1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমকামী-ট্রান্সজেন্ডারদের পাশে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট

১৬ জুন ২০২০

এলজিবিটি কর্মীদের চাকরি থেকে তাড়ানো যাবে না। যুগান্তকারী রায় দিল মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু বাস্তবে কি তা মানা হবে? প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারীরা।

https://p.dw.com/p/3dpql
ছবি: Getty Images/AFP/R. Atanasovski

ঐতিহাসিক রায় দিল অ্যামেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। যে রায়কে নিজেদের জয় বলেই মনে করছেন গোটা বিশ্বের এলজিবিটিকিউ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সমকামী বা ট্রান্সজেন্ডার হওয়া কোনও অপরাধ নয়। ফলে চাকরি ক্ষেত্রে তাঁদের সমানিধিকার যাতে বজায় থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সমকামী বা ট্রান্সজেন্ডার বলে কাউকে চাকরি থেকে তাড়ানোও যাবে না। যাঁদের তাড়ানো হয়েছে, তাঁদের সসম্মানে কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে।

দীর্ঘ দিন ধরেই অ্যামেরিকার সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা চলছিল। সেখানে ট্রাম্প সরকার এবং কোনও কোনও সংস্থার কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, ১৯৬৪ সালে সিভিল রাইটস অ্যাক্ট তৈরি হয়েছিল। সেখানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও সমকামী বা ট্রান্সজেন্ডারের কোনও উল্লেখ নেই। বস্তুত, সে সময় সমকামিতা কিংবা লিঙ্গ পরিবর্তন অ্যামেরিকায় বৈধও ছিল না। ফলে সেই আইনকে সামনে রেখে সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকারের যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তা অবান্তর। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নেইল গরসাচ এই যুক্তি মানেননি। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৬৪ সালের আইনে স্পষ্ট বলা আছে, লিঙ্গ বৈষম্য করা যাবে না। পুরুষ এবং নারী যেমন নির্দিষ্ট দু'টি লিঙ্গ, তেমনই সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারও তৃতীয় লিঙ্গ। ফলে '৬৪ সালের আইন মেনেই কর্মক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের সমানাধিকার রক্ষা করা সম্ভব।

এলজিবিটিকিউ আন্দোলনকারীদের জন্য জুন মাস 'প্রাইড মান্থ'। ১৯৬০ এর দশকে নিউ ইয়র্কের ডাউন টাউনে একটি গে বারে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। যা ঘিরে দীর্ঘ এক মাস ধরে পুলিশের সঙ্গে সমকামী আন্দোলনকারীদের রীতিমতো সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই ঘটনা মনে রেখেই জুন মাসটিকে প্রাইড মান্থ হিসেবে উদযাপন করা হয়। গোটা বিশ্বের এলজিবিটিকিউ কর্মীরাই বলছেন প্রাইড মাসে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

মিয়ানমারে এলজিবিটি প্রাইড প্যারেড

তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। শুধু অ্যামেরিকা নয়, অন্য দেশের পরিপ্রেক্ষিতেও যে প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় এলজিবিটিকিউ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনুষ্টুপ রায়। মার্কিন আদালতের রায়ে তিনি খুশি। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, কোর্ট রায় দিলে বা আইনের বদল হলেই কি সব কিছুর পরিবর্তন হয়? কিছুদিন আগেই ভারতীয় পেনাল কোড থেকে বাতিল হয়েছে ৩৭৭ অনুচ্ছেদ। ব্রিটিশ আমলের এই আইনে স্পষ্ট বলা ছিল, সমকামিতা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মাত্র কিছু দিন আগে সেই আইন বাতিল হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি সত্যিই সমকামী বা ট্রান্সজেন্ডাররা প্রাপ্য সম্মান পান?

অনুষ্টুপের বক্তব্য, ''এখনও একজন ট্রান্সজেন্ডার চাকরি পান না। সে তিনি যতই শিক্ষিত হোন। এখনও অফিসে, রাস্তায় সমকামীদের নিয়ে রসিকতা করা হয়। তবে কোনও কোনও অফিসে সমকামীদের জন্য আলাদা সেল তৈরি হয়েছে। সেখানে তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারেন।''

সুজি ভৌমিক ট্রান্সজেন্ডার এবং উচ্চশিক্ষিত। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''আইনের বদল অবশ্যই জরুরি। মার্কিন আদালতের রায় আমাদের সকলের জয়। কিন্তু দুঃখজনক সত্যি হলো, এরপরেও ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার অপরাধে মানুষের চাকরি যাবে। অথবা ট্রান্সজেন্ডাররা চাকরিই পাবেন না। এটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। সমাজের মানসিকতা না বদলালে কোনও আইনই কিছু করতে পারবে না।''

এসজি/জিএইচ (রয়চার্স, এপি, এএফপি)