1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্দেশখালির মানুষকে টাকা ফেরত দেয়া শুরু তৃণমূলের

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সন্দেশখালিতে মানুষের কাছ থেকে জোর করে জমি নিয়ে, তা ভেড়ি বানিয়ে ইজারার ও লিজের টাকা দেননি শাহজাহান, শিবু হাজরারা।

https://p.dw.com/p/4cYyA
সন্দেশখালিতে বিক্ষোভরত নারীরা।
সন্দেশখালিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া শুরু করলো তৃণমূল। ছবি: Subrata Goswami/DW

সেই টাকাই রোববার থেকে ফেরত দেয়া শুরু করলো তৃণমূল। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ''সন্দেশখালিতে কেউ কিছু নিয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া হবে। মনে রাখবেন, আমি যা বলি, তা করি।''

রোববার সন্দেশখালি যান তিন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক. সুজিত বসু ও বীরবাহু হাঁসদা। তারা মানুষকে তাদের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দেন। তার আগে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার কী প্রাপ্য তা জেনে আসেন। তারপর টাকা দেয়া শুরু হয়।

কোথা থেকে টাকা আসছে?

পার্থ ভৌমিক বলেছেন, ''চাঁদা করে টাকা তুলে সেই অর্থ ফেরত দেয়া হচ্ছে। রোববার ১০ জনকে টাকা দেয়া হয়েছে। বাকিদেরও দেয়া হবে। ১৭০ জন টাকা পাবেন। কেউ এক হাজার, কেউ দুই হাজার এরকম করে টাকা পাবেন। আমরা দলের তরফে দুই টাকা, পাঁচ টাকা করে চাঁদা তুলে সেই অর্থ ফেরত দেব।''

মন্ত্রীদের হাত থেকে টাকা পেয়েছেন মায়া চক্রবর্তী। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ''মন্ত্রীরা এসে টাকা দিয়ে গেছেন। অনেকেই টাকা পেয়েছেন। ওরা এসে কাগজপত্র দেখে টাকা দিয়ে গেছে। ওরা বলেছে, এরপর জমি মেপে যা পাওনা হয়, সেটাও দেয়া হবে।''

দোকানে দোকানে বাকির অভিযোগ

শুধু জমি নিয়েই অভিযোগ নয়, মূর্তি নিয়ে টাকা দেয়া হয়নি, মুদির দোকান, রোল-চাউমিনের দোকান বা শাড়ির দোকানে হাজার হাজার টাকা বাকি রাখা আছে। টিভি৯-এর রিপোর্ট বলছে, মৃৎশিল্পীর কাছে ২৫ হাজার টাকা, শাড়ির দোকানের ১৩ বাজার টাকা, রোলের দোকানে প্রায় তিন হাজার টাকা, মুদির দোকান থেকে এক লাখ ৫৬ হাজার টাকার জিনিস নিয়ে একটা পয়সাও দেননি শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা। এমনকী চিংড়ির এজেন্টদের প্রাপ্য টাকাও দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এখন এলাকায় শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে মানুষ গিয়ে অভিযোগ করছেন। একের পর এক অভিযোগ সেখানে জমা পড়ছে।

ভাইরাল ভিডিও

এরই মধ্যে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ডিডাব্লিউ সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে ওই ভিডিও নিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক আলোড়ন দেখা দিয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এক নেত্রী স্থানীয় এক নারীকে বলছেন, ''তৃণমূল টাকা পাইয়ে দিচ্ছে। এবার সমর্থন করবেন তো।''

বিজেপি মুখপাত্র ও সদ্য রাজ্যসভার টিকিট পাওয়া শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''সন্দেশখালিতে যা হচ্ছে, তা জনরোষের প্রতিক্রিয়ায় হচ্ছে। তৃণমূল যদি ভাবে এভাবে সমর্থন আদায় করে নেবে, তাহলে মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।'' বিজেপি নেত্রী ও অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু বলেছেন, ''তৃণমূল ভুল করছে। জনরোষকে কখনো পাঁচশ বা এক হাজার টাকা দিয়ে কেনা যায় না।''

সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ''তৃণমূল গণতন্ত্রকে আর কত লজ্জায় ফেলবে। তারা চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়েছে। এখন তারাই টাকা দিয়ে সমর্থন চাইছে।''

তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী সুজিত বসু বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

সন্দেশখালিতে জাতীয় নারী কমিশন

ভারতের জাতীয় নারী কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা সোমবার সন্দেশখালি গেছেন। তিনি সেই নারীর সঙ্গে কথা বলছেন, যাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি নির্যাতিতার সঙ্গে, তার পরিবারের মানুষদের সঙ্গে কথা বলছেন।

সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাড় হিম করা যত অভিযোগ

রেখার বক্তব্য, ''সকলের মন থেকে ভয় দূর করতে হবে। একজন নারী নির্যাতনের কথা বলেছেন। অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলে বাকিদেরও ভয় কাটবে। আরো নারী তখন সামনে এসে তাদের কথা জানাবেন।''

হামলার অভিযোগ

সন্দেশখালিতে গোপনে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেয়া নারীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী জানিয়েছেন, পুলিশের পোশাক পরে কয়েকজন বাড়িতে হামলা করেছে। পুলিশের দাবি, এমন কোনো ঘটনার কথা তারা জানে না।

ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করা হয়।

সংসদীয় কমিটিতে ডাকা নিয়ে স্থগিতাদেশ

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সম্প্রতি সন্দেশখালি যেতে দেয়া হয়নি। সেসময় তাকে পুলিশ ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। সুকান্ত অ়জ্ঞান হয়ে যান। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই নিয়ে স্পিকারের কাছে নালিশ করেছিলেন সুকান্ত। স্পিকার তা পাঠান অধিকার রক্ষা কমিটির কাছে। তারা পুলিশ ও প্রশাসনের পাঁচ কর্তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল।

সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন জানানো হয়। সর্বোচ্চ আদালত কমিটির নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।

'মেনে নেয়াই তো হলো'

সন্দেশখালিতে সাধারণ মানুষকে তৃণমূল যে টাকা ফেরত দিচ্ছে, তার তাৎপর্য কোথায়? প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এর অর্থ তো সাধারণ মানুষের উপর যে জোরজুলুম হয়েছে, তোলাবাজি হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে তা মেনে নেয়া। নাহলে কোনো রাজনৈতিক দল কেন মানুষকে এই টাকা ফেরত দেবে?''

শরদের বক্তব্য, ''আমি অন্য ভয়ংকর অভিযোগের মধ্যে যাচ্ছি না। এই টাকা ফেরত দেয়ার  ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর। তৃণমূলের নেতারা সেখানে কী করেছেন। তারা নিজেরাই বলছেন ১৭০ জন টাকা পান। সন্দেশখালির পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা তো এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে।''

জিএইচ/কেএম(পিটিআই, আনন্দবাজার, টিভি৯)