1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের অনেক উপায় আছে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যাংকের হিসাব চাইতে হবে কেন, তার জন্য তো অনেক উপায় চালু আছে৷

https://p.dw.com/p/40mop
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee

ভারতে সাংবাদিক কেন, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, তারকা, শিল্পপতি কারোরই ব্যাংক একাউন্টের কাগজপত্র চাওয়ার খুব একটা দরকার হয় না৷ কারণ, ভারতে অনেক ব্যাংক একাউন্টই আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত৷ তাছাড়া একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের লেনদেন হলে তার তথ্য আয়কর বিভাগের কাছে পৌঁছে যায়৷ তার উপর যারা আয়কর দেন, তারা প্রতিবছর ব্যাংক একাউন্টের পুরো হিসাব জমা দেন৷ আয়করদাতার একাউন্টের পুরো হিসাবকিতাব সরকারের সামনে থাকলে আর কাগজ চাওয়ার কি দরকার? আর কেউ যদি বেআইনি কোনো লেনদেন করে বলে আয়কর বা এনফোর্সমেন্টের সন্দেহ হয়, তা হলে তার জন্য তারা নোটিশ দেয়, বেআইনি অর্থের সন্ধানে আয়কর ও ইডি তল্লাশি চালায়৷ তারা দরকার হলে তখন ব্যাংক একাউন্টের হিসাব-কিতাব চাইতেই পারে৷

ভারতে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অন্য হাজারটা উপায় আছে৷ ফলে তার জন্য সাংবাদিকদের ব্যাংক একাউন্টের হিসাব চাওয়ার কোনো দরকার নেই৷ তার মানে কি সাংবাদিকরা কোনো বোআইনি কাজকারবার করে না বা করতে পারে না? তা কখনো হয় না কি! সমাজের সর্বত্র যদি দুর্নীতি থাকে, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারবিভাগ, পুরসভা, হাসপাতাল, রেল সহ সকলের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে পারে, তা হলে সাংবাদিকরা বাদ যাবে নাকি! তারা তো আর এই সমাজের বাইরে মঙ্গলগ্রহ থেকে আসা মানুষ নয়৷ আর কিছু সাংবাদিকের ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরার সুযোগ আছে৷ তার প্রলোভন আছে৷ তবে সব পেশাতেই যেমন কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত এবং কিছু সৎ মানুষ আছে, সাংবাদিকতাতেও তাই৷ ফলে এনিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ যে দুর্নীতি করবে, সে সমুদ্রের ঢেউ গোনার কাজ দিলেও করবে৷

এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলা যেতে পারে৷ সাংবাদিকতার সূত্রে কলকাতা থেকে দিল্লিতে আসার পর গল্পটা শুনেছিলাম এবং শুনে যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম৷ তবে এর সত্যিমিথ্যে জানি না, তবে এটুকু জানি গল্পটা এখনো চালু আছে৷ দিল্লির কাছাকাছি এক রাজ্যের বেশ নামী সংবাদপত্র সম্পর্কে গল্পটা চালু৷ সেখানে সাংবাদিক নিয়োগের পর প্রেসকার্ড দিয়ে দেয়া হয়৷ তারপর বলা হয়, মাইনেপত্তরের কথা বলার দরকার নেই৷ প্রেস কার্ড দেয়া হয়েছে৷ করে খাও৷ তবে মনে হয়, এটা গল্পই৷ কিন্তু যা রটে, তার কিছুটা বটে, এই থিওরি মেনে নিলে বলতে হয়, ডালের মধ্যে কিছুটা কালা থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ আর এরকম কেউ ধরা পড়লে বা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে, তার কাছে জমা-খরচের হিসাব চাইলেও বা অবাক হওয়ার কী আছে৷

সাংবাদিকতায় একটা প্রবাদ চালু আছে, কাক কখনো কাকের মাংস খায় না, সাংবাদিকরাও সাংবাদিকদের দোষ দেখে না৷ একবারও ভাববেন না, সেই প্রবাদের কারণে আমি সাংবাদিকদের দিকে টেনে কথা বলছি৷ আসল ঘটনা হলো, ভারতে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এতটা গোদা, মান্ধাতার আমলের ব্যবস্থা নেয়ার দরকার নেই৷ তার জন্য হরেক রকম উপায় আছে৷ তার ব্যবহারও আছে৷ তাই ক্ষমতায় থাকা নেতারা সেগুলি ব্যবহার করলেই বিনা হইচইতে পরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কার্যসিদ্ধি করে ফেলতে পারে৷

কংগ্রেস সমানে অভিযোগ করে, বিজেপি সব সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে৷ বিজেপি-র নেতাদের প্রশ্ন করার মতো কেউ নেই, কারণ, বেফাঁস প্রশ্ন করলেই মুসকিল৷ নিয়মিত এই প্রচার শুনে একবারের জন্যেও ভাববেন না যে, বিজেপি নেতারা ভিলেন, বাকিরা সব ধোয়া তুলসি পাতা৷ বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন দলের যে মুখ্যমন্ত্রীরা আছেন, তারা কেউ সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন না, এরকম মনে করলে আপনি ভুল স্বর্গে থাকবেন৷ এক্ষেত্রে আরেকটি প্রবাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে৷ কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, কিন্তু যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ৷ 

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লি
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

ভারতে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রথম পন্থা হলো, সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দুজনেই ঢালাও বিজ্ঞাপন দেয়৷ তার থেকে সংবাদমাধ্যম কোটি কোটি টাকা আয় করে৷ দিল্লির মতো একটা ছোট রাজ্যের কথা ধরা যাক৷ তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত একটি সরকারি জবাব উল্লেখ করে ডেকান হেরাল্ড জানাচ্ছে, ২০১৯-২০ সালে কেজরিওয়াল সরকার প্রচার-বাবদ ১৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা খরচ করেছে৷ দিল্লি একটা নিছক উদাহরণ মাত্র৷ প্রতিটি রাজ্যই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে প্রচারে৷  তার অনেকটাই পায় সংবাদমাধ্যম৷ ফলে বছরে কোটি কোটি টাকার আয় যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেই সংবাদপত্র বা চ্যানেল চলবে কী করে বা তার লাভই বা হবে কী করে? আর সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন পাবে, আবার লাগাতার বিরুদ্ধে লিখবে, সে আবার হয় নাকি? ফলে সংবাদমাধ্যম ঠিক করুক, সে কী করবে৷ বিজ্ঞাপন দরকার না দরকার নেই৷

তারপরেও যদি কোনো সাংবাদিক দুষ্টুমি করে, তা হলে সংবাদপত্রের মালিক আছে৷ এখন তো সংবাদমাধ্যমের মালিক অধিকাংশই শিল্পপতি৷ সংবাদপত্র, চ্যানেল বা ওয়েবসাইট তাদের মূল ব্যবসা নয়৷ আর অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ হলো, শিল্পপতিরা সরকারের সঙ্গে ঝামেলায় যায় না৷ জলে বাস করে কুমীরের সঙ্গে ঝগড়া করে না৷ তাই দুষ্টু সাংবাদিক না শুধরালে তাকে ভাগিয়ে দেয়া কী আর শক্ত ব্যাপার৷

আর মালিকও যদি না শোনে? তখন মালিকের বিরুদ্ধে তদন্ত কর, ব্যবস্থা নাও৷ প্রয়োজনে দুষ্টু সাংবাদিককে আইন ভাঙার জন্য গ্রেপ্তার করাও যেতে পারে৷ এরকমও তো হয়৷ হয়েই থাকে৷ এনিয়ে অবাক হওয়ারই বা কী আছে! উপমহাদেশে স্বাধীনতার সংজ্ঞা আলাদা৷ এটা বুঝে নিলেই আর কোনো ধন্ধ থাকবে না৷  তখন সমুখে শুধু শান্তি পারাবার৷