সমুদ্র তলদেশের বিস্ময়কর জগৎ
ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের গভীর তলদেশে আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ বেশ কিছু ছবিও তুলে এনেছেন তাঁরা, যেগুলো রীতিমতো বিস্ময়কর এক জগতের সন্ধান দিচ্ছে৷
প্যাসকাদেরো অববাহিকার বিষ্ময়
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৭০০ মিটার বা ১২,০০০ ফুট গভীরের একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ৷ সেখান থেকে ২৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তরল লাভা বেরিয়ে আসছে৷ কয়েক হাজার বছর ধরে সেখানে এই প্রক্রিয়া চলছে৷ মেক্সিকোর লা পাজ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পূর্বে ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের প্যাসকাদেরো অববাহিকায় এই বিস্ময়কর জায়গাটির অবস্থান৷
বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ২০১৫ সালে প্যাসকাদেরো অববাহিকায় এই বিচিত্র জগতের খোঁজ পান৷ কয়েক মাস আগে সেখানে যান গবেষকদের একটি দল৷ তারা সমুদ্রের গভীরের সেই স্থানটির মানচিত্র তৈরি করেছেন, ভিডিও করেছেন আর সেই সঙ্গে বেশ কিছু পাথর আর প্রাণীর নমুনাও নিয়ে এসেছেন৷
ব্যাকটেরিয়ার রাজ্য
লাভা উদগীরণের কারণে এখানে সমুদ্রের তলদেশ উষ্ণ থাকে৷ সেখানকার মাটিতে আছে হাইড্রোজেন সালফাইড মিশ্রিত এক ধরণের রাসায়নিক, যা মানুষের জন্য বিষাক্ত৷ কিন্তু কিছু ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকা ও বংশ বিস্তারের জন্য এই পরিবেশই উপযুক্ত৷ ছবিতে কার্পেটের মতো যেই আস্তরণটি দেখা যাচ্ছে, এটি মূলত ব্যাকটেরিয়ারই একটি আস্তানা৷
তলদেশের বাসিন্দা
বিভিন্ন সামুদ্রিক কীট-পতঙ্গের আস্তানা রয়েছে আগ্নেয়গিরির নিষ্ক্রিয় জ্বালামুখ ঘিরে৷ তারই একটি এটি৷ ছবিতে লাল রংয়ের অমেরুদন্ডী কিছু অনুজীব দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭০ সালে গ্যালাপাগোস দ্বীপে প্রথম এদের সন্ধান মিলে৷ প্যাসকাদেরোর সব জায়গাতেই এমন প্রাণীর আধিক্য দেখে বিষ্মিত হয়েছেন গবেষকরা৷
ব্যাকটেরিয়ায় বেঁচে থাকা
এগুলো এক ধরনের সামুদ্রিক জীব, যার কোনো মুখ বা হজম প্রক্রিয়া নেই৷ তার বদলে কমলা-লাল রংয়ের পালকের মাধ্যমে তারা হাইড্রোজেন সালফাইড ও অক্সিজেন শুষে নেয়৷ সেটি তারা শরীরের একটি অংশে জমা করে, যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পরিপূর্ণ৷ তারপর সেই ব্যাকটেরিয়াই তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়৷
ঝগড়াটে কীট
প্যাসকাদেরোতে এমন সব প্রাণীর খোঁজও পেয়েছেন গবেষকরা, যাদের আগে কখনও দেখা যায়নি৷ যেমন, এই নীলচে আভার কীটটি৷ এর গায়ের রং আলোয় প্রতিফলিত হয়৷ গবেষকরা প্রাণীটিকে একটি আরেকটির সাথে মারামারি করতে দেখেছেন৷
গোলাপি মোজা
এই অদ্ভুত জীবটিকে মোজা পতঙ্গ হিসেবেও অভিহিত করেন বিজ্ঞানীরা৷ বাস্তবেও তাই৷ এটি অনেকটা থলের মতো, যার নীচের দিকে মুখ রয়েছে৷ সমুদ্রের তলের মাটি ধরে খুব ধীরে এটি চলাফেরা করে৷ সম্ভবত ঝিনুক খেয়ে জীবন ধারণ করে, কেননা, এর শরীরে ঝিনুকের ডিএনএ পাওয়া গেছে৷ যদিও কীভাবে খাবার শিকার করে, সেটি এখনো অজানা৷
আগন্তুক
অগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ভেতরেই বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক জীব বাস করে৷ মাছ আর অক্টোপাসের মতো প্রাণী জলেই ঘুরে বেড়া্য়৷ কখনো কখনো ছবিতে থাকা এমন প্রাণীরও দেখা মেলে৷ দেখতে জেলি ফিশের মতো হলেও এরা ভিন্ন ধরনের এক বিষাক্ত প্রাণী৷
পানির নীচে হ্রদ
প্রাণী আর পাথরের বাইরে প্যাসকাদেরোতে অনেক কিছুই দেখার আছে৷ যেমন, হ্রদের মতো এই জায়গাটি৷ গরম লাভা যখন পাথরের নীচে কিংবা গুহার ভেতরে আটকা পড়ে, তখন সেটি অনেকটা হ্রদের মতোই দেখায়৷
সমুদ্রের উপরে গবেষণাগার
মূলত জাহাজ থেকে একটি রোবট পাঠিয়ে এসব ছবি তুলে এনেছেন বিজ্ঞানীরা৷ রোবটটি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানকার ভিডিও আর তথ্য-উপাত্ত পাঠাতে পারে৷ আর এভাবেই এখানকার সমুদ্রের তলদেশের বিস্ময়কর জগতে কী ঘটছে সেটি সরাসরি দেখতে পান গবেষকরা৷