বইয়ের ভবিষ্যৎ কি?
৫ ডিসেম্বর ২০১৩কিছুদিন আগেও পুস্তকের বাজারের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সনাতন মুদ্রিত বইয়ের ইতি ঘটবে বলেই ভবিষ্যদবাণী করেছিলেন৷ আজকের ডিজিটালের যুগে ইলেকট্রনিক বা ই-বইয়ের জয়যাত্রা যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ছাপা বইয়ের টিকে থাকা কষ্টকর হবে, এই ছিল তাদের ধারণা৷ বাস্তবিকই এক্ষেত্রে চিত্রটা অনেক বদলেছে৷ বেশ কিছু বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ ছোট ছোট কিছু প্রকাশনা সংস্থাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ কোনো কোনো সংস্থা মুদ্রিত বইয়ের পরিবর্তে সম্পূর্ণভাবে ই-বইয়ের দিকেই ঝুঁকেছে৷
হতাশাব্যঞ্জক নয়
তবে হতাশাব্যঞ্জক সব ধরনের ভবিষ্যদবাণী পুরোপুরি ফলেনি৷ এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ৷অনেক বইয়ের দোকান ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য সুচিন্তিতভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করছে৷ প্রকাশনা সংস্থাগুলি যদি খ্যাতনামা লেখকদের লেখা এবং আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু তুলে ধরতে পারে, তাহলে মুদ্রিত বইকে ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করতে হবে না৷ এছাড়া বইকে নতুন রূপে সাজাতে হবে যাতে তারা ই-বইয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, হতে পারে বিকল্প৷ আর এসব পদক্ষেপ নিতে পারলেই চিরাচরিত মুদ্রিত গ্রন্থ তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতে পারবে৷
ইদানীং বইয়ের ডিজাইনের ব্যাপারে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে৷ বলেন গ্রন্থ শিল্প ফাউন্ডেশনের আলেক্সান্ড্রা সেন্ডার৷ ওফেনবাখের গ্রন্থ ও লিপিকলা মিউজিয়ামের পরিচালক স্টেফান সোলটেকও এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করেছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি লক্ষ্য করেছি, বইয়ের নান্দনিক দিকটার প্রতি যেমন সাধারণ পাঠক তেমনি আইটি এবং গ্রাফিক বিভাগের লোকজনের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷''
অনেকেই আশাবাদী
ভাগেনবাখ প্রকাশনা সংস্থার প্রধান সুসানে শ্যুসলার সযত্নে তৈরি বইয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ কিছু কিছু গ্রন্থ শুধু মুদ্রিত আকারেই বের হতে পারে৷ বইয়ের দোকানগুলিতে এই প্রকাশনা সংস্থার টকটকে লাল রং-এর লিনেনের বাঁধাই করা বইগুলি চোখে পড়ার মতো৷ ‘আউফবাউ' প্রকাশনা সংস্থার ক্রিশ্টিয়ান ড্যোরিং পুস্তক সিরিজ ‘ভিন্ন ধরনের গ্রন্থাগার'-এর দায়িত্বে রয়েছেন ২০১১ সাল থেকে৷ ১৯৮৫ সাল, অর্থাৎ অ্যানালগের যুগ থেকেই এই সংস্থার বইয়ের সাজসজ্জা মানুষকে আকৃষ্ট করছে৷
গ্রন্থকে শুধু বিষয়বস্তুর দিকে নজর না দিয়ে ‘পোশাকে'-র দিকেও মন দিতে হবে৷ মলাট, কাগজপত্র, লেখার স্টাইল, রঙ-চঙ, বাইন্ডিং এসব কিছু আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে৷ অর্থাৎ বইটি হাতে নিয়ে যেন ভালো লাগে৷ ছোট ছোট আরো কিছু প্রকাশনা সংস্থাও চোখ জুড়ানো আবরণে সাজিয়ে বইকে বাজারে নিয়ে আসছে৷ পড়তেও ভালো লাগে এসব বই৷
অনেক দোকানের দ্বার রুদ্ধ
এ সব সত্ত্বেও অসংখ্য বইয়ের দোকানের দ্বার বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এক্ষেত্রে বিশেষ করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিচালিত ছোটখাট চটপটে দোকানগুলি সহজেই এগিয়ে যাচ্ছে৷
আমাজনের মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি বইকে ব্যবসার সামগ্রী হিসাবে দেখে৷ শিল্প ও সংস্কৃতির দিকটি চোখ এড়িয়ে যায় তাদের৷ বলেন, মিউনিখের ঐতিহ্যবাহী বইয়ের দোকান লেমকুলের মিশাইল লেমলিং৷ এই জন্য তাদের এই ক্ষেত্রে টিকে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে৷
ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ, ব্যক্তিগত পরামর্শদান, বিশেষ করে দোকানের সাজানো গুছানো পরিবেশ মানুষকে টানতে পারে৷ আর ছোট ছোট বইয়ের দোকানগুলি এদিকটায় খেয়াল রাখে৷
সবশেষে বলা যায় উদ্যোগী প্রকাশকরা এগিয়ে এলে এবং বিষয়বস্তু ও বাহ্যিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে এই ডিজিটালের যুগেও মুদ্রিত বই-এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷