1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারের হুঁশিয়ারি, পাল্টা হুঁশিয়ারি হেফাজতের

সমীর কুমার দে
২৮ মার্চ ২০২১

হেফাজতের আন্দোলন ঘিরে ‘ধর্মীয় উন্মাদনা ও উচ্ছৃঙ্খলতা’ বন্ধ না করলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলে হুঁশিয়ার করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ অন্যদিকে, মাদ্রাসায় ‘হামলা ও জুলুম’ বন্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বাবুনগরী৷

https://p.dw.com/p/3rIwN
হেফাজতের হরতালের সময় তৎপর ছিল নিরাপত্তা বাহিনীছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

হেফাজতে ইসলামের গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি না দিলে পাল্টা কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সংগঠনটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী৷

এদিকে, হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম দাবি করেছেন, গত তিন দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাদের ১৭ জন নেতাকর্মী মারা গেছে৷ তবে, সরকারি তরফ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে৷ নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম নতুন করে দোয়া ও বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে৷ সোমবার হবে দোয়া, এরপর শুক্রবার সারা দেশে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে৷ 

‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে’

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ঢাকায় অবস্থান করা নেতারা হিসেব করেই ১৭ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন৷ এর মধ্যে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারা গেছে ১২ জন৷''

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রবিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছিল হেফাজত৷ কর্মসূচি শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহাসচিব বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের ১২ জন নিহত হয়েছে৷ এছাড়া চট্টগ্রামে চারজন ও ঢাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে৷''

বিপুল সংখ্যক কর্মীকে গ্রেফতারের কথাও বলেন তিনি৷ তবে সাংবাদিক সম্মেলনে নিহতদের পরিচয় উল্লেখ করেননি তিনি৷

এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত আলী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘গত তিন দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর মধ্যে শুক্রবার একজন, শনিবার পাঁচজন ও রবিবার দুইজন৷'' 

তবে, ডেইলি স্টার পত্রিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মাসুক হৃদয় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘রবিবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে৷ নিহত তিনজনের লাশ তিনি দেখেছেন৷''

তার হিসেবে গত তিন দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে৷

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘‘শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷'' এছাড়া, রবিবার হরতাল চলাকালে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকায় সংঘর্ষের সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে হেফাজত দাবি করলেও স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেনি৷ সব মিলিয়ে সংঘর্ষে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত করেছে৷

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় গত তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, সংঘাত ও প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গত দুইদিন যাবত কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল এবং আশুগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে৷ যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়িঘর, প্রেসক্লাবসহ জানমালের ক্ষতি করে যাচ্ছে৷ এ জাতীয় ক্ষতিসহ সকল প্রকার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানানো হচ্ছে৷ অন্যথায়, সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে৷'' 

‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের ১২ জন নিহত হয়েছে’

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মাসুক হৃদয় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আবারও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন'৷ রবিবার দুপুরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র স্মৃতিধারক প্রতিষ্ঠানটিতে আগুন দেয় হরতাল সমর্থনকারী হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা৷ এসময় তারা পুরো সঙ্গীতাঙ্গনে ভাঙচুর চালায়৷ একটি জাদুঘর, তিনটি ক্লাসরুম, সরোদ মঞ্চ, প্রশাসনিক কক্ষ ও স্টোররুমে থাকা বাদ্যযন্ত্র, চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়৷

এদিকে, মুন্সিগঞ্জে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সিরাজদিখান থানার ওসি এসএম জালাল উদ্দিন গুরুতর আহত হয়েছেন৷ সংকাটপন্ন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ এছাড়াও সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷

সমীর কুমার দে (ঢাকা)