1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সহমর্মিতা ও শান্তির আহ্বান জানালেন দালাই লামা

৯ নভেম্বর ২০০৯

সবাইকে ‘সহমর্মিতা আর শান্তির’ আহ্বান জানিয়ে সোমবার অরুণাচলের তাওয়াং বৌদ্ধমঠের ধর্মসভার সূচনা করেন তিব্বতি জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা৷

https://p.dw.com/p/KS4U
ছবি: AP

চীনের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে তার এ সফর গত ক'দিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে৷ এদিকে ধর্মগুরুকে কাছ থেকে দেখা আর তাঁর বাণী শুনতে আসা প্রায় ৩০ হাজার ভক্ত-অনুসারীর পদচারণায় মুখর তাওয়াং পরিণত হয়েছে তিব্বতি বৌদ্ধদের মিলনমেলায়৷

তিনদিনের এ ধর্মসভার সূচনা ভাষণে দালাই লামা বলেন,‘‘সহমর্মিতা আর শান্তি শব্দদুটো সবারই মনে রাখা দরকার৷''

চীনের অভিযোগ নাকচ দালাই লামার

অরুণাচলকে নিজেদের ভূমি বলে দাবি করে আসা চীন অভিযোগ করছে সপ্তাহব্যাপী এ সফরের মাধ্যমে নতুন দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা উস্কে দিচ্ছেন দালাই লামা৷ কিন্তু সফরের শুরুতে গতকাল তাওয়াং পৌঁছেই চীনবিরোধী উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে দেন তিনি৷ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৭৪ বছর বয়সি দালাই লামা সাংবাদিকদের বলেন,‘‘আমার তাওয়াং সফর অরাজনৈতিক৷''

নির্বাসিত এ তিব্বতি নেতা আরও বলেন,‘‘চীনের জন্য এটাই খুব স্বাভাবিক যে, আমি যেখানেই যাই না কেন তারা আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবে৷''

তিনি বলেন,‘‘ চীনের কম্যুনিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে এটা বলা পুরোপুরি ভিত্তিহীন যে, আমি একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন উৎসাহিত করছি৷''

গণমাধ্যমকে আটকাতে চেয়েছে ভারত

অরুণাচলে দালাই লামার কথাবার্তা ভারতের পত্র-পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় বড় হরফে ছাপা হয়েছে৷ তবে, দৃশ্যতই প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে বিরোধপূর্ণ এ সীমান্ত অঞ্চলে দালাই লামার সফর কভার করা থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের আটকে দিতে সচেষ্ট ভারত৷ শুধু তাই নয় দালাই লামাকে যেন এ সফর সম্পর্কে সরাসরি কোনো প্রশ্ন করা না হয় সেজন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে সোমবার অনানুষ্ঠানিকভাবে বলে দিয়েছেন অরুণাচল প্রাদেশিক কর্মকর্তারা৷

দালাই লামার স্মৃতিবিজড়িত তাওয়াং

৪০০ বছরের পুরনো এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তিব্বতি বৌদ্ধমঠ তাওয়াং দালাই লামার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে৷ তিব্বত থেকে পালিয়ে আসার সময় এই অরুণাচল দিয়েই ভারতে ঢোকেন তিনি৷ তাঁর কয়েক দশকের নির্বাসিত জীবনের শুরু হয়েছিল এই তাওয়াং মঠেই৷

দালাই লামা নিজেই রোববার সবাইকে সেকথা মনে করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন,‘‘এখানে আমার অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে৷''

‘‘১৯৫৯ সালে চীন থেকে পালিয়ে আসার সময় আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিলাম৷''

তিনি আরও বলেন,‘‘ চীনারা ১৯৫৯ সালে আমাদের সম্মতি আদায় করতে পারেনি, কিন্তু আমি যেই ভারতে চলে এলাম তারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করল৷''

সফরের সময়টাই বেইজিংকে উস্কে থাকতে পারে

তাওয়াং-এ এটা দালাই লামার প্রথম ফিরতি সফর নয়৷ ২০০৩ সালে তিনি দু'বার অরুণাচল প্রদেশে আসেন৷ তার আগে তিনি ১৯৯৭ এবং ১৯৮৩ সালে অরুণাচল প্রদেশ সফর করেছেন৷ কিন্তু হিমালয় সীমান্ত নিয়ে চীন-ভারতের বিরোধ নতুন করে আলোচনায় আসার পরপরই চীনের কাছে তিব্বতি বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত দালাই লামার এ সফরের কারণে তারা রুষ্ট হয়ে থাকতে পারে৷

গত মাসে এক নির্বাচনী প্রচারসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অরুণাচলে আসা নিয়ে বেইজিংয়ের আকস্মিক ও তীব্র প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবেশী দেশদুটির মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে৷ চীন অরুণাচলের পূর্ব সীমান্তে প্রায় ৯০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজের বলে দাবি করে থাকে৷ ১৯৬২ সালে স্বল্পকালীন যুদ্ধেও লিপ্ত হয় দু'দেশ৷ সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর এখন সেখানে আবার উভয় পক্ষেই সেনা তৎপরতা এবং ছোটোখাটো সীমান্ত লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷

তিব্বতি বৌদ্ধদের মিলনমেলা

হিমালয়ের পাদদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিটার উচ্চতায় (১১,৪০০ ফুট) তাওয়াং মঠে দালাই লামার এ পুনরাগমন বহু দূর দূরান্তের বৌদ্ধদেরও আকৃষ্ট করেছে৷ অনেকেই এসেছেন তাকে সামনে থেকে এক নজর নিজের চোখে দেখতে৷ তার আশীর্বাদ নিতে৷ শের্বু নামের তরুণ এক ভিক্ষুও সেভাবেই তার অনুভূতির কথা বলছিলেন, ‘‘দালাই লামাকে এতো কাছ থেকে দেখতে পাওয়া সারা জীবনের জন্য একটা বড় অভিজ্ঞতা৷'' তিনি বলেন, ‘‘সম্ভাষণের জবাবে তিনি আমাদের দিকে ফিরতি হাত নাড়ছিলেন এবং আমি মনে করি এটা আমার এবং এখানে সমবেত মানুষদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ৷

তাওয়াং মঠের কাছে বিশাল পোলোমাঠে তিনদিনের ধর্মসভা শুরুর আগে সোমবার দালাই লামা সেখানে নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করেন৷ তিনি নিজে এই হাসপাতালের জন্য ২০ লাখ রূপির তহবিল দিয়েছেন৷

তাওয়াংয়ে দালাই লামার রাজসিক অভ্যর্থনা তার সাতদিনের এ সফরেরর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে চীনকে আরও সন্দিহান করে তুলতে পারে৷ সম্প্রতি দালাই লামার স্বাস্থ্যগত সমস্যা তার উত্তরসূরি মনোনয়ন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার জন্ম দিয়েছে৷ চীন অবশ্যই নিজের পছন্দের কথাই ভাববে৷ কিন্তু দালাই লামা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তাঁর উত্তরসূরি তিব্বতের বাইরে থেকেও আসতে পারেন৷ আর সেক্ষেত্রে তিব্বতি সংস্কৃতির সমৃদ্ধভূমি অরুণাচল অবশ্যই সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রতিযোগী নিয়ে আবির্ভূত হতে পারে৷

প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক