1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের ফি কমাতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ জুন ২০২০

পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি স্কুলে ফি কমানোর দাবিতে পথে অভিভাবকরা৷ সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তাঁরা৷ কিন্তু, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি হস্তক্ষেপ করতে পারবে সরকার?

https://p.dw.com/p/3e3Rq
বেসরকারি স্কুলে ফি কমানোর দাবিতে পথে অভিভাবকরা
ছবি: DW/P. Samanta

লকডাউনের ফলে মার্চের শেষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজ বন্ধ৷ আপাতত জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই৷ এরই মধ্যে বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা শুরু হয়েছে৷ কয়েকটি স্কুল ফি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিবাদে অভিভাবকরা পথে নেমেছেন৷ তাঁদের প্রশ্ন, লকডাউনের ফলে স্কুল যখন বন্ধ, উপার্জন কমছে অভিভাবকদের, সেই সময় ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন? দমদম থেকে লেক গার্ডেন্স, বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে৷ পথ অবরোধ করেছেন অভিভাবকরা৷ অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের পালটা বক্তব্য, শিক্ষকদের বেতন-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো অটুট রাখতে ফি কমানো সম্ভব নয়, প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে৷

সরকারি স্কুলগুলির পঠনপাঠনের মান নিয়ে অভিযোগ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷ লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই স্কুলে পড়ে৷ প্রতিটি স্কুলে পড়াশোনা করতে বিপুল টাকা খরচ করতে হয় অভিভাবকদের৷ শুধু টিউশন ফি নয়, ভর্তি, উন্নয়ন, পরিবহণ, উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন খাতে ফি আদায় করা হয় পড়ুয়াদের কাছ থেকে৷ অভিভাবকদের বক্তব্য, এখন ক্লাস হচ্ছে না৷ অনলাইন বা হোয়াটসঅ্যাপ-এ কিছুটা পড়াশোনা হচ্ছে৷ তাই টিউশিন ফি বাড়ানো চলবে না৷ এ ছাড়া অন্য কোনো ফি তাঁরা দেবেন না৷ যেখানে টিউশন ফি-র মধ্যে সব ধরনের খরচ অন্তর্ভুক্ত, সেখানে ৫০ শতাংশ কম ফি নিতে হবে স্কুলকে৷ অনেক স্কুলই ফি কমাতে রাজি নয়৷ কর্তৃপক্ষের সওয়াল, ফি ছাড়া তাঁরা স্কুল চালাবেন কী করে৷

সুপ্রিয় ভট্টাচার্য

ঠিক কতটা খরচ হয় একটি বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েকে পড়াতে? কলকাতার ২৫টি স্কুলের অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন-এর আহ্বায়ক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিভিন্ন স্কুলে বেতন কাঠামো আলাদা আলাদা৷ মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে৷ গড়ে আড়াই হাজার টাকা৷ এছাড়া বিভিন্ন রকমের ফি নেওয়া হয়৷’’

লেকটাউনের এক পড়ুয়ার অভিভাবক বিশাখা সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ফি বাড়ালে একে ব্যবসা ছাড়া কী বলবেন! সরকারি স্কুলে পড়াশোনার মান ভালো নয়৷ তাই ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে দিতেই হয়৷ এই স্কুলগুলি আমাদের অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছে৷’’

সেন্ট মেরিজ স্কুল থেকে এ কে ঘোষ মেমোরিয়াল কিংবা স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট - বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে রাজ্য সরকারের দিকে তাকিয়ে অভিভাবকরা৷ সুপ্রিয় বলেন, ‘‘দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া বেসরকারি স্কুলগুলিকে ফি নিয়ে বার্তা দিয়েছেন৷ আমাদের রাজ্য সরকার অন্তত এ ধরনের বার্তা দিক৷ তাহলে স্কুলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে৷’’ ২০১৭ সালে একই ধরনের বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ফি নির্ধারণে রেগুলেটরি বোর্ড গঠন করেছিল৷ যদিও সেই বোর্ড কোনো কাজ করেনি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের৷ এমনকি গত তিন বছরে একবারও বৈঠক হয়নি৷ অভিভাবকরা চাইছেন, এই বিতণ্ডার স্থায়ী সমাধান হোক৷ স্কুলগুলির কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করা হোক৷

বিমলশঙ্কর নন্দ

কিন্তু, এই বেসরকারি স্কুলগুলির অধিকাংশই সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ভারতীয় সংবিধানে এদের জন্য রক্ষাকবচ রয়েছে৷ খ্রিস্টান মিশনারি কিংবা মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের উপর সরকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না৷ সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তা পরিচালনা করতে পারে৷ অর্থাৎ, এক্ষেত্রে তাদের স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে৷ তাহলে কি অভিভাবকদের দাবি পূরণের সম্ভাবনা নেই? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের কাছ থেকে সংখ্যালঘু পরিচালিত যে প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি ও সহায়তা চায়, তাদের ক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ কিন্তু, যারা এসব চায় না, তাদের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের সুযোগ অত্যন্ত কম৷ তবে সরকার যদি মনে করে, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে, তাহলে দেশের সাধারণ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে৷ সেই অনুযায়ী আদালত থেকে ইতিবাচক সাড়া পেতে পারেন অভিভাবকরা৷ ১৯৬৩ সালের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ে সেই সুযোগ রয়েছে৷’’

এক জুনের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য