সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তপ্ত নিকারাগুয়া
২২ নভেম্বর ২০০৯রবিবার দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৫০ হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হয় রাজধানীতে৷ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল স্বৈরাচার বিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন৷ বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল 'গণতন্ত্র চাই, স্বৈরতন্ত্র চাই না'৷ একটি ব্যানারে দেখা গেছে 'আমরা সহিংসতা চাই না' - এই স্লোগান৷ বিক্ষোভকারীদের অনেকেরই হাতে ছিল নীল এবং সাদা রঙের জাতীয় পতাকা৷
''এটা গণতন্ত্রের বিজয়'' - গ্রানেরা
রবিবারের বিক্ষোভে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের সাথে যোগ দিয়েছিল বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, সুশীল সমাজ এবং শক্তিশালী ক্যাথলিক গির্জার প্রতিনিধিবৃন্দ৷ রাজপথে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আর্নল্ড অ্যালেম্যান এবং বক্সিং-এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান অ্যালেক্সিস অ্যারগুয়েলো৷ মূলত প্রেসিডেন্ট ওরটেগার পুন-নির্বাচনের পরিকল্পনার বিরোধিতায় সেখানে বিক্ষোভ চলছে৷ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন 'নিকারাগুয়ার জন্য আন্দোলন' এর পরিচালক ভিয়োলেটা গ্রানেরা বলেন, ''এটা গণতন্ত্রের বিজয়৷'' তিনি প্রেসিডেন্ট ওরটেগার বিরুদ্ধে 'ক্ষমতার অপব্যবহার' এবং 'সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহকে পঙ্গু করে ফেলা'র অভিযোগ আনেন৷
প্রেসিডেন্ট ওরটেগার সমর্থকদেরও পাল্টা কর্মসূচি
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ওরটেগার হাজার হাজার সমর্থকও রবিবার মিছিল ও শোভাযাত্রাসহ রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে৷ ফলে পরিস্থিতি আরো সংঘাতপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কায় সারা শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল৷ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দাঙ্গা পুলিশসহ সাত সহস্রাধিক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল৷ বড় ধরনের কোন সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও সারাদিনই রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ এবং থমথমে৷ বিকেলের দিকে প্রাদেশিক শহর লিওন এবং মাটাগালপায় সরকার বিরোধীদের উপর সরকারপন্থী স্যান্ডিনিস্টা দলের সমর্থকদের হামলায় ১২ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলীয় মুখপাত্র লিওনেল টেলার৷ আহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্যও রয়েছে৷
নিজ সমর্থকদের অসহিংস কর্মসূচির আহ্বান প্রেসিডেন্ট ওরটেগার
রবিবার সরকার সমর্থকদের সমাবেশে প্রেসিডেন্ট ওরটেগা নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের অসহিংস কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান৷ বিরোধীদের উদ্দেশ্যে ওরটেগা বলেন, ''আমরা এটা আশা করি না যে, আপনারা আমাদের ভালোবাসুন৷ কিন্তু আপনাদের এটা বিবেচনা করার আহ্বান জানাই যে, অস্থিতিশীলতা এবং সংঘর্ষ কোন কিছু সমাধানের সঠিক পথ নয়৷''
প্রসঙ্গত, ওরটেগার নেতৃত্বেই ১৯৭৯ সালে স্বৈরাচার অ্যানাসটাসিও সমোজাকে উৎখাতের মাধ্যমে সেখানকার দীর্ঘ ৪৫ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটে৷ বামপন্থী ওরটেগা ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন৷ পরে ২০০৬ সালে তিনি পুননির্বাচিত হন৷ ওরটেগা ২০১১ সালে পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছেন৷ এমনকি সুপ্রিম কোর্ট থেকেও তাঁর পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে গত মাসে৷ এরপর থেকেই ওরটেগা বিরোধী ক্ষোভ আরো প্রকট হয়ে উঠেছে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার