1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংগ্রামী জীবন থেকে বিধানসভার অলিন্দে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৬ জুন ২০২১

বিধানসভা নির্বাচনের ফল রাতারাতি বদলে দিয়েছে তাদের জীবন৷ ভোটে জয়ী হয়ে তারা জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন৷ নবনির্বাচিত বাঁকুড়ার দুই বিধায়ক ভুলে যাননি তাদের উত্থানের সোপান, গ্রামের মানুষদের৷

https://p.dw.com/p/3vbEH
Westbengalen l Nirmala Dhar,  Politikerin und MLA von Indus, Bankura
ছবি: Payel Samanta

উপমহাদেশে রাজনীতিক মানেই যেন ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রদর্শন৷ শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউরি ও ইন্দাসের বিধায়ক নির্মল ধাড়া সেখানটায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ব্যতিক্রমী৷ চন্দনা বাউরির স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি৷ তার জোগাড়ে হিসেবে ইট, সিমেন্ট, বালি বহনের কাজ করে ২৫০ টাকা দৈনিক মজুরিতে দিন চলত চন্দনার৷ অন্যদিকে সতীর্থ ইন্দাসের বিজেপি প্রার্থী নির্মল ধাড়া প্রাইভেট টিউশনি করেই সংসার চালাতেন৷ বিধায়ক হওয়ার পরেও সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর কতটা বদলেছে এই দুই জনের জীবন, দুই বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে উত্তর খুঁজেছে ডয়চে ভেলে৷

সংসার থেকে রাজনীতির মঞ্চে
প্রধানমন্ত্রী ‘গোটা বাংলার আকাঙ্খার প্রতীক’ হিসেবে ‘বঙ্গাল কি বেটি’ চন্দনার কথা বলেছেন নির্বাচনী জনসভায়৷ বলা হচ্ছিল, বিজেপির সবচেয়ে দরিদ্র প্রার্থী ছিলেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যা জোটে তা দিয়ে রান্না করি৷ রাতে বেশিরভাগ দিনই আলুসেদ্ধ ভাত খাই৷’’

চন্দনা বাউরি

বিধায়কের স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি, কাজ থাকলে দিনে ৩৫০টাকা রোজগার করেন৷ তাই সংসারের যাবতীয় কাজ, রান্না, কাপড় কাচা বা ছোট ছেলের যত্ন, সবটাই বিধায়ক চন্দনা একা হাতে সামলান৷ এখন জনতার প্রতিনিধি হওয়ার পর আরও অনেক মানুষের দায়িত্ব নিতে হয়েছে৷ দিনভর সেজন্য ছোটাছুটি তো আছেই৷ তাই ছোট বোনকে সাংসারিক কাজে সাহায্যের জন্য নিজের কাছে এনে রেখেছেন৷ কিন্তু সংসারের কাজ ছেড়ে রাজনীতিতে কেন? চন্দনা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে অনেক দুর্নীতি হয়েছে, মহিলাদের অসম্মান করা হয়েছে, মনোনয়নই জমা দিতে পারা যায়নি৷ এসব পরিস্থিতি দেখছি৷ তার সঙ্গে মোদীজির কাজ দেখে রাজনীতিতে এসেছি৷”

আপাতত মাটির বাড়ির টালির চালে মাথা গুঁজেই চন্দনা সব দলের সমর্থকের বিধায়ক হয়ে উঠতে চান৷ মানুষের জন্য কাজ করাটাই তার আসল লক্ষ্য৷ মৃদুভাষী চন্দনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জানি না শাসক দল কতটা সাহায্য করবে৷ শালতোড়ার যে কাজকর্ম বাকি আছে, সেগুলি শেষ করার চেষ্টা করব৷’’

দুই বারের বিধায়ক তৃণমূল প্রার্থী সন্তোষ কুমার মণ্ডলকে হারিয়ে প্রথমবারেই নির্বাচনী লড়াইয়ে সফল চন্দনা৷ তবে প্রচারের প্রথম দিন তিনি ভয় পেয়েছিলেন৷ কিন্তু মানুষের সমর্থন তাকে ভয়মুক্ত করেছে৷ প্রচারে প্রচুর পরিশ্রমের ফলে শরীর এখনও দুর্বল৷ তাই রাজভবনে আসতে পারেননি৷ তাও কোভিডের এই পরিস্থিতিতে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে মাস্ক, সাবান নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে৷ ইতোমধ্যে তিনি জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমে৷ তবে জনসংযোগের জন্য মানুষের কাছে যেতেই পছন্দ করেন চন্দনা৷ আর বিধায়ক সশরীরে কোথাও গেলে ভিড় হবেই৷ এমনই জনপ্রিয় তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে ভিড় হলে ভাল না৷ তাই ইচ্ছে থাকলেও সব জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না৷ মানুষ চাইছে যেন সব জায়গায় আমি পৌঁছাই৷’’

গৃহশিক্ষকতা থেকে বিধানসভায়
ছেলেমেয়েদের ইংরেজি পড়ান৷ প্রয়োজন হলে অন্যান্য বিষয়েও সাহায্য করেন নির্মল ধাড়া৷ তিনি এখন বিধায়ক৷ সমস্যায় পড়েছেন অভিভাবকরা৷ অগত্যা ইন্দাসের বিধায়ক নির্মল ধাড়া অবৈতনিক টিউশনি পড়াচ্ছেন৷

নির্মল ধাড়া

বিধানসভা ভোটের হলফনামায় পেশা প্রাইভেট টিউশন বলে জানিয়েছিলেন তিনি৷ ভাগচাষির সন্তান হয়ে এমএ পাশ করার জন্য যে লড়াই করতে হয়েছে, তা তিনি ভোলেননি৷ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিধায়ক হিসেবে একটা সামাজিক দায়িত্বও থেকে যায়৷ শিক্ষার আলো যদি ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেটার থেকে ভালো কিছু হতে পারে না৷’’

নির্মলকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবরই আকর্ষণ করতেন৷ সেই টানেই শিক্ষা জগৎ থেকে রাজনীতির জগতে এসে পড়েছেন৷ ২০১৬ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন৷ একুশের ভোটে বিধানসভায় পৌঁছে গেলেন৷

এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পগুলির সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান তিনি৷ এক কণ্যা সন্তানের পিতা নির্মল বলেন, ‘‘আমার ব্যস্ততা অভিভাবকরা বোঝেন৷ তাও নাছোড়বান্দা হয়ে আছেন৷ অন্য কাউকে দিয়ে পড়াবেন না৷’’ বিধায়ক শিক্ষককে পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা একদিকে যেমন খুশি, আবার আগের মতো সময় দিতে না পারায় মন খারপও হয় তাদের৷

নির্মল মনে করেন, একজন বিরোধী বিধায়কের দায়িত্ব সরকারের ভুল দেখিয়ে দেওয়া৷ সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি৷ এই বিধায়কের দাবি, তৃণমূল সরকারের আমলে এ রাজ্যে শিক্ষার উন্নতি হয়নি৷ তাই সেদিকে মন দিতে চান তিনি৷ বলেন, ‘‘গ্রামের মধ্যে অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে গড়ে তোলা যায়, সেই চিন্তাভাবনা রয়েছে৷ আমার বিধানসভা এলাকার স্কুলগুলি ঘুরে দেখে অভাব-অভিযোগ কথা শুনে প্রতিকার করতে চাই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান