1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুকনো ফুলকে শিল্পের উপকরণ করে তোলেন যে শিল্পী

২৭ আগস্ট ২০২১

ক্ষয়ের প্রক্রিয়ার মধ্যেও কি সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব? জীবজগতের নশ্বরতা ও অপূর্ণতা মেনে নিলে সৌন্দর্যের এমন রূপ যে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিতে চান জার্মান এক ফটোগ্রাফার৷ জাপানি সংস্কৃতি তাঁর সেই প্রেরণার উৎস৷

https://p.dw.com/p/3zYLX
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/blickwinkel/E. Kajan

কাটরিন লিংকার্সডর্ফের জন্য এই সব শুকনা ফুল সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি৷ বার্লিন ভিত্তিক এই ফটো শিল্পীর কাছে মৃতপ্রায় গাছ সবচেয়ে ‘ফটোজেনিক' বা ছবি হিসেবে উপযুক্ত৷ তার স্টুডিও শুকনা ফুলে ভরা৷ নিজের শিল্পশৈলি ব্যাখ্যা করে কাটরিন বলেন, ‘‘ক্ষণজীবী সত্তা হিসেবে ফুল ও অন্যান্য জীবের বৈশিষ্ট্যে আমি আগ্রহী৷ জীবন চক্রের রূপক হিসেবে বিষয়টিকে দেখতে পারেন৷ আসলে এখানে যেসব ফুল ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলি আসল বিষয় নয়৷ আমি কোনো বস্তুর চরিত্র বুঝতে এবং উপরিভাগের নীচের লুকানো কাঠামো উন্মোচন করতে ভালোবাসি৷’’

ফটোগ্রাফির পথ বেছে নেবার আগে কাটরিন স্থপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন৷ টোকিও শহরে কাজের সময় তিনি সৌন্দর্যের এমন এক সংজ্ঞা আবিষ্কার করেছিলেন, যে বিষয়ে তিনি আগে সচেতন ছিলেন না৷ আজও তার কাজের উপর সেই প্রেরণার ছাপ দেখা যায়৷ কাটরিন বলেন, ‘‘জাপানে থাকার পর থেকে জাপানি সংস্কৃতির স্পষ্টতা, সরলতা ও সর্বত্র প্রকৃতির ছাপ আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে৷ সৌন্দর্যের কদর এবং ‘ওয়াবি-সাবি' নামের রং ও আকারের সংমিশ্রণের ধারাও আমার কাছে আকর্ষণীয়৷ নশ্বরতা ও অপূর্ণতা সেই কনসেপ্টের মূলমন্ত্র৷ এই ধারা এমন ইম্পারফেকশন এবং জীবনের অসম্পূর্ণতা স্পষ্ট করে দেয়৷’’

মৃতপ্রায় গাছ থেকে শিল্পকর্ম

কোনো গাছ তাঁর শিল্পের অংশ হয়ে উঠতে বেশ কয়েক মাস সময় নেয়৷ কিন্তু সেটি রাখার পদ্ধতি এবং অতি বেগুনি রশ্মির মাত্রা ক্ষয়ের প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে এবং ক্ষয়ের চিহ্ন রেখে যায়৷ লিংকার্সডর্ফ নিয়মিত ফুলের উপর হালকা পানির বিন্দু ছড়িয়ে দেন, ধুলা ঝাড়েন এবং অবস্থান ঘুরিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে ফটোগ্রাফি হলো নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট অনুভূতি নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট ফুলের সঙ্গে সাক্ষাতের মতো৷ কারণ প্রতিদিন নশ্বরতা ও ক্ষয়ের এই প্রক্রিয়া রং ও আকারের পরিবর্তন স্পষ্ট করে দেয়৷ কখনো ছবির জন্য আদর্শ অবস্থায় পৌঁছতে অনেক অপেক্ষা করতে হয়৷’’

ঠিক কীভাবে তিনি ফুলের ছবি তোলেন, পেশাগত গোপনীয়তার খাতিরে তা তিনি জানাতে প্রস্তুত  নন৷ সঠিক অবস্থা সৃষ্টি করতে তিনি অনেক সময় ব্যয় করেন৷ শুধু এই বিষয়টিই তাঁর শিল্পসৃষ্টির জটিলতা তুলে ধরে৷ সেখানে রসায়ন ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটে৷ লিংকার্সডর্ফ বলেন, ‘‘আমার কাছে কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ যেমন আমরা টিউলিপ ফুল আলোর দিকে তুলে ধরলে অথবা কাচের শার্সির উপর আটকে দিলে ভেতরের রেখাগুলি চোখে পড়ে৷ তখন পরের সিরিজের জন্য পাপড়ির সব পিগমেন্ট সরিয়ে দেবার আইডিয়া মাথায় এলো৷ সেই পিগমেন্ট সরিয়ে ফেলে অন্য এক সিরিজে যোগ করেছিলাম৷’’

ইটালিতে শুকনো ফুলের শিল্পকর্ম

‘ফেয়ারিস' নামের সিরিজ বর্তমানে বার্লিনে প্রদর্শিত হচ্ছে৷ ১৬টি ছবিরে মধ্যে তার নিজের সবচেয়ে পছন্দের শিল্পকর্মটি প্রথম ঘরে শোভা পাচ্ছে৷ শুধু বিশেষ ফরম্যাটের কারণেই সেটি দর্শকের নজর কাড়ে না৷ কাটরিন লিংকার্সডর্ফ ছবির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘গোটা প্রদর্শনীতে একমাত্র এই ফটোর আকার চৌকো নয়৷ বিষয়বস্তুর কারণে এটিকে রেকট্যাংগেল হিসেবে রাখতে হয়েছে৷ পিগমেন্টের আকার ও গাছের আকারের পাশাপাশি সহাবস্থানের কারণে এক সম্পূর্ণতা সৃষ্টি হয়েছে বলে এটি আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়৷’’

নশ্বরতা ও অপূর্ণতা মেনে নেওয়াকে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা হিসেবে দেখলে মুক্তির স্বাদ পাওয়া যায়৷ কারণ সে ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের সীমা বিলীন হয়ে যায়৷ এমনকি ক্ষয়ের প্রক্রিয়ার মধ্যেও সৌন্দর্য চোখে পড়ে৷ কাটরিন লিংকার্সডর্ফ তাঁর ছবির মাধ্যমে সেই মনোভাব ফুটিয়ে তুলতে চান৷ মানুষের জীবনেও এই কনসেপ্ট প্রয়োগের প্রেরণা জোগাতে চান তিনি৷

ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি