‘‘সৌদিতে বাংলাদেশি নারীদের রক্ষার উপায় হলো বাংলাদেশ থেকে কোনো নারী শ্রমিক না পাঠানো৷ শুধু সৌদিতেই না, মধ্যপ্রাচ্যর কোনো দেশেই নারী শ্রমিক পাঠানো ঠিক নয়৷'' ধর্ষণের হাত থেকে বাংলাদেশি নারীদের রক্ষা করার উপায় সম্পর্কে এই পরামর্শ দিয়েছেন পাঠক হাদেয়ুল আলম৷
অন্যদিকে যেসব নারী শ্রমিককে উপার্জনের জন্য সৌদি আরবে যেতে হয়,তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে হয়তো তাঁদের আর বিদেশে যেতে হবে না৷ এক্ষেত্রে পাঠক রুবেল অনেকটা নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ সরকার তা করবে না৷ তাঁর প্রশ্ন, বাংলাদেশ থেকে কেন শুধু গৃহকর্মী পাঠানো হয় সৌদি আরবে? রুবেল মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে সেবিকার মতো শিক্ষিত নারীকর্মী পাঠানো যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে৷ আর তাহলে হয়তো ধর্ষণের মতো জঘন্য ব্যাপার আর ঘটবে না৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
পাঁচ কোটি ৩০ লক্ষ
২০১৩ সালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আইএলও-র এক প্রতিবেদন বলছে, সারা বিশ্বে গৃহকর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫৩ মিলিয়ন৷ এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই নারী৷ তবে প্রকৃত সংখ্যাটি যে আরও কয়েক মিলিয়ন বেশি হতে পারে, সে কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এদিকে ১৫ বছরের কমবয়সি শিশু গৃহকর্মীদের সংখ্যা আইএলও-র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি – ২০০৮ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৭৪ লক্ষ৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
আইনের বাইরে
আইএলও-র প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের গৃহকর্মীদের প্রায় ৩০ শতাংশই শ্রম আইনের সুবিধাবঞ্চিত৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
সাপ্তাহিক ছুটি
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক (৪৫ শতাংশ) গৃহকর্মী সাপ্তাহিক ছুটি পান না৷ তাছাড়া তাঁদের এমন কোনো বার্ষিক ছুটি নেই, যার জন্য তাঁদের অর্থ প্রাপ্য (পেইড লিভ)৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
প্রসূতি সুরক্ষা
প্রতি তিনজনের একজন গৃহকর্মী এই সুবিধা পায় না বলে জানিয়েছে আইএলও৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার!
গৃহকর্মী মানেই যেন কম টাকা দিয়ে বেশি ঘণ্টা কাজ করানো৷ এভাবে গৃহকর্মীদের প্রতারিত করে তাঁদের নিয়োগদাতারা অবৈধভাবে বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে বলে জানিয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স ফেডারেশন’৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
‘কাফালা’ যেন দাসপ্রথার অন্য রূপ
গাল্ফ দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা থাকার কারণে গরিব দেশ থেকে সেখানে যাওয়া গৃহকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তাঁদের নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না৷ কারণ কাফালা ব্যবস্থার কারণে নির্যাতিতরা চাইলেও নিয়োগদাতার ছাড়পত্র ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারেন না৷ ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন’ এই অবস্থাকে দাসত্বের সঙ্গে তুলনা করেছে৷ আইএলও-র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর সংখ্যা প্রায় ২১ লক্ষ৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
হংকংয়ে গৃহকর্মীদের অবস্থা
তিন হাজার গৃহকর্মীর উপর চালানো এক জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৮ শতাংশ বলেছে, তাঁদের মৌখিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে৷ ১৮ শতাংশ তাঁদের উপর শারীরিক নির্যাতনের কথা বলেছে৷ আর যৌন হয়রানির কথা জানিয়েছে ৬ শতাংশ৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
বাড়ি তো নয়, যেন কারাগার!
উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়াতেও ভালো নেই গৃহকর্মীরা৷ ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদনে সেখানে গৃহকর্মীদের সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা কাজ করানো, বেতন না দেয়া ও শারীরিক নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়িগুলোকে ‘কারাগার’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷
-
কেমন আছে অন্য দেশের গৃহকর্মীরা?
একা বাড়ির বাইরে নয়
না, ছোট্ট শিশুদের কথা বলা হচ্ছে না৷ ইংল্যান্ডের মতো দেশে প্রায় ৬০ শতাংশ গৃহকর্মীদের একা বাড়ির বাইরে যেতে দেয়া হয় না বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘কালায়ন’৷
লেখক: জাহিদুল হক
তবে ডয়চে ভেলের পাঠক দীপক দে লিখেছেন, ‘‘এত কিছু সত্বেও দেখি কিছু মানুষের অন্ধ ভালোবাসা আছে সৌদির প্রতি৷''
পাঠক সৌরভ অবশ্য ভিন্নমত পোষন করেন৷তাঁর ভাষায়, ‘‘সব দেশেই খারাপ মানুষ আছে, তাই বলে এই দেশকে প্রতি ঘৃণা করা উচিত? ইন্ডিয়ায় তো এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয় আছে, রাস্তাঘাটে মেয়েরা ধর্ষিত হয়৷''
পাঠক খুরশীদ আলম মনে করেন, সৌদিতে বাংলাদেশি নারীদের রক্ষার উপায় হলো, বাংলাদেশ থেকে কোনো নারী শ্রমিক সে দেশে না পাঠানো৷
আবদুল আলীম দুঃখ করে লিখেছেন, যাঁরা তাঁদের মা, বোনকে সৌদি আরবে পাঠায়, সে পরিবারের পুরুষগুলো নিশ্চয়ই পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে অক্ষম৷
আর আশিক মনে করেন,‘‘দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এগুলো সবাই জানে, তারপরও নারীরা সৌদি আরবে যাচ্ছে৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী