1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাম্প্রদায়িক টিভি শো বন্ধ করল ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

https://p.dw.com/p/3iXgJ
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo

অনুষ্ঠানের নাম 'বিন্দাস বোল'। চ্যানেলের নাম সুদর্শন টিভি। সেখানেই সঞ্চালকের অভিযোগ ছিল, ভারতের মুসলিমরা সরকারি চাকরি এবং প্রশাসনে 'অনুপ্রবেশ' করছে। প্রশাসনে ঢুকে তারা 'জিহাদ' তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সঞ্চালকের এ হেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। তিন আইনজীবীর বেঞ্চ অত্যন্ত কড়া ভাষায় এ ধরনের মন্তব্যের নিন্দা করেছে। বলা হয়েছে, ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এ ধরনের বক্তব্য এক ধরনের অপরাধ। অবিলম্বে ওই অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

ইউপিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে ভারতে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সাধারণ নাগরিকরা। প্রশাসনের বিভিন্ন পদে যাওয়ার জন্যেও ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সুদর্শন টিভির অনুষ্ঠানে বলা হয়েছিল, দেশের মুসলিমরা ওই পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি এবং প্রশাসনে প্রবেশ করে সিস্টেমের ভিতরে 'জিহাদ' ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

মিডিয়ার বাজারে সুদর্শন টিভি বিজেপি এবং আরএসএস-এর পক্ষ নিয়ে কথা বলে এমন অভিযোগ আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইদানীং দেশের অধিকাংশ মিডিয়াই কোনও না কোনও পক্ষের হয়ে কথা বলে। সুদর্শন টিভি একা সেই দোষে দোষী নয়। বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং জোসেফ এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, যে ভাবে মিডিয়া এখন টিআরপি পাওয়ার জন্য যা খুশি তাই করে, তাকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বলা যায় না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে যা খুশি তাই যে বলা যায় না, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, কোন তথ্যের উপরে দাঁড়িয়ে ওই ধরনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সঞ্চালক যে কথাগুলি বলছিলেন, তার আদৌ কোনও তথ্যভিত্তি আছে কি না। মিডিয়ার স্বাধীনতার নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ যে ছড়ানো য়ায় না, সে কথা একাধিকবার বলেছেন বিচারপতিরা।

বস্তুত, বিচারপতি জোসেফ স্পষ্টই বলেছেন, সুদর্শন টিভি কাদের টাকায় চলে, কারা এর পৃষ্ঠপোষকতা করে, সরকারের কাছ থেকে তারা কত সাহায্য পায়, এই সব কিছু প্রকাশ করতে হবে। মানুষের জানার অধিকার আছে, কারা এই টেলিভিশন চ্যানেলের পিছনে রয়েছেন।

তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, শুধু একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে কাঠগড়ায় তুলে লাভ নেই। দেশের মূলস্রোতের বেশ কিছু মিডিয়া যে ভাবে খবরের নামে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে সেই সমস্ত চ্যানেলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রশ্ন হলো নেবে কে?

ভারতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলিকে সরকার খাতায় কলমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ভারতীয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয় মিডিয়াকে। মিডিয়া তার নিজস্ব স্বাধীনতা উপভোগ করে। তবে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার বেশ কিছু গাইডলাইন আছে। আদালতে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া সে কথা জানালে, ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি প্রশ্ন করেন, গাইডলাইন থাকলে কী ভাবে চ্যানেলগুলি এ ধরনের অনুষ্ঠান করার সুযোগ পায়। তিন বিচারপতির বেঞ্চ প্রস্তাব দিয়েছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরের পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হোক।

রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসকদলগুলি মিডিয়াকে ব্যবহার করে, এ অভিযোগ বহু দিনের। বেসরকারি মিডিয়া সরকারের বিজ্ঞাপনের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অন্যদিকে, কোনো কোনো দল নিজেদের প্রচারের জন্যো কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে। সুপ্রিম কোর্টের রায় সেই বিষয়টিকে ছুঁয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)