর তাতে উন্নত বিশ্ব যাতে নাক না গলায় তা নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়৷ এশিয়া, আফ্রিকা এবং রাশিয়ার সাংসদরা এর পক্ষে অবস্থান নেন৷ কিন্তু বাকি সাংসদরা এর বিরোধিতা করেন৷
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদের সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে আইপিইউ৷ সম্মেলনের তৃতীয় দিন সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ রুখতে আইপিইউ কাজ করবে৷ হতাশা, সামাজিক অসমতা, অবিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সুযোগের অভাব থেকে সহিংস সন্ত্রাসবাদ জন্ম নেয়৷ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলার কৌশলে আমরা এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করবো৷'' তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈষম্য দূর করতে এবং মানবিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সংসদ কীভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে-তা খসড়া প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷''
আইপিইউ-এর চেয়ারম্যান বাংলাদেশের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সম্মেলনের প্রথমবারের মতো আয়োজক হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ৷ ফলে এত বড় একটি সম্মেলনের আয়োজনের অভিজ্ঞতা একটি বড় অর্জন, যা বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে৷ বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ বাংলাদেশ যে শুধু সম্ভাবনা নয় আর্জনেরও দেশ তা বিশ্ববাসী জানতে পারবে৷ আর সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী নানা চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে বৈষম্য এবং অসমতার চ্যালেঞ্জ, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তাব পাস হবে৷ সেই প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত বিশ্ব কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে তা দেখার বিষয়৷''
এই সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কিভাবে লাভবান হবে? এর জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘‘গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া৷ এটা একদিনের বা সাময়িক কোনো বিষয় নয়, ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে এর বিকাশ হয়৷ এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা এসেছেন৷ স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এসেছেন৷ তাদের কেউ কেউ আবার দেশের নেতৃত্ব দেবেন৷ তারা যার যার দেশের সংসদীয় পদ্ধতি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছেন, অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন৷ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানতে পারছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ভালো৷''
অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘ ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলনে বিশ্বের যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী পার্লামেন্টের সদস্যরা যোগ দিয়েছেন৷ এই অধিবেশনে যারা যোগ দিয়েছেন তাদেরকে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা অভিনন্দন জানাই৷ কিন্তু যে দেশের পার্লামেন্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে, যে দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার লুণ্ঠিত, হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জনগণ জর্জরিত, সেই দেশে আইপিইউ-এর এই সম্মেলন একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়৷''