1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিলিটারি কি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান?

আরাফাতুল ইসলাম৪ জানুয়ারি ২০১৬

এই প্রশ্ন অনেকের মনে আছে৷ তবে প্রকাশ্যে এটা জিজ্ঞাসা করা খানিকটা বিপজ্জনক৷ সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সাধ্যের বাইরে৷

https://p.dw.com/p/1HXWz
Armee Bangladesch Dhaka
ছবি: DW/M. Mamun

কয়েকমাস আগে ফাইনেন্সিয়াল টাইমস বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে সেনাবাহিনী পত্রিকাটির ভাষায় তার ‘নিউট্রাল রেফারির' ভূমিকা থেকে সরে গেছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে৷

ফাইনেন্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে যা অতীতে কোনো সরকারই দেয়নি, ভবিষ্যতেও এতটা কেউ দিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে৷ এ সব সুবিধার মধ্যে রয়েছে চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র, বিমান, সাবমেরিন কেনার নামে বিপুল বাজেট বরাদ্দ৷ গত ছয় বছরে প্রতিরক্ষা খাতে বাৎসরিক বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে৷ সেনাবাহিনীকে ব্যবসা করার অবাধ সুযোগ দেয়া হচ্ছে, তাদের নতুন সেনানিবাস করে দেয়া হচ্ছে৷

লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকাটির ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সামরিক বাহিনীকে বিপুল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে যাতে করে এটি কোনোভাবে সরকারের জন্য হুমকিতে পরিণত না হয়৷ কেননা অতীতে বিভিন্ন সময় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ দেখা গেছে৷ আর বর্তমান বিরোধী দলও ইঙ্গিতে বিভিন্নভাবে সেনাবাহিনীর সমর্থন চাচ্ছে, মনে করছে ‘ফাইনেন্সিয়াল টাইমস'৷

সেনাবাহিনীর ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ কতটা বেড়েছে তা অনুসন্ধান করেছেন ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে সিমেন্ট বিক্রি, সেতু তৈরি, হোটেল ব্যবসা, ট্যাক্সি সার্ভিস এমনকি ব্যাংক পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ দু'টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যত সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা প্রদানে সেনাবাহিনী যুক্ত হয়েছে, হচ্ছে৷ সরকার বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দিচ্ছে সেনাবাহিনীকে, যেগুলো বেসরকারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও করা সম্ভব৷

ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ এবং প্রতিরক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি দুর্নীতির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না৷ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর গভর্নমেন্ট ডিফেন্স অ্যান্টিকরাপশন ইনডেক্স-২০১৫তে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ‘ব্যান্ড ডি'৷ যার অর্থ হচ্ছে, সামরিক খাতে দুর্নীতির আশঙ্কা অনেক বেশি৷

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের আড়াই লাখ নিয়মিত এবং সাড়ে চার লাখ ‘রিসার্ভ' সদস্যের সামরিক বাহিনীর আদৌ দরকার আছে কিনা – সেটা নিয়েও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী ড. শহিদুল আলম বলেন, ‘‘৪৩ বছর ধরে আমরা যে সামরিক বাহিনীকে লালন করছি, তারা কিন্তু দেশরক্ষায় একবারও নিয়োজিত হয়নি৷ আমাদের শান্তি আছে, সেটা ভালো৷ তবে বিশাল অংক এদের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে৷ যেটা শিক্ষায় যেতে পারতো, স্বাস্থ্যে যেতে পারতো, অন্যান্য খাতে যেতে পারতো৷''

DW Bengali Arafatul Islam
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

সমস্যা হচ্ছে, সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে যে কোনো ধরনের সমালোচনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য কার্যত নিষিদ্ধ৷ মাত্র কিছুদিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর এক অভিযান নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সামরিক বাহিনীর পছন্দ না হওয়ায় দু'টি পত্রিকার উপর অঘোষিত বিজ্ঞাপন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়৷ গত আগস্টে সেই সংবাদ প্রকাশের পর ‘প্রথম আলো' এবং ‘ডেইলি স্টার' পত্রিকা দু'টিতে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো৷ এরকম একটি পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কঠিন৷

বন্ধুরা, আপনারা কি আরাফাতুল ইসলামের সঙ্গে একমত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান