1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুখা মরশুমে বনসৃজনে পথ দেখাচ্ছে বীজের বল

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ জুলাই ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে এবার বর্ষাকালেও বৃষ্টি নেই বললেই চলে৷ তবু এরই মধ্যে পালিত হচ্ছে অরণ্য সপ্তাহ৷ বনসৃজনের ক্ষেত্রে কাজে আসছে বীজ বল৷ বৃষ্টির জল পেলেই প্রকৃতির নিয়মে এই বীজ থেকে জন্ম নেবে নতুন গাছ৷

https://p.dw.com/p/3MN6p
Global Ideas  Europäisches Gleithörnchen Nistplätze Kahlschlag
ছবি: Maarit Jokinen

বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ সঙ্কেতের মধ্যে গোটা পৃথিবীতেই সবুজ বাঁচানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এ নিয়ে সচেতনতা কম৷ সারা বছর ধরে বৃক্ষচ্ছেদন থেকে জলাভূমি ভরাটের মতো বেআইনি কাজ চলতে থাকে৷ এর প্রভাব পড়ে প্রকৃতিতে৷ গাছ কমে এলে প্রকৃতির ভারসাম্য  নষ্ট হয়৷ তাই সরকারের তরফ থেকে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয় সবুজ বাঁচাতে এবং তার বিস্তার ঘটাতে৷ প্রতি বছর জুলাই মাসে পালিত হয় অরণ্য সপ্তাহ৷ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বঙ্গে বর্ষাকাল৷ এই সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা৷ কিন্তু, এবছর উত্তরবঙ্গে বিপুল বৃষ্টিপাত হলেও দক্ষিণবঙ্গ শুকনো৷ কালো মেঘের দেখা নেই, নামমাত্র বৃষ্টি হচ্ছে৷ এরই মধ্যে অরণ্য সপ্তাহ পালন সবুজের অভিযানের আসল উদ্দেশ্যকেই যেন ব্যাহত করছে৷

মহিলারা কাঁচামাল জোগাড় করে বল তৈরি করেন: গৌরাঙ্গ দাস গোস্বামী

তবু অরণ্য সপ্তাহ পালনের সরকারি কর্মসূচিতে ভাটা পড়েনি৷ জেলায় জেলায় বিপুল সংখ্যক গাছের চারা বিলি করা হচ্ছে৷ রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) সুরেন্দ্রপ্রসাদ যাদব জানান, রাজ্যে এবার দুই কোটি গাছের চারা রোপণ করা হবে৷ এর লক্ষ্য বনভূমির আয়তন বাড়ানো৷ শুধু জনবসতি এলাকায় বৃক্ষরোপণ নয়, বনাঞ্চলে গাছের ঘনত্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ বৃষ্টির অভাবে স্বাভাবিক কৃষিকাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, একই সমস্যা হচ্ছে সবুজ বাড়ানোর ক্ষেত্রে৷ বৃষ্টির জলেই চারাগাছ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি দৃষ্টান্ত হতে পারে৷ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে বৃষ্টি এমনিতেই কম হয়৷ এই জেলাগুলিতে বনসৃজনের ক্ষেত্রে অল্প বৃষ্টির চ্যালেঞ্জ নতুন নয়৷ তারাই বরং রুখাশুখা আবহাওয়ায় বনসৃজনের ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে৷

পুরুলিয়ার একটা বড় অংশের ভূমি পাথুরে৷ পাহাড়শ্রেণীতে ঘেরা বহু জনপদ৷ তার উপর বৃষ্টি কম হয়৷ এমন একটি স্থানে কাজে আসছে সিড বল বা বীজ বলের মাধ্যমে বনভূমি বিস্তার৷ কোটশিলা বনভূমির রেঞ্জ অফিসার সোমা দাসের উদ্যোগে এই কাজ চলছে৷ এই বীজ বল আদতে ছোট আকৃতির গোলাকার মাটির তাল৷ তার মধ্যে বীজ ভরা থাকে৷ বিভিন্ন গাছের বীজ ব্যবহার করা হয়৷ কী ভাবে এই বল তৈরি করা হয়, তা সোমা জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘মাটির মধ্যে মিহি বালি ও জৈব সার মেশানো হয়৷ তার সঙ্গে থাকে চারকোল৷ কাঠের গুঁড়োও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেশানো হয়৷ এই মিশ্রণকে ছোট বলের আকার দেওয়া হয়৷  এই এলাকায় যে গাছ হয়, তার বীজ মাটির মধ্যে থাকে৷''

স্কুলের বাচ্চরাও সবুজের জন্ম দিচ্ছে: সোমা দাস

পরিবেশ রক্ষার এই প্রয়াস অর্থনৈতিক ভাবেও স্থানীয় মানুষদের কাছে লাভজনক হয়ে ওঠে৷ কোটশিলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যদের দিয়ে এই বল তৈরি করানো হয়৷ বন দপ্তর তাদের বল তৈরি বরাত দেয়৷ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কোটশিলায় জাইকা প্রকল্পের অধীন বনভূমি সম্প্রসারণ কর্মী গৌরাঙ্গ দাস গোস্বামী৷ তিনি বলেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা কাঁচামাল জোগাড় করে বল তৈরি করেন৷ বনবাসী মানুষের হাতের কাছেই এ সব থাকে৷ মহুয়া, কুসুম, জাম-সহ নানা বীজ দিয়ে বল তৈরি করে তারা বস্তায় ভরে দেন৷ এক একটি বস্তার দাম দেওয়া হয় ৫০০ টাকা৷ কোন বীজ দেওয়া হয়েছে, তার উপর বলের আকার নির্ভর করে৷ এই আকারের উপর নির্ভর করে, একটি সিমেন্টের বস্তায় কতগুলি বল থাকবে৷''

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বীজ বলের সৌজন্যে৷ সোমা বলেন, ‘‘স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা খেলাচ্ছলে এই বল নিচ্ছে৷ কেউ গুলতি দিয়ে ছুঁড়ছে৷ বল তাদের খেলার সামগ্রী হয়ে উঠছে, আবার তা মাটিতে পড়ে থাকলে সবুজের জন্ম দিচ্ছে৷ এখনও ২৫ হাজারের মতো বল বিলি করা হয়েছে৷''

বন দপ্তরের কর্মীরা বল ছড়াচ্ছেন পাথুরে ভূমিতে৷ পাহাড়ের উপর উঠে যাচ্ছেন তাঁরা৷ সেখানে থেকে ঢাল লক্ষ করে ছুড়ে দিচ্ছেন বীজের বল৷ পাহাড়ের চারপাশের অরণ্য আরও সবুজ হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে৷ মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) সুরেন্দ্রপ্রসাদ যাদব বলেন, ‘‘পরিবেশকে রক্ষা করার  লক্ষ্যে গাছ লাগানোর থেকে বড় কাজ কিছু নেই৷ প্রকৃতি রক্ষা পেলে মানুষও বাঁচবে৷ বন দপ্তর সেই লক্ষ্যেই অরণ্য সপ্তাহ পালন করে৷ সব শ্রেণীর মানুষকে এই কাজে সামিল হতে হবে৷''