1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাদা পোশাকে গণ-নৈশভোজ!

১৯ জুলাই ২০১৮

প্যারিস শহরে বিস্ময়ের অভাব নেই৷ যেমন আচমকা একটি জায়গায় সাদা পোশাক পরা হাজার হাজার মানুষ টেবিল-চেয়ার পেতে খেতে বসে গেলেন৷ ৩০ বছর আগে এই অভিনব নৈশভোজের প্রথা শুরু হয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/31j8m
Dinner in White in Paris
ছবি: Reuters/B. Tessier

এই নৈশভোজে পোশাক-আশাক নিখুঁত হতে হবে৷ এ বছর ‘সাদা পোশাকের নৈশভোজ'-এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষ প্যারিসে ভোজসভায় যোগ দিয়েছিলেন৷ বিশ্বের খাদ্যরসের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ‘ফ্ল্যাশ মব' ছিল এই ঘটনা৷

প্রায় ১৭ হাজার মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এসেছিলেন বিদেশ থেকে৷ এমন অভিজ্ঞতার ফলে সবাই উচ্ছ্বসিত৷ একজন বলেন. ‘‘সত্যি অভিনব, যেন হঠাৎ আয়োজন করা হয়েছে৷ বন্ধুদের দল৷ সাদা কাপড় পরায় সবাই সবাইকে চেনে৷'' আরেক অংশগ্রহণকারী মনে করেন, ‘‘অসাধারণ! একই জায়গায় এক ধরনের কাপড় পরে এত মানুষের সঙ্গে মজা করার অভিজ্ঞতা চমৎকার৷ অনবদ্য পরিবেশ, অসাধারণ! সবাই একই সূত্রে বাঁধা, সেটাই বড় সুন্দর৷'' সুদূর অ্যামেরিকা থেকে আসা এক নারী বলেন, ‘‘আমি ফিলাডেলফিয়ার বাসিন্দা, সেখানে প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গায় এমন ভোজ হয়৷ এবার সময় বুঝে প্যারিসে এলাম, অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল৷''

অতিথিরা মাত্র এক ঘণ্টা আগে নৈশভোজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারেন৷ খোলা আকাশের নীচে বন্ধু এবং তাদের বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়ার মজাই আলাদা৷ এটাই ‘ল্য দিনে অঁ ব্লঁ' বা সাদা পোশাকে নৈশভোজের আইডিয়া৷ একবার এমন নৈশভোজে যোগ দিলে পরের বার এক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো যায়৷

প্যারিসে গণ-নৈশভোজ

এই সাড়ম্বর পিকনিকের ৩০ বর্ষপূর্তি বেশ জাঁকজমকের মধ্যে পালিত হলো৷ প্যারিসের বাসিন্দা সিরিল গলোভচান দুই দশক ধরে এই নৈশভোজে অংশ নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর একই সময়ে এটা হয়৷ নৈশভোজে পৌঁছনোর সময় আপনি জানেন, যে অনেক মানুষ সাদা পোশাকে সেখানে থাকবেন৷ আচমকা প্যারিস শ্বেতসাগরে রূপান্তরিত হয়৷ সেটাই তো লক্ষ্য৷''

সেন নদীর উপর দুই ঘণ্টা আগের ঘটনা৷ সিরিল ও নৈশভোজে তাঁর সঙ্গীরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত৷ খাবার ছাড়াও নিজেদের পোশাকের দিকে শেষ নজর দিতে হবে৷ বিবর্ণ বা উজ্জ্বল যেমনই হোক না কেন, সাদা রং হলেই চলবে৷ কিন্তু আরও অনেক নীতিমালা মেনে চলতে হয়৷ সিরিল গলোভচান বলেন, ‘‘অনেক নিয়ম রয়েছে৷ সঙ্গে টেবিল আনতে হবে, দুজন মানুষ, চেয়ার, টেবিলক্লথ, সাদা প্লেট ও বাহারি কাচের জিনিসপত্র৷ তবে এমন কড়া নিয়মের কারণেই মানুষ এই ইভেন্টে বিনিয়োগ করেন৷ অন্যদিকে আমিই সবার আগে আমার বাহারি গেলাস ও প্লেটের কথা ভুলে যাই৷ শেষ পর্যন্ত খাওয়া কম হয়৷''

ফ্রঁসোয়া পাসকিয়ে ১৯৮৮ সালে ‘ল্য দিনে অঁ ব্ল' শুরু করেন৷ প্যারিসের এই বাসিন্দা নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছিলেন৷ তাই তিনি একটি পার্কে বন্ধুদের পিকনিকের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ সঙ্গে পরিচিতদেরও আনতে বলেছিলেন৷ ঠিক হয়েছিল, সাদা পোশাকের কারণে তাঁরা একে অপরকে চিনতে পারবেন৷ পরে সেটা বাৎসিক ইভেন্টে পরিণত হয়৷ ফ্রঁসোয়া বলেন, ‘'৩০ বছর আগে সেটা ছিল বন্ধুদের নৈশভোজ, যেমনটা সবাই করে থাকে৷ তারপর তার বিবর্তন শুরু হলো৷ খুব ভালো অভিজ্ঞতার কারণে পরের বছরই অতিথিদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল৷ তারপর সংখ্যা বাড়তেই থাকলো৷''

হনুলুলু, সিডনি অথবা নিউ ইয়র্ক – এখন সারা বিশ্বে এমন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়৷ মানুষ ফরাসি জীবনধারা অনুযায়ী প্রকাশ্যে উৎসব উদযাপন করে৷ ফ্রঁসোয়া পাস্কিয়ে আজও তাঁর হাতে জন্ম নেওয়া এমন ডিনার পার্টিকে ঘিরে উৎসাহ দেখে বিস্মিত হন৷ তিনি বলেন, ‘‘এ যেন অপরিকল্পিতভাবে শিশুর জন্ম দেওয়া৷ আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং আশা করতে হবে, যে শিশুটি খুশিমনে ভালোভাবে বেড়ে উঠবে৷ এ ক্ষেত্রেও ঘটনাটা অনেকটা সে রকমই৷''

হয়তো এই গোপন উপকরণের কারণেই সাদা পোশাকে নৈশভোজ এত সফল হয়ে উঠেছে৷ কয়েক মুহূর্ত উপভোগ করাই এর আসল আনন্দ৷ ফরাসি সংস্কৃতির মধ্যে বাঁচার আনন্দের বিষয়টি সারা বিশ্ব কদর করে৷ সেই অভিজ্ঞতার জন্য প্যারিসের থেকে উপযুক্ত জায়গা থাকতে পারে কি?

গ্যোনা কেটেলস/এসবি