1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংসদীয় কমিটির ‘দুস্থ কোটা’ ও হজযাত্রায় বাড়তি খরচ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ মে ২০২২

করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ থেকে এবার ৫৭ হাজার মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষ হজে যেতে পারবেন৷ কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই সংকটে পড়েছেন৷

https://p.dw.com/p/4BPFL
ফাইল ফটোছবি: bdnews24.com

এর মধ্যেই ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সরকারি খরচে তিনজন করে হজে পাঠানোর আবদার করেছেন৷ কমপক্ষে ৮০০ জন সরকারি খরচে এবার হজে যেতে পারছেন৷ এদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্স ছাড়াও বিভিন্ন পেশার লোকজন থাকবেন৷ এজন্য সরকারের মোট খরচ পড়বে অন্তত ৪০ কোটি টাকা৷ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন সংসদীয় কমিটির বিষয়টি এখানো চূড়ান্ত  হয়নি৷ তারা ১০ জনের প্রত্যেককে ‘দুস্থ কোটায়' তিন জন করে পাঠাতে চান৷ বাকি যারা সরকারি খরচে যাবেন তারা নানা সেবামূলক কাজে যাচ্ছেন৷ 

সৌদি আববের দিকে সব খরচই বেড়ে গেছে: এম শাহাদাত হোসাইন

কেন হজের খরচ বাড়ল

এবার সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ চার লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হবে৷ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৫৬ হাজার ৬৩০ টাকা৷

সবশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন হজযাত্রীরা৷ তখন প্যাকেজ-১ এ চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ এবং প্যাকেজ-২ এ খরচ ধরা হয়েছিল তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা৷ তাই এবার সরকারি-বেসরকারি সব প্যাকেজেই এক লাখ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে৷

খরচ বাড়ার কারণ হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৯ সালে সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার ছিল ২৩ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সা৷ সৌদি আরব হজ পর্বের সকল খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ, কর অন্তর্ভূক্ত করেছে৷ মোয়াচ্ছাছার( সৌদি আরবে মোয়াল্লেমদের সংগঠন) খরচ দ্বিগুণ হয়েছে৷ বাড়ি ভাড়া বেড়েছে৷

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘‘সৌদি আববের দিকে সব খরচই বেড়ে গেছে৷ হোটেল ভাড়া বাড়ার কারণ হলো করোনার কারণে এবার রুম শেয়ারিং-এ লোকের সংখ্যা কমানো হয়েছে৷ আগে এক রুমে চার জন থাকলে এখন দুইজন করা হয়েছে৷ ভাড়াও বেড়েছে৷ মোয়াল্লেম ফি  ও  এক্সট্রা মোয়াল্লেম ফি বেড়েছে৷ বিমান ভাড়াও বেড়েছে৷''

২০১৯ সালে ৬৭ হাজার হজযাত্রী  টাকা জমা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাদের মধ্যে ১৩ হাজার এরইমধ্যে টাকা ফেরত নিয়েছেন৷ এবার তাই হজে যাচ্ছেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হজার ৫৮৫ জন হজে যাচ্ছেন৷ নতুন কোনো নিবন্ধন হবে না৷ 

ইচ্ছা থাকলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারছি না: মো. ফরিদুল হক খান

হজের জন্য বাড়তি অর্থ জমা দিতে এখন অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন৷ সেরকমই একজন নরসিংদীর মাওলানা আবু আব্দুল্লাহ৷ তিনি বলেন, "দুই বছর ধরে আমরা টাকা সরকারের কাছে জমা ছিলো৷ এখন আরো টাকা দিতে কষ্ট হচ্ছে৷ তারপরও যেহেতু  হজের নিয়ত করেছি তাই কষ্ট করে হলেও টাকা জোগাড় করছি৷ সরকার চাইলে সাবসিডি বা বিমান ভাড়া কমিয়ে দিতে পারত৷ আর সরকারি খরচে প্রয়োজনের বাইরে লোক না পাঠিয়ে সেই টাকা এখানে দিলে আমাদের খরচ কমত৷'' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, তিনি বাড়তি খরচের কারণে তার টাকা তুলে নিয়েছেন৷ তার পক্ষে অতিরিক্ত খরচ বহন সম্ভব নয়৷

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনু বিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘‘সৌদি আরবে সব ধরনের সার্ভিসের ওপর আগে ভ্যাট ছিলো শতকরা পাঁচ ভাগ৷ এবার ১৫ ভাগ করায় মূলত খরচ বেড়ে গেছে৷ আর মোয়াল্লেমসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে৷ ফলে মোট খরচ বেড়েছে৷ আমাদের দেশে কোনো ভর্তুকির ব্যবস্থা না থাকায় আমরা তাদের কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না৷ আর যারা  আগে নিবন্ধন করেছেন তারাই যেতে পারছেন৷ কোটা কম থাকায় সবাই হজে যেতে পারছেন না৷''

হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘‘সরকার চাইলে বিমান ভাড়ায় ভর্তুকি দিতে পারত৷ আমাদের পাশের দেশ ভারতে সাবসিডি দেয়৷ ইন্দোনেশিয়া হজ নিয়ে আলাদা ব্যাংক করেছে৷ ফলে সেখানে খরচ কম পড়ে৷ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিলে খরচ যাই হোক একটা সময় পর ওই অর্থেই হজে পাঠায়৷'' 

কোটা কম থাকায় সবাই হজে যেতে পারছেন না: মো. মতিউল ইসলাম

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ‘‘এবার পর্যাপ্ত সময় না থাকায় শেষ মুহূর্তে আমাদের হজের কাজ শেষ করতে হচ্ছে৷ তাই ইচ্ছা থাকলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারছি না৷ আর সাবসিডির ব্যবস্থা না থাকায় এবার বেশি খরচেই হজযাত্রীদের হজে যেতে হচ্ছে৷'' 

সরকারি খরচে হজযাত্রা

এবার সরকারি খরচে কমপক্ষে ৮০০ জন হজে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. রহুল আমিন মাদানি৷ তিনি বলেন, ‘‘তার মধ্যে আমাদের কমিটির আমরা ১০ জন সদস্য তিনজন জন করে মোট ৩০ জনকে পাঠানোর জন্য বলেছি৷ এলাকার লোকজন যেতে চায়, তাই আমরা এই সুবিধা চেয়েছি৷ কিন্তু সেটা হবে কি না জানি না৷'' তিনি বলেন, ‘‘ওই ৮০০ জনের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্স ছাড়াও বিভিন্ন খাতের লোকজন রয়েছেন৷ গরিব লোকদেরও কোটা আছে৷'' 

সংসদীয় কমিটির পছন্দের ৩০ জনকে পাঠালে সরকারের খরচ হবে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা৷ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘হজ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্স, সহায়তাকারী পাঠাতে হয়৷ এবারও পাঠানো হবে৷ এর বাইরে দুস্থদের কোটা আছে৷ দুস্থ কোটায় সংসদীয় কমিটির ১০ জনের প্রত্যেকে তিনজন করে পাঠাতে চান৷ আমি প্রথমে না বলেছি৷ তবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ দেখি কী করা যায়৷'' 

গরিব লোকদেরও কোটা আছে: মো. রহুল আমিন মাদানি

গরিবদের হজ করা ফরজ কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না এটা এমন ব্যক্তিদের জন্য যারা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, দেশের জন্য অনেক করেছেন কিন্তু হজে যাওয়ার ইচ্ছে পূরণ হয়নি অর্থ না থাকার কারণে৷''

ভারতে খরচ কত?

এদিকে ভারতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও মোট কত খরচ হবে তা এখনও জানানো হয়নি৷ এক লাখ ২০ হাজার রুপি দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে বলেছে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়৷ পশ্চিমবঙ্গ হজ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে হজে যেতে তিন-চার লাখ রুপি লাগতে পারে। তিনি আরো জানিয়েছেন আগে ভারতে হজযাত্রীদের সাবসিডি দিতো সরকার। এখন আর দেয়া হচেছ না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার ছয় হাজার ৩০০ জন হজে যেতে পারবেন। ভারতের সব রাজ্যেরই কোটা আছে।