সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের ফি কমাতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ?
২০ জুন ২০২০লকডাউনের ফলে মার্চের শেষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজ বন্ধ৷ আপাতত জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই৷ এরই মধ্যে বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা শুরু হয়েছে৷ কয়েকটি স্কুল ফি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিবাদে অভিভাবকরা পথে নেমেছেন৷ তাঁদের প্রশ্ন, লকডাউনের ফলে স্কুল যখন বন্ধ, উপার্জন কমছে অভিভাবকদের, সেই সময় ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন? দমদম থেকে লেক গার্ডেন্স, বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে৷ পথ অবরোধ করেছেন অভিভাবকরা৷ অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের পালটা বক্তব্য, শিক্ষকদের বেতন-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো অটুট রাখতে ফি কমানো সম্ভব নয়, প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে৷
সরকারি স্কুলগুলির পঠনপাঠনের মান নিয়ে অভিযোগ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷ লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই স্কুলে পড়ে৷ প্রতিটি স্কুলে পড়াশোনা করতে বিপুল টাকা খরচ করতে হয় অভিভাবকদের৷ শুধু টিউশন ফি নয়, ভর্তি, উন্নয়ন, পরিবহণ, উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন খাতে ফি আদায় করা হয় পড়ুয়াদের কাছ থেকে৷ অভিভাবকদের বক্তব্য, এখন ক্লাস হচ্ছে না৷ অনলাইন বা হোয়াটসঅ্যাপ-এ কিছুটা পড়াশোনা হচ্ছে৷ তাই টিউশিন ফি বাড়ানো চলবে না৷ এ ছাড়া অন্য কোনো ফি তাঁরা দেবেন না৷ যেখানে টিউশন ফি-র মধ্যে সব ধরনের খরচ অন্তর্ভুক্ত, সেখানে ৫০ শতাংশ কম ফি নিতে হবে স্কুলকে৷ অনেক স্কুলই ফি কমাতে রাজি নয়৷ কর্তৃপক্ষের সওয়াল, ফি ছাড়া তাঁরা স্কুল চালাবেন কী করে৷
ঠিক কতটা খরচ হয় একটি বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েকে পড়াতে? কলকাতার ২৫টি স্কুলের অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন-এর আহ্বায়ক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিভিন্ন স্কুলে বেতন কাঠামো আলাদা আলাদা৷ মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে৷ গড়ে আড়াই হাজার টাকা৷ এছাড়া বিভিন্ন রকমের ফি নেওয়া হয়৷’’
লেকটাউনের এক পড়ুয়ার অভিভাবক বিশাখা সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ফি বাড়ালে একে ব্যবসা ছাড়া কী বলবেন! সরকারি স্কুলে পড়াশোনার মান ভালো নয়৷ তাই ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে দিতেই হয়৷ এই স্কুলগুলি আমাদের অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছে৷’’
সেন্ট মেরিজ স্কুল থেকে এ কে ঘোষ মেমোরিয়াল কিংবা স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট - বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে রাজ্য সরকারের দিকে তাকিয়ে অভিভাবকরা৷ সুপ্রিয় বলেন, ‘‘দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া বেসরকারি স্কুলগুলিকে ফি নিয়ে বার্তা দিয়েছেন৷ আমাদের রাজ্য সরকার অন্তত এ ধরনের বার্তা দিক৷ তাহলে স্কুলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে৷’’ ২০১৭ সালে একই ধরনের বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ফি নির্ধারণে রেগুলেটরি বোর্ড গঠন করেছিল৷ যদিও সেই বোর্ড কোনো কাজ করেনি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের৷ এমনকি গত তিন বছরে একবারও বৈঠক হয়নি৷ অভিভাবকরা চাইছেন, এই বিতণ্ডার স্থায়ী সমাধান হোক৷ স্কুলগুলির কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করা হোক৷
কিন্তু, এই বেসরকারি স্কুলগুলির অধিকাংশই সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ভারতীয় সংবিধানে এদের জন্য রক্ষাকবচ রয়েছে৷ খ্রিস্টান মিশনারি কিংবা মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের উপর সরকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না৷ সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তা পরিচালনা করতে পারে৷ অর্থাৎ, এক্ষেত্রে তাদের স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে৷ তাহলে কি অভিভাবকদের দাবি পূরণের সম্ভাবনা নেই? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের কাছ থেকে সংখ্যালঘু পরিচালিত যে প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি ও সহায়তা চায়, তাদের ক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ কিন্তু, যারা এসব চায় না, তাদের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের সুযোগ অত্যন্ত কম৷ তবে সরকার যদি মনে করে, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে, তাহলে দেশের সাধারণ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে৷ সেই অনুযায়ী আদালত থেকে ইতিবাচক সাড়া পেতে পারেন অভিভাবকরা৷ ১৯৬৩ সালের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ে সেই সুযোগ রয়েছে৷’’
এক জুনের ছবিঘরটি দেখুন...