1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদভাষ্য: মুম্বাই হামলা ও ভারত-পাকিস্তানের ইলেকট্রনিক মিডিয়া

২৫ নভেম্বর ২০০৯

আধুনিক ভারতের প্রতীক নগরী মুম্বাইকেই নারকীয় হামলার লক্ষ্যবিন্দু করেছিল উগ্র ইসলামপন্থী লস্কর-ই-তৈয়বার সন্ত্রাসীরা৷ তাদের মেশিনগানের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে কম করে হলেও ১৬৬ নিরপরাধ মানুষ৷

https://p.dw.com/p/KgWz
মুম্বাই হামলার পর ধ্বংসযজ্ঞ৷ ফাইল ফটো৷ছবি: AP

হামলাকারী দশ সন্ত্রাসীর মধ্যে মাত্র একজন জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ে৷ পাকিস্তানি নাগরিক কাসাব৷ ভারত ও পাকিস্তান - দুই দেশের বার্তা মাধ্যমের জন্যই এই হামলা ছিল কঠিন এক পরীক্ষা৷ কিন্তু সে পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারে নি বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের গ্রেহাম লুকাস৷

নিজ দেশে এত বড় এক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে ভারতের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কোন পরিচয় ছিলনা৷ এমন এক হামলা যা তিন দিন পর শেষ হবার আগেই ছাব্বিশ-এগারো নামে ইতিহাসে ঠাঁই পেয়ে যায়৷ কিন্তু ৫ শ'রও বেশি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল এবং বহু চব্বিশ ঘন্টার নিউজ চ্যানেলের অধিকাংশই এই অপ্রত্যাশিত হামলার মুখে পড়ে জনসাধারণের সামনে তথ্যনির্ভর, বাস্তবনিষ্ঠ রিপোর্ট প্রচার করতে সক্ষম হয়নি৷ ঘন্টার পর ঘন্টা অধিকাংশ চ্যানেলই দেখায় ঐ নারকীয় হামলার লাইভ ছবি৷ মুমূর্ষু সব মানুষ, ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মৃতদেহ৷ কিন্তু ঘটনার বাস্তবসম্মত পরম্পরা মেলে নি বললেই চলে৷ সেভাবে পাওয়া যায় নি ঘটনার তাৎপর্যময় বিশ্লেষণ৷ বার্তাসম্পাদকদের ওপর শীর্ষ মহলের নির্দেশ ছিল, বিজ্ঞাপনী আয়ের কথা খেয়াল রেখে ক্যামেরা শুধু খোলা রাখো৷

নৈতিক বিচার বিবেচনা পুরোপুরি সরিয়ে রাখা হয়৷ তাছাড়া হাতের কাছেই ছিল ঘোরশত্রু পাকিস্তান৷ ফলে তার ওপর সব দায় চাপানো যেতেই পারে৷ প্রাথমিক পর্যায়ে বার্তা মাধ্যমে শুধু বলা হয়, হামলার পরিকল্পনা হয় পাকিস্তানের মাটিতে৷ দ্রুত এই গুজবও ছড়িয়ে পড়ে যে এই হামলার পিছনে পাকিস্তান সরকার এবং পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের হাত থাকতে পারে৷ হামলার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সাংবাদিক বলতে থাকেন যে ইসলামাবাদই রয়েছে হামলার পিছনে৷ এই ধরণের মতের সপক্ষে উদ্ধৃত হতে থাকে অসমর্থিত উৎস আর জনশ্রুতি৷

Terror Serie in Bombay Geiseln aus Trident Hotel befreit
জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া একজন৷ ফাইল ফটো৷ছবি: picture-alliance/ dpa

এ ধরণের রিপোর্টিং নয়া দিল্লি সরকারের ওপর অবিশ্বাস্য রকমের চাপ সৃষ্টি করে৷ কয়েক ঘন্টার মধ্যে জনরোষ এমনই ব্যাপক আকার নেয় যে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত আর পাকিস্তান এক যুদ্ধং দেহী অবস্থার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়৷

অন্যদিকে পাকিস্তানের ইলেকট্রনিক বার্তা মাধ্যমও আচ্ছন্ন হয়েছিল এক উন্মাদনায়৷ তারা নির্দ্বিধায় পাকিস্তানের কোন রকম সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করতে থাকে৷ যথারীতি ভারতের গোয়েন্দা দপ্তরকেই দায়ী করে তারা৷ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা এবং সামরিক গোয়েন্দা দপ্তর আইএসআই-এর কাজকর্ম সম্পর্কে কোন গভীর আলোচনা হয়নি৷ অল্প কয়েকজন সাংবাদিক যারা এই বিষয়টি নিয়ে বাস্তব তথ্যনির্ভর রিপোর্ট করতে সচেষ্ট হয়েছেন তাদের দর্শক-শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বেগ পেতে হয়৷

মুম্বাই হামলার এক বছর পরেও দেখা যাচ্ছে যে ভারত ও পাকিস্তানের বার্তা মাধ্যমগুলো বিষয়টি নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনার পথনির্দেশ করতে পারেনি৷ মিডিয়া বরং এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে রিপোর্ট করার এক দায়িত্ব নিজের কাঁধে চাপিয়ে রেখেছে৷ এতে খুশি দু' পক্ষই৷ পাকিস্তানের মুখোমুখি চাঞ্চল্যকর রিপোর্টিং-এর পথ থেকে সরে আসার কোন ইচ্ছা নেই ভারতের মিডিয়ার৷ পাকিস্তানের মিডিয়াও পুরোপুরি সরকারের স্বার্থে ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকবে৷ দুদেশের সাংবাদিকতায় পারস্পরিক অভিযোগের এখনও জয় জয়কার৷

সংবাদভাষ্য: গ্রেহাম লুকাস ভাষান্তর: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: আব্দুস সাত্তার